রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের আলাদীপুর বাজারে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফুটওভার ব্রিজটি ব্যবহৃত হচ্ছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, সন্ধ্যার পর ওভার ব্রিজের উপর বখাটে ছেলেরা আড্ডা দেয়। নির্মাণের পর থেকেই ব্রিজটি পথচারীরা ব্যবহার করছেন না।
রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে দুই কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে এই ফুটওভার ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল ঢাকার ডিলাক্স এন্টারপ্রাইজ। রাজবাড়ী-ফরিদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের আলাদীপুর বাজারে ফুটওভার ব্রিজটি নির্মিত হয়।
আলাদীপুর বাজারটি রাজবাড়ী-ফরিদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ককে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। বাজারের পূর্ব পাশে রয়েছে আলাদীপুর উচ্চ বিদ্যালয়, আলাদীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সড়কের পাশ দিয়ে বিদ্যালয়ের মার্কেট। পশ্চিম পাশে রয়েছে আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদ ও আলাদীপুর বাজার।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কটি দিয়ে রাজবাড়ী-ফরিদপুর, দৌলতদিয়া-কুষ্টিয়া রুটে লোকাল বাস চলাচল করে। এছাড়া রাজবাড়ী-ঢাকা, কুষ্টিয়া-ঢাকা রুটসহ আরও কয়েকটি দূরপাল্লার বাস এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। সড়কটি একলেনে হওয়ায় মাঝখানে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। আলাদীপুর বাজারের উত্তর ও দক্ষিণে সড়কে দেওয়া আছে গতি রোধক। ফলে যানবাহন আলাদীপুর বাজার পার হওয়ার সময় গতি কমিয়ে দেয়।
এর ফলে, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ কেউই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে সরাসরি রাস্তা পারাপার করেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সময় ব্রিজের উপর নানা বয়সের ছেলেরা আড্ডা দেয় এবং সন্ধ্যার পর মাদকসেবীদের আড্ডা বসে।
আলাদীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল বাশার বলেন, “আমাদের বিদ্যালয়ে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়ের সমাবেশে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের গুরুত্ব তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের ব্রিজ ব্যবহার করতে বলি। কিন্তু তারা কখনোই ব্রিজ ব্যবহার করে না। আমরা বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এখানে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের জন্য কোনো আবেদন করিনি বা কোথাও চিঠি দিইনি। হঠাৎ করেই দেখলাম এখানে ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে। এটি কে নির্মাণ করছে এবং কী কারণে নির্মাণ করা হলো, কিছুই জানি না। তবে ব্রিজটি কেউ ব্যবহার করে না।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, “এই ওভার ব্রিজ বানিয়ে উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়েছে। স্কুল টাইমে ছেলেরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ব্রিজের উপরে বসে থাকে। আবার রাতে খারাপ ছেলেরা সেখানে আড্ডা দেয়। কাউকে ব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হতে দেখিনি। এই ব্রিজ এখানে না বানিয়ে শহরে বানালে মানুষের কাজে লাগত।”
স্কুল ছাত্র আবির শেখ বলেন, “রাস্তা পার হতে ১০ সেকেন্ড সময় লাগে। আর ব্রিজ দিয়ে পার হতে গেলে পা ব্যথা হয়ে যায়। এজন্য ব্রিজে উঠি না।”
রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাজেস খান বলেন, “এই ফুটওভার ব্রিজ নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। আমি রাজবাড়ীতে যোগদানের কয়েক বছর আগে এই ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আমি এই ব্রিজ সম্পর্কে কিছুই জানি না।”
আমার বাঙলা/ এসএ