থানকাপড়ের জন্য বৃহত্তর চট্টগ্রামে প্রসিদ্ধ টেরিবাজারে এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। বাহারি নামের বড় বড় শোরুমে দেশি-বিদেশি ঝলমলে পোশাক হাতছানি দিচ্ছে। পাইকারি ও খুচরা সমানে বিক্রি হচ্ছে শবেবরাতের পর থেকেই। বেলা বাড়তেই ঢল নামছে নারী ক্রেতাদের। বেচাকেনা চলছে সেহেরি পর্যন্ত।
সরেজমিন দেখা গেছে, পছন্দের শাড়ির খোঁজে এক শোরুম থেকে আরেক শোরুমে চষে বেড়াচ্ছেন ফ্যাশন সচেতন নারীরা। সেলাই ছাড়া বাহারি নামের থ্রিপিসের চাহিদাও তুঙ্গে। পাঞ্জাবি, শার্ট, প্যান্ট, সালোয়ার কামিজ, ব্লাউজ, পর্দার কাপড়সহ গজ কাপড়ের দোকানগুলোতে বিক্রয়কর্মীদের দম ফেলার ফুরসত নেই। তুলনামূলক ফাঁকা জুতো, লুঙ্গি, গহনা আর প্রসাধনীর দোকানগুলো।
জেএস প্লাজার ইমাম করপোরেশনের রাশেদুল আলম বলেন, চীন, ভারত, পাকিস্তানি ‘সিকোয়েন্স’ পাঞ্জাবি চলছে এবার। প্রতি গজ ৪০০-১০০০ টাকা। একটি পাঞ্জাবিতে ২ হাত বহরের সাড়ে ৩ গজ, আড়াই হাত বহরের ৩ গজ, সাড়ে তিন হাত বহরের সোয়া ২ গজ কাপড় লাগে।
আরেকজন দোকানি বলেন, ‘একটা সময় ছিল শবে বরাতের পর সেলাই ছাড়া থ্রিপিস আর পাঞ্জাবি বিক্রির ধুম পড়তো। দর্জিবাড়িতে অর্ডার নেওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগেই আমাদের বেচাকেনা শেষ হতো। এখন সেই সময় নেই। মানুষের রুচি, আয়, অভ্যাস অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে।’
টেরিবাজারের বড় শপিং সেন্টারগুলোর মধ্যে ইব্রাহিম ম্যানশন, জেএস প্লাজা, জহুর ম্যানশন, বিচিত্রা বিপণী, মাস্টার মার্কেট, এসবি ঘোষ মার্কেট, হাজি দুদু মিয়া মার্কেট, হাজি রমজু মিয়া ম্যানশন, বদরুদ্দিন মার্কেট, ওআর প্লাজা, মদিনা ম্যানশন, আনোয়ার ম্যানশন, সূর মোহাম্মদ মার্কেট, নাহার ম্যানশন, মল্লিকা শপিং, সওদাগর টাওয়ার, জনতা মার্কেট, শাহ আমানত মার্কেট, নূর মার্কেট, এ কবির মার্কেট, মা ম্যানশন, কুঞ্জ মোহন মার্কেট, কেবি অর্কিড প্লাজা, আসমা শপিং সেন্টার, কেবি আমান আলী টাওয়ার ইত্যাদিতে ক্রেতাসমাগম বেশি দেখা গেছে এবার।
বড় বড় শোরুমের মধ্যে পরশমণি, মেগামার্ট, রাজকুমারী শপিং মল, সানজানা, মাসুম ক্লথ স্টোর, মনে রেখো, আলমগীর অ্যান্ড ব্রাদার্স, সানা ফ্যাশন মল, আদি মোহিনী মোহন কাঞ্জিলাল, খাজানা, রাজস্থান, শৈল্পিক, লাক্সারি ফ্যাশন, মল ২৪, আরএক্স সুজ অ্যান্ড কিডস মল, রাজবধূ, বেগম বিডি, বিগবাজার, রাজপরী, বড় বাজার, মায়াবী ইত্যাদিতে দেশি বিদেশি সেরা কালেকশন দেখা গেছে।
সপরিবারে ঈদের কেনাকাটা করতে আসেন পটিয়ার আজিজুল হাকিম। তিনি বলেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না কম দামে ভালো পোশাকের জন্য এখনো পছন্দের শীর্ষে টেরিবাজার। ছোট ছোট অনেক দোকান আছে যেখানে দরদাম করে কাপড় কেনা যায়। বড় বড় শোরুমে একদামে বিক্রি হলেও কোয়ালিটি বেশ ভালো মনে হয়েছে।
টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল মান্নান বলেন, ‘টেরিবাজারে ৮২টি শপিং সেন্টারে (মার্কেট) ছোট বড় প্রায় ২ হাজার দোকানে ২০-২৫ হাজার ব্যবসায়ী কর্মচারী আছেন। একটা সময় থান কাপড়ের জন্য ঐতিহ্যবাহী ছিল টেরিবাজার। মেগামার্ট, মনে রেখো, মাসুম ক্লথ, রাজকুমারী, সানা ইত্যাদি অনেক বড় বড় শোরুম হয়েছে এখন। আধুনিক ছোঁয়া লেগেছে শোরুমগুলোতে। চীন, পাকিস্তান, ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে পোশাক আনছেন তারা। দেশি ভালো মানের পোশাকও আছে বেশ।
বছরের ১২ মাসের মধ্যে রমজানের ২-১ মাস ভালো ব্যবসা হয় টেরিবাজারে। এ সময় ক্রেতাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে বলেছি সবাইকে। নারী, শিশুদের কথা চিন্তা করে টেরিবাজারে ট্রাক ঢোকা আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। শবে বরাতের পর থেকে প্রতি শুক্রবার আমরা দোকান খোলা রাখছি। ব্যবসায়ী সমিতির ২১ জন কর্মকর্তাকে ওয়াকিটকি দিয়েছি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সবাই যাতে দ্রুত যোগাযোগ করতে পারেন।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খারাপ। বাকিতে পোশাক বিক্রি করেছে, এখন টাকা আদায় করতে পারছে না। ব্যবসার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে বাকিতে এনে, বাকিতে বিক্রি করে বাকি টাকাসহ লাভ তুলে আনা। এখন কিন্তু সেই অবস্থা নেই। বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় বাকিতে বিক্রি করি আমরা। কিন্তু আমরা যার কাছে ৫ লাখ টাকা পাবো, সপ্তাহে গেলে আমাকে দিচ্ছে ১ হাজার। তা-ও তার মর্জিমাফিক। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, ১০ হাজার টাকার নিচে কর্মচারী নেই। কর্মচারীদের আবার থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। সব মিলে ব্যবসা খুব একটা ভালো নয়।’
আমারবাঙলা/জিজি