ছবি: নিজেস্ব
সারাদেশ

পর্যটনের অপার সম্ভাবনা মান্দারবাড়ীয়া সমুদ্রসৈকত

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি  :

আশ্রাফ উজ- জামান, সাতক্ষীরা :

দেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিমের জনপদ বিশ্ব ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনঘেঁষা উপজেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগর। নয়নাভিরাম সুন্দরবনের বঙ্গোপসাগরের তীর ধরে জেগে ওঠা এক সমুদ্রসৈকত মান্দারবাড়িয়া। যার একপাশে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি ‘সুন্দরবন’। অপর পাশে বঙ্গোপসাগরের অতল ও বিশাল জলরাশির খেলা।

প্রকৃতির নিবিড় ছোঁয়ায় বেড়ে ওঠা ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বেলাভূমি এখনো যেন অনেকটাই থেকে গেছে অনাবিষ্কৃত। দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা, অবকাঠামোগত উন্নয়নের ঘাটতি, সরকারি প্রচার-প্রসারের উদ্যোগহীনতার কারণে দীর্ঘদিনেও সেভাবে জনসম্মুখে আসেনি দৃষ্টিনন্দন দীর্ঘ এই সমুদ্রসৈকতটি। মান্দারবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত একদিকে যেমন হয়ে উঠতে পারে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে অবহেলিত উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যবদলের হাতিয়ার, অন্যদিকে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। দেশের পর্যটনশিল্পকে সমৃৃদ্ধ করার সব ধরনের উপকরণ বিদ্যমান অবহেলায়, অব্যবস্থাপনায় পড়ে থাকা অপরূপ সৌন্দর্যের এই লীলাভূমিটিতে।

একই সঙ্গে বনভূমি এবং জলাভূমির সহাবস্থান যেন এই সমুদ্রতটটিকে দিয়েছে সৌন্দর্যের অনন্য এক উচ্চতা। যা সহজেই যে কোনো পর্যটককে বিমোহিত করতে সক্ষম।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের নীলডুমুর ঘাট থেকে এর দূরত্ব মাত্র-৭০ থেকে ৭৫ কিলোমিটার। যাত্রা পথে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক দৃশ্য, আঁকাবাঁকা নদী, চিরসবুজ গোলপাতা, কেওড়া, গেওয়া, গরান, সুন্দরীসহ বিভিন্ন প্রকারের গাছ, হরিণ, বানর, শূকর, কুমির, রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ নানা প্রজাতির জীবজন্তু আর বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির সুরেলা ডাক পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে।

সুন্দরবনের গা ছমছমে ভয়ংকর পরিবেশ যে কোনো ভ্রমণপিপাসু মানুষকে দিতে পারে ভ্রমণের সর্বোচ্চ আনন্দ। দেখা যাবে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত। সাগরের দিগন্তবিস্তৃত জলরাশি এবং জঙ্গলের গাছগাছালির সবুজ বেষ্টনী মিলেমিশে তৈরি করেছে যেন এক রূপকথার রাজ্য। যে কোনো প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমণপিপাসু ব্যক্তিই চাইবে হারিয়ে যেতে এমন এক রাজ্যে।

দেশের পর্যটনশিল্পের মূল উপাদান এ দেশের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদ।

