এক গ্রামের শতাধিক পরিবার পাঁপড় তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। গ্রামটিকে পাঁপড়ের গ্রাম বলে অনেকে। বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের হাটধুমা গ্রামে চলছে এই আলুর পাঁপড় তৈরির কাজ।
এ গ্রামের মানুষরা একটি বছরকে তিন ভাগে ভাগ করে নেন। তারা আলুর মৌসুমে দুই থেকে তিন মাস পাঁপড়, আমের মৌসুমে দুই থেকে তিন মাস কাসুন্দি ও চালকুমড়ার মৌসুমে অর্থাৎ শীতকালে দুই থেকে তিন মাস কুমড়ো বড়ি তৈরি করেন।
হাটধুমা গ্রামের মানুষ কৃষি কাজসহ অন্যান্য কাজের পাশাপাশি এ তিন মৌসুমে পাঁপড়, কাসুন্দি ও কুমড়ো বড়ি তৈরি করে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এখন গ্রামের পথ ধরে চললে চোখে পড়ে কাগজের উপর রোদে শুকানো হচ্ছে হাতে তৈরি করা আলুর পাঁপড়। পাঁপড় তৈরির করার জন্য প্রথমে সংগ্রহ করা আলুগুলো ধুয়ে টিনের তৈরি মেশিন দিয়ে পাতলা ভাবে কেটে নেওয়া হয়। এরপর ওই কাটা আলু সিদ্ধ করে রোদে শুকানো হয়।
পাঁপড় তৈরি ও শুকানোর কাজে পুরুষেরা কিছুটা সাহায্য করলেও নারীরাই মূলত বেশির ভাগ কাজ করেন। বছরজুড়েই আলুর পাঁপড়ের চাহিদা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারী এসে পাঁপড়গুলো কিনে নিয়ে যায়।
আলুর পাঁপড় কারিগর পূর্ণিমা রানী জানান, আমি প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই মণ আলুর পাঁপড় তৈরি করি। যাদের বাড়িতে লোকজন বেশি আছে তারা আরো বেশি তৈরি করে। এক মণ আলু রোদে শুকানোর পর সাত থেকে আট কেজি পাঁপড় হয়। প্রতি কেজি পাঁপড় এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। এক মণ আলুর পাঁপড় ৮০০-৯০০ টাকায় বিক্রি হয়। এখন এক মণ আলু কিনতে লাগছে ৪০০-৫০০ টাকা। কষ্ট করে পাঁপড় তৈরি করলে প্রায় দ্বিগুন লাভ হয়।
ফেরদৌস রহমান বলেন, এ গ্রামের বেশি ভাগ মানুষ এখন পাঁপড় তৈরির কাজ করছে। তৈরি করা পাঁপড় বাড়ি থেকেই বিক্রি হয়ে যায়। হাট থেকে আলু কিনে এনে কেটে তা সিদ্ধ করে রোদে শুকালেই পাঁপড় তৈরি হয়ে যায়। বগুড়া, নাটোর, নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলার লোক এসে এই পাঁপড় কিনে নিয়ে যায়। মুখোরচক এই পাঁপড় অতিথি আপ্যায়ন ও বিকেলের নাশতার সঙ্গে ভেজে পরিবেশন করা হয়।
নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গাজীউল হক বলেন, এই উপজেলায় আলুর উৎপাদন ভালো হয়। এই আলুকে প্রসেসিং করে নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছে। এতে আলুর বাজারও ভালো পাচ্ছে কৃষক। আবার আলুর পাঁপড় তৈরি করে ওই পরিবারগুলোও স্বচ্ছল হচ্ছে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