দেশের কৃষিনির্ভর জেলা ঠাকুরগাঁও। এ জেলায় ধান, গম, পাট, আখ, আম উৎপাদনে সমৃদ্ধ। এবার এই জেলার আলু বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। কৃষকের পরিশ্রম আর আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে বিদেশি ক্রেতাদের নজর কেড়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের মানসম্মত আলু।
ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশে এখানকার আলু রপ্তানি শুরু হয়েছে। প্রতিনিয়ত চেষ্টা চলছে তাকে আরো ছড়িয়ে দেওয়ার। জেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এখন উচ্চমানের আলু উৎপাদনে আরো বেশি উৎসাহী হয়ে উঠছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত মৌসুমে ঠাকুরগাঁওয়ে ২৬ হাজার ১৬৮ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছিল। অধিক লাভ হওয়ায় চলতি মৌসুমে আবাদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৫০০ হেক্টরে। এর মধ্যে আগাম আলু চাষ হয়েছে এক হাজার ৫৫৫ হেক্টরে।
সদর উপজেলায় গত বছর আলুর আবাদ ছিল ১৪ হাজার ২৭০ হেক্টর। এ বছর আলুর আবাদ ১৭ হাজার ১৭৫ হেক্টর। সদর উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, শুধু এই উপজেলা থেকেই নেপালে গেছে গ্র্যানোলা জাতের আলু। যার এ যাবৎ রপ্তানির পরিমাণ ১১৫ মেট্রিক টন। মালয়েশিয়াতে সানশাইন জাতের আলু রপ্তানি হয়েছে ৪৫ মেট্রিক টন।
মালয়েশিয়াতে রপ্তানি করছে নাঈম অ্যাগ্রো নামের কোম্পানি। এই কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আল ইমরান জানান, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর জেলার আলুচাষিদের সানশাইন জাতীয় আলু চাষের উদ্যোগ সফল হয়েছে। এর গুণগতমান আন্তর্জাতিক বাজারে সমাদৃত হচ্ছে।
বর্তমানে স্থানীয় বাজারে আলুর দাম প্রতিকেজি ১০ থেকে ১২ টাকার মধ্যে থাকলেও বিদেশে রপ্তানির ফলে প্রতিকেজিতে ১৫ থেকে ১৭ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। ফলে কৃষকরা কিছুটা হলেও লাভবান হচ্ছেন। তবে প্রতিকেজি আলু উৎপাদনে গড়ে ২০ টাকা খরচ হচ্ছে; যা এখনো কৃষকদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের কৃষক শাহাবুদ্দিন বলেন, আমরা এতদিন শুধু দেশীয় বাজারে আলু বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে শুনে আমরা খুবই খুশি। এতে ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাবে, আর আমাদের উৎপাদনও বাড়বে।
পীরগঞ্জের কৃষক আবু সালেক বলেন, আমাদের উৎপাদিত আলু যদি ভালো দামে বিদেশে যায় তাহলে আমরা আরো বেশি আলু চাষে আগ্রহী হবো। তবে উৎপাদন খরচ যদি কমানো যায় তাহলে লাভ আরো বেশি হবে।
দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও থেকে আলু রপ্তানির কাজে যুক্ত নাঈম অ্যাগ্রোর সিইও আল ইমরান বলেন, আমাদের কৃষকদের উৎপাদিত আলুর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ ঠাকুরগাঁওয়ের জন্য বড় সুখবর। আমরা কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি কাজ করছি যাতে তারা ভালো দাম পায় এবং রপ্তানির জন্য মানসম্মত আলু সরবরাহ নিশ্চিত হয়।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসিরুল আলম বলেন, জেলার কৃষকরা এখন আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আলু উৎপাদন করছেন। এতে মান বজায় থাকছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। কৃষকরা যেন আরো উন্নত প্রশিক্ষণ পান, সে জন্য স্থানীয় প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এটি আমাদের কৃষিক্ষেত্রে বিরাট সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। জেলার কৃষি বিভাগ নিবিড়ভাবে এই বিশেষ জাতের আলুগুলোর উৎপাদনসহ আন্তর্জাতিক বাজারের উপযোগী করে প্যাকেটিং করার সব কাজে কৃষকের পাশে আছে। এই আলু চাষের সম্প্রসারণ এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধনের জন্য কৃষকদের উৎসাহ ও বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি আমরা; যা আরো বাড়ছে। কৃষকরাও এ ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে উঠছেন। যদিও এবারের আলুর বাজারে দাম কম নিয়ে কৃষকরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন বলে আমাদের জানাচ্ছেন। তবে সার্বিকভাবে এটা ঠাকুরগাঁওয়ের জন্য অত্যন্ত বড় সুখবর।
আমারবাঙলা/এমআরইউ