সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্ব নির্ধারিত যৌথ মাপ-জরিপ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। সীমান্তের লক্ষীদাড়ী গ্রামে বাংলাদেশীদের জমিতে ধান চাষে ভারতের ঘোজাডাঙ্গা বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্য ও কয়েকজন ভারতীয় নাগরিকের বাঁধা দেওয়ার ঘটনায় বিজিবিও বিএসএফের মধ্যে অনুষ্ঠিত ব্যাটালিয়ন পর্যায়ের পতাকা বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০ জানুয়ারি এই যৌথ মাপ-জরিপ হওয়ার কথা ছিল।
বিজিবি সূত্র জানায়, গত ১১ জানুয়ারি সাতক্ষীরার ভোমরা এলাকায় সীমান্তের লক্ষীদাড়ি গ্রামের কয়েকজন কৃষক বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া তাদের জমিতে ধান চাষ করার সময় ভারতীয় বিএসএফ ঘোজাডাঙ্গা ক্যাম্পের জওয়ানরা ও সে দেশের নাগরিকরা বাধা দেয়। এ ঘটনায় গত ১২ জানুয়ারি ভোমরা ইমিগ্রেশনের জিরো পয়েন্টে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায় একটি পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুই দেশের সার্ভে বিভাগের সমন্বয়ে ২০ জানুয়ারি (সোমবার) সীমান্তের জমি মাপ-জরিপ করার কথা ছিল।
এ বিষয় সাতক্ষীরাস্থ বিজিবি ৩৩ ব্যাটালিয়নের ভোমরা ক্যাম্পের হাবিলদার মিজানুর রহমান বলেন, অনিবার্য কারণবশতঃ ২০ জানুয়ারি সোমবার পূর্ব নির্ধারিত যৌথ মাপ-জরিপ হবে না।
বিজিবি ৩৩ ব্যাটালিয়নের প্রধান কার্যালয় থেকে বলা হয়, ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে ২০ জানুয়ারি মাপ-জরিপের কথা উল্লেখ করে ঢাকায় জরিপ অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু জরিপ অধিদপ্তর থেকে তাদের কিছু জানানো হয়নি। তবে বর্তমানে সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর সংলগ্ন লক্ষ্মীদাড়ি সীমান্ত এলাকায় বিজিবি সদস্যরা নিয়মিত টহল দিচ্ছেন। বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে কাউকে চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। অপরদিকে সীমান্তের ওপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যেও বসিরহাট মুহাকমার ঘোজাডাঙ্গা এলাকায় টহল দিচ্ছেন বিএসএফ সদস্যরা। তবে সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পূর্ন স্বাভাবিক রয়েছে। শুধুমাত্র সীমান্ত লাগোয়া জমিতে ধান চাষ আপাততঃ বন্ধ রয়েছে।
সাতক্ষীরার লক্ষ্মীদাড়ি গ্রামের বাসিন্দা নাজমুল হোসেন বলেন, ভোমরার লক্ষ্মীদাড়ি সীমান্তের কুমড়াখালী খালের বাংলাদেশ অংশে ১০শতক জমি তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে ইজারা নিয়েছেন। সেই জমিতে ১১ জানুয়ারি সকালে বোরো ধান রোপণ করতে যান। এ সময় বিএসএফ ও ভারতীয় লোকজন তাঁকে ধান রোপণ করতে বাধা দেন। ওই জমি ভারতীয় অংশে বলে দাবি করেন তাঁরা। একপর্যায়ে ধানের চারা রোপন বন্ধ রাখেন তিনি।
একই গ্রামের শাহীন গাজী জানান, তার বাবা নজরুল ইসলাম গাজী বাড়ির দক্ষিণ পাশে প্রায় এক বিঘা জমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে ৫০বছরের বেশি সময় ধরে চাষাবাদ করে আসছেন। কয়েক দিন আগে দুজন শ্রমিক নিয়ে ওই জমিতে চাষ করতে গেলে ভারতের বিএসএফের সদস্যরা বাধা দেন। ওই জমি ভারতের মধ্যে পড়েছে বলে তাঁরা দাবি করেন।
এ ঘটনায় গত ১২ জানুয়ারি বেলা একটা থেকে দুইটা পর্যন্ত ভোমরা সীমান্তে বিজিবি ও বিএসএফ ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর ওই দিনই বিকালে সাতক্ষীরাস্থ বিজিবি ৩৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশরাফুল হক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পতাকা বৈঠকের বিষয়টি জানানো হয়।
আমারবাঙলা/এনআই