আর এই শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে প্রয়োজন এসব উপাদানগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো। দেশের পর্যটনশিল্পকে আরও সমৃদ্ধশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে মান্দারবাড়িয়া।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী উপকূলীয় পর্যটন, পর্যটন বাজারের বৃহত্তম অংশ সারা বিশ্বের জিডিপির ৫ শতাংশ এবং মোট কর্মসংস্থানের ৬-৭ শতাংশ। ১৫০টি দেশে এটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী প্রথম পাঁচটি খাতের মধ্যে একটি। যা মান্দারবাড়িয়ার অপার সম্ভাবনাকে ইঙ্গিত দেয়। যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে মান্দারবাড়িয়াকে একটি পূর্ণাঙ্গ উপকূলীয় পর্যটন কেন্দ্রে রূপ দিয়ে টেকসই পর্যটন সৃষ্টি করতে পারলে সেটি যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করতে সক্ষম হবে। একইভাবে দেশের অর্থনৈতিক খাতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারবে। দেশের অন্যান্য উপকূলীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলো থেকে যে পরিমাণ আয় হয়, সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে মান্দারবাড়িয়া থেকেও একই পরিমাণ আয় সম্ভব। এ ছাড়া উপকূল ঘিরে মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ এবং পায়রাবন্দরের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ সড়ক সৃষ্টির মতো পরিকল্পনা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা অনেক বেশি সহজ করে তুলবে। যা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির এক নতুন দ্বার উন্মোচন করতে সক্ষম। মান্দারবাড়িয়াকে টেকসই পর্যটন কেন্দ্র সৃষ্টির মাধ্যমে সারা বছর পানিবন্দি থাকা দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান ঊর্ধ্বগামী করা সম্ভব। প্রচুর কর্মসংস্থানের মাধ্যমে এ অঞ্চলের বেকারত্ব দূরীকরণ করাও সম্ভব হবে। সৈকতভিত্তিক বিনোদন এবং পর্যটন, সমুদ্রের কাছে পর্যটন কার্যক্রম, ইয়টিং, মেরিনাসহ নটিকাল বোটিংয়ের মাধ্যমে একদিকে যেমন মান্দারবাড়িয়ার প্রসার বাড়ানো সম্ভব তেমনিভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন দ্রুতগামী হবে। সৃষ্টি হবে ‘কমিউনিটি বেজড ট্যুরিজমের’; যা হবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক নতুন সূচনা।

সরকারি বিনিয়োগের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নবৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

সাতক্ষীরা পশ্চিম সুন্দরবন রেঞ্জের সহকারী বনকর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, মান্দারবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত পশ্চিম সুন্দরবন রেঞ্জের মধ্যে অবস্থিত সাগরের কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের অভয়ারণ্য অঞ্চল। এখানকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধান ও সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে পরিকল্পিতভাবে উপযুক্ত পর্যটনবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে মান্দারবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত হয়ে উঠবে কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান উৎস্য। ফলে দেশের অর্থনীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব। এ জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

আমারবাঙলা/ ইউকে

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ট্রান্সপোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিয়নের বিজয় দিবস উদযাপন

বাংলাদেশ ট্রান্সপোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিয়ন মহান বিজ...

ধূমপানে বুদ্ধি কমে, বলছে গবেষণা

ধূমপানে অনেক ক্ষতি। এতে করে ফুসফুস বা হৃদপিণ্ডের ক্ষতি হয়। ধূমপান মস্তিষ্কেও...

ফিরল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ বেশকিছু বিষয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অ...

পালানোর পর প্রথমবার বিবৃতিতে যা বললেন আসাদ

বিদ্রোহীদের অভিযানের মুখে গত ৮ ডিসেম্বর দেশ ছেড়ে র...

সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তির লটারি আজ, ফল দেখা যাবে যেভাবে

দেশের সরকারি-বেসরকারি স্কুলে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি...

বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক কুমির হেনরি পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ

পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক কুমির হেনরি। তার ছয় স্ত্রী...

এলিয়েন কি শুধু কল্পনার?

এলিয়েনদের জীবন কেমন সে বিষয়ে মানুষের প্রবল আগ্রহ আ...

ফিফা দ্য বেস্টের মুকুট ভিনিসিয়ুসের মাথায়

কাতারের দোহার এস্পায়ার একাডেমিতে সীমিত আয়োজনে হয়ে...

তাবলীগের ২ পক্ষের সংঘর্ষে ইজতেমা মাঠ রণক্ষেত্র: নিহত ৩, আহত শতাধিক

বিশ্ব ইজতেমা মাঠের দখলকে কেন্দ্র করে তাবলীগের যোবা...

ভোটার হওয়া যাবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত

ভোটার হওয়ার যোগ্য যেসব নাগরিকের এখনো জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) হয়নি তারা চলমান...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা