হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার হাওরে প্রথমবার আবাদ হয়েছে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের নিবন্ধন সনদ পাওয়া ‘তুলশীমালা’ ধান। হাওরাঞ্চলের সামান্য জমিতে আশানুরূপ ফলন হওয়ায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুগন্ধীজাতীয় এ ধান চাষের পরিধি আরো বাড়ার সম্ভাবনা দেখছে।
এবার উপজেলার মুড়িয়াউক ইউনিয়নের তরুণ কৃষক ফজলে রাব্বি জিসান তার রোপা আমনের ১৬ শতাংশ জমিতে তুলশীমালা চাষ করে ছয় মণ ধান উৎপাদন করতে পেরেছেন।
শেরপুরের স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয় এ ধান উৎপাদনের খবর পেয়ে ফজলে রাব্বি জিসানের বাড়িতে আসছেন স্থানীয় শৌখিন কৃষকরা।
জানা গেছে, জিসানের ১৬ শতাংশ জমির জন্য তিন কেজি বীজ, সার ও চাষাবাদ সহ খরচ পড়েছে প্রায় দুই হাজার টাকা। কয়েকদিন আগে কাটা শেষে তিনি ছয় মণ ধান বাড়ি নিতে পেরেছেন।
বাজারে প্রতিমণের দাম দুই হাজার ৮০০ টাকা। সব ধান বিক্রি করলে প্রায় ২২ হাজার টাকা পেতে পারেন বলে জিসান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি এ ধান বিক্রি করব না। সরকারি কর্মকর্তা এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপহার পাঠাবো।
আগামী বছর থেকে এই ধানের আবাদের পরিমাণ আরো বাড়াবেন বলেও জানান তিনি।
তুলশীমালা আবাদ প্রসঙ্গে ওই কৃষক জানান, লাখাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহমুদুল হাসান মিজান শেরপুর জেলার বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে সেখান থেকে ‘তুলসীমালার’ বীজ সংগ্রহ করে দিয়েছেন। এ ধান চাষ করে আশানুরূপ ফলন পাওয়ায় আগামীতে পরিধি বৃদ্ধি করবেন।
কৃষিবিদ মাহমুদুল হাসান মিজান বলেন, লাখাই উপজেলা হরেক রকম ফসল চাষের জন্য সম্ভাবনাময় অঞ্চল। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আমি ‘তুলশীমালা’ ধান চাষের প্রচলন ঘটানোর চেষ্টা করছি।
তিনি আরো জানান, তুলশীমালার চাল সুগন্ধি, চিকন ও সুস্বাদু। পোলাও, বিরিয়ানি, পায়েস, খিচুড়ি, ভাত, পিঠা, ফ্রাইড রাইসসহ অন্যান্য খাবারের জন্য বিশেষ উপযোগী।
শেরপুরের তুলশীমালা চালের সুনাম ও সমৃদ্ধি শতশত বছর আগের। সম্প্রতি শেরপুর জেলাকে এ ধানের মাধ্যমে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে। অন্যান্য জেলায় এ ধান উৎপাদন হলেও শেরপুরের সুগন্ধি তুলশীমালা চাল গুণ, মান ও সুগন্ধে ভিন্ন রকম। ঈদ-পূজা বিভিন্ন উৎসব পার্বণে তুলশীমালা সুগন্ধি চাল আত্মীয়দের বাড়ি পাঠানো হয়। এটি শেরপুর জেলার এক প্রাচীন রীতি। বাড়িতে নতুন জামাই এলে অনেককেই তুলশীমালা চালের পোলাও রান্না করেন। যার জন্য এটিকে অনেকেই জামাই আদর চাল বলে থাকেন।
আমারবাঙলা/এমআরইউ