আমবয়ানের মধ্য দিয়ে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় শুরু হয়েছে তাবলিগের শুরায়ে নেজাম বা মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীদের ইজতেমা। এর ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) ফজরের নামাজের পর থেকে ধাপে ধাপে চলছে বয়ান। বেলা দেড়টায় বড় জামাতে অনুষ্ঠিত হবে জুমার নামাজ। নামাজে তাবলিগের জামাতের মুসল্লি ছাড়াও অংশ নেবেন রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকার অসংখ্য মুসল্লি।
ইজতেমা আয়োজকেরা জানান, আরবি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই তাদের ইজতেমার দিনক্ষণ শুরু হয়ে গেছে। ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলার বয়ানের মাধ্যমে শুরু হয় ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা। এর পর শুক্রবার ফজরের নামাজের পর বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক। তার বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা নুরুর রহমান। শুক্রবার বেলা দেড়টায় বড় জামাতে জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। নামাজ পড়াবেন বাংলাদেশি মাওলানা জোবায়ের হোসেন।
বিগত বছরগুলোতে তাবলিগের দুই পক্ষ মাওলানা জোবায়ের ও সাদ কান্ধলভী অনুসারীরা দুই পর্বে আলাদাভাবে ইজতেমা করতেন। তবে এবারই প্রথম মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীরা একাই দুই ধাপে ইজতেমা করবেন। এর মধ্যে আজ ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হবে প্রথম ধাপের ইজতেমা। এ ধাপে অংশ নেবেন ৪১ জেলা ও ঢাকার একাংশের মুসল্লি। এরপর ৩ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা। ২ ও ৫ ফেব্রুয়ারি যথাক্রমে অনুষ্ঠিত হবে আখেরি মোনাজাত। আর ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি মাওলানা সাদের অনুসারীদের ইজতেমা পালনের কথা আছে।
আজ শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ ও তুরাগ নদের তীরে হাজারো মুসল্লির আনাগোনা। এর মধ্যে মূল ইজতেমা মাঠে বাঁশ ও চটের তৈরি শামিয়ানার নিচে অবস্থান করছেন হাজার হাজার মুসল্লি। তাদের কেউ বয়ান শুনছেন। কেউবা ব্যস্ত রান্না, অজু ও গোসলে। এর মধ্যেই দলে দলে মাঠে প্রবেশ করছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা। তাদের কারো মাথায়, কারো কাঁধে, আবার কারো হাতে একাধিক ব্যাগ, পোঁটলা।
রাত থেকেই বাস-ট্রাকে ইজতেমার মাঠে আসছেন মুসল্লিরা, বাড়ছে সমাগম
মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীদের গণমাধ্যম সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, ‘আজ সকাল থেকে তাবলিগের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ধাপে ধাপে বয়ান চলছে। এখনো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমাদের সাথি ভাইয়েরা আসছেন। আজ জুমার নামাজে অংশ নিতে এরই মধ্যে আশপাশের এলাকার লোকজন আসা শুরু করেছেন।’
ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে জানাতে গতকাল দুপুরে ইজতেমা মাঠসংলগ্ন র্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব। সেখানে র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইজতেমাকে ঘিরে নিরাপত্তাঝুঁকি তেমন নেই, একমাত্র দুই পক্ষের আত্মকলহ ছাড়া। আশা করছি, সুন্দরভাবে ইজতেমাটি শেষ হবে।’
ইজতেমার প্রথম ধাপে অংশ নিয়েছেন গাজীপুর, নড়াইল, রাজশাহী, নাটোর, গাইবান্ধা, ঝিনাইদহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, যশোর, মাগুরা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খুলনা, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় এবং ঢাকার ডেমরা, কাকরাইল, মিরপুর, ধামরাই, দোহার ও নবাবগঞ্জ এলাকার মুসল্লিরা।
আমারবাঙলা/জিজি