সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার তাড়াশ হতে কুন্দইল ও তাড়াশ হতে বারুহাস রাস্তায় এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ও তার অধীনস্থ কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে কাজ না করেই অর্ধ কোটি বিল উত্তোলন করেছে।
জানা যায়, এলজিইডির আরটিআইপি প্রকল্পের ১২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তূর্ণা এন্টারপ্রাইজ তাড়াশ হতে কুন্দাইল ও তাড়াশ হতে বারুহাস রাস্তার কাজ বাস্তবায়ন করে।
গত ২০২২ সালের ২২মার্চ এলাকাবাসী সড়কের নিচের অংশের খোয়া এবং ইট নিম্ন মানের হওয়ায় নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এলজিইডির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মেনেজ করে নিম্নমানের নির্মাণ কাজ করে।
সূত্রে আরও জানা যায়, গত ২৩ মে তাড়াশের মামুনুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলামের বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে একটি অভিযোগ দায়ের করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান প্রকৌশলী অফিস থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পাবনাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অফিস ৬ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটি সরজমিনে পরিদর্শন করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।
তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, রাস্তার মাটির কাজ পরিপূর্ণ ভাবে হয়নি, রাস্তায় ব্যবহৃত বালুর মান খারাপ, নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে, খোয়া পরিমাপেও পেয়েছে কম , এছাড়া গার্ড পোষ্ট, কিলোমিটার পোষ্ট, সিসি ব্লক, পেলাসেডিং, নাম ফলক এমকি রাস্তার দৈর্ঘ্যের পরিমাপেও কম পেয়েছে। যাতে দেখা যায়, কাজ না করেই প্রায় অর্ধ কোটি টাকার বিল প্রদান করা হয়েছে।
অথচ এসব কাজের বিল প্রদান করেছে নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম। বিল প্রদানের ক্ষেত্রে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়ন নেওয়ার কথা থাকলেও তা অনুসরণ করা হয়নি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, আমরা কি বলব, রাস্তায় ঠিক মতো পিচ দেয়নি ঠিকাদার, তূর্ণা এন্টার প্রাইজ নিজস্ব ট্যাকইয়াড থেকে নিম্নমানের পুরাতন পাথর ব্যবহার করেছে এ জন্য আমাদের রাস্তা ঢেউ ঢেউ হয়ে আছে, রাস্তার মাঝে মাঝে ফেঁটে গেছে, উচু নিচু, আঁকা বাঁকা, অথচ আমাদের আশে পাশের রাস্তাগুলো কত সুন্দর ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে ।
বিনিয়তপুর এলাকার ভ্যান চালক হোসেন আলী আরও অভিযোগ করে বলেন, ভ্যান সহ অন্য গাড়ি গুলো চলাচলের জন্য খুব কষ্টকর হচ্ছে, এজন্য রাস্তার এক পাশ হয়ে অধিকাংশই গাড়ি গুলো চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলজিইডির কর্মকর্তা জানান, গত (২২মার্চ ২০২২) সড়কের নিচের অংশের খোয়া এবং ইট নিম্ন মানের হওয়ায় নির্মাণ কাজ এলাকাবাসী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়ে কাজ বন্ধ করে দেয় এলাকাবাসী, পরে সহকারী প্রকোশলী সৌরভ কুমার সহযোগিতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি বাস্তবায়ন করে এবং এলজিইডির হিসাব রক্ষক আবু সাঈদের সহযোগিতায় প্রত্যয়ন ছাড়াই চুড়ান্ত বিল প্রদান করা হয়।
এজন্য সৌরভের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রতিবেদন চলমান আছে এবং হিসাব রক্ষক আবু সাঈদকে বদলী করা হলেও নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম তার বাহক হিসেবে ব্যবহার করছে ।
কবির তালুকদার নামে এক ঠিকাদার জানান, খাল খননে অনিয়মে ও তাড়াশ থেকে বারুহাস রাস্তা এবং একাধিক কাজের প্রত্যয়নে অনিয়ম নিয়ে সংবাদ ও প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও আজও প্রধান প্রকৌশলী বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেননি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নবীউল ইসলাম।
তিনি শুধু বলছেন তদন্ত প্রতিবেদন দিচ্ছি আর দেব। তার সঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলামের যোগসাজশ আছে কিনা সন্দিহান।
তিনি এখন সরকারী গাড়ি নিয়েই মাঝে মাঝেই ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় দৌড় ঝাঁপ শুরু করেছেন।
এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম জানান, আমরা গত ২৫ সেপ্টেম্বরে আমাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি এবং প্রধান প্রকৌশলী ঢাকা এবং অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রাজশাহী বরাবর অনুলিপি প্রেরণ করেছি।
এবি/এইচএন