দিনাজপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব ও দালাল চক্রের সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পরীক্ষায় সঠিকভাবে উত্তীর্ণ না হলেও দালালের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে সহজেই পাস নম্বর পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। এ কারণে অনেক অনভিজ্ঞ চালক লাইসেন্স নিয়ে সড়কে নেমে দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন।
ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষাটি তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হয়-লিখিত, মৌখিক এবং ব্যবহারিক। লিখিত পরীক্ষার জন্য ২০ নম্বর বরাদ্দ, যেখানে পাস নম্বর ১২। মৌখিক এবং ব্যবহারিক পরীক্ষায় যথাক্রমে ৭৫ ও ১০০ নম্বর প্রয়োজন। তবে মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতায় দেখা যায়, লিখিত বা ব্যবহারিক পরীক্ষায় ব্যর্থ হলেও দালালদের মাধ্যমে পরীক্ষার্থী পাস করছেন। দিনাজপুর বড় মাঠে পরীক্ষা চলাকালে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকলেও দালালদের প্রভাব স্পষ্ট। দালাল হাসান ও মাহবুব নামের দুই ব্যক্তির নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে একটি চক্র, যারা লাইসেন্স প্রত্যাশীদের থেকে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়। বিনিময়ে তারা পরীক্ষার সব ধাপে সহায়তা দিয়ে পাস করিয়ে দেয়।
ব্যবহারিক পরীক্ষা মাঠে দুটি গাড়ি দিয়ে নেওয়া হয়। পরীক্ষার্থীদের গাড়ি ব্যাক গিয়ারে নিয়ে পার্কিং করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এসময় গাড়ি কোনো লাল পতাকার সঙ্গে স্পর্শ করলে ফেল ধরা হয়। তবে দালালের মাধ্যমে আসা পরীক্ষার্থীরা এই নিয়মের বাইরে। মাত্র কয়েক সেকেন্ড স্টিয়ারিং ধরেই তারা পাস করেন। এক ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, দালাল ছাড়া আসা পরীক্ষার্থীদের বেশিরভাগই ব্যর্থ হন। যারা পাস করেছেন, তাদের অনেকেই জানিয়েছেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে চেষ্টা করার পর তারা দালালের শরণাপন্ন না হয়ে পাস করেছেন।
একজন ভুক্তভোগী জানান, আমি মৌখিক ও লিখিত পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার পর দালালের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকায় লাইসেন্স করিয়েছি। তারা প্রতিটি ধাপে আমাকে পাস করিয়েছে। অন্যদিকে, যারা সরাসরি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন, তাদের বেশিরভাগই শেষ পর্যন্ত দালালদের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হন।
পরীক্ষার মাঠে দালালরা খোলামেলাভাবেই তাদের কার্যক্রম চালায়। হাসান ও মাহবুবের নেতৃত্বে প্রায় ১৫-২০ জনের একটি চক্র সক্রিয়। তাঁদের সহযোগিতা করে বিআরটিএর কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। চক্রের মাধ্যমে লাইসেন্স করতে হলে পরীক্ষার্থীকে শুধু মাঠে উপস্থিত থাকতে হয়। বাকি কাজ তারা সম্পন্ন করে দেয়। লাইসেন্স প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে একটি বোর্ড গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। তবে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, দিনাজপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে লাইসেন্স পরীক্ষায় দালালদের এই দৌরাত্ম্য সড়ক নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ পরীক্ষা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন। অন্যথায়, অযোগ্য চালকদের সড়কে নামার ফলে দুর্ঘটনার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
আমারবাঙলা/ইউকে