পর্যটক
সারাদেশ

পর্যটক কমছে ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট সুন্দরবনে

আমার বাঙলা ডেস্ক

শীতের আগমন বাড়ার সাথে সাথে সুন্দরবনে বনদস্যু, হরিণ ও বাঘ শিকারিসহ অসৎ জেলেদের তৎপরতায় বিশ্বের দ্বিতীয় ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন তার ঐতিহ্যসহ পর্যটক হারাতে বসেছে। বিগত বছরগুলোতে শীত মৌসুমে সুন্দরবনে পর্যটকদের পদচারণ বৃদ্ধি পেলেও এবার পর্যটকদের তেমন কোনো আনাগোনা নেই বললেই চলে।

এদিকে হঠাৎ করে বনদস্যু ও হরিণ শিকারিদের উৎপাত বৃদ্ধি পাওয়ায় পর্যটক ও সাধারণ জেলে, বাওয়ালিরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, বন বিভাগের কিছু অসৎ কর্মকর্তার সহযোগিতায় সুন্দরবনের ঐতিহ্য হরিণ শিকারে মেতে উঠেছে শিকারি ও অসাধু জেলেরা। অভিযোগ আছে, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সুন্দরবনে বেড়াতে এলে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় পিকনিকের নামে তাদের হরিণ মেরে খাওয়ানো হয়।

এছাড়া সুন্দরবনের ঐতিহ্য সুন্দরবনের নদীতে ও সুন্দরবনের গহিনে অসাধু মাছ শিকারিরা প্রবেশ করে পানিতে বিষ দিয়ে মাছ ধরে আসার সময় হরিণ শিকারে মেতে উঠেছে। আর এ কারণে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যসহ তার সৌন্দর্য হারাতে বসেছে।

জানা যায়, সুন্দরবনের অভয়ারণ্য পশ্চিম সুন্দরবনের নয়াবেকীসহ বিভিন্ন এলাকায় সুন্দরবনের বন বিভাগের কিছু অসৎ কর্মকর্তার সহযোগিতায় জেলেরা বনের ভেতরে প্রবেশ করে বিষ প্রয়োগে মাছ ও ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করছে। সুন্দরবন রেঞ্জের কদমতলা স্টেশন কর্মকর্তা সোলাইমান হোসেন ও তার ক্যাশিয়ারের সাথে গোপন চুক্তির কারণে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ অভয়ারণ্যে জেলেরা প্রবেশ করে এসব কাজ করছে। এতে সুন্দরনের পানি ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।

সুন্দরবনের অভয়ারণ্য থেকে মাছ ধরে বিক্রি করতে আসা জেলে মোস্তফা মিয়া জানান, সুন্দরবনের অন্য জায়গার তুলনায় অভয়ারণ্য এলাকাগুলোতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। সে কারণে অভয়ারণ্য এলাকায় ঢুকতে কদমতলা স্টেশন কর্মকর্তা ও ক্যাশিয়ারকে চুক্তিতে টাকা দিতে হয়।

অপর জেলে আঃ গনি বলেন, ফরেস্টারদের মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়ার কারণে জেলেরা সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করে অবাধে হরিণ শিকার করে লোকালয়ে নিয়ে আসছে। সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার ইউপি সদস্য মোস্তফা জানান, ইতিমধ্যে অনেকেই হরিণের মাংসসহ ফরেস্ট ও কোস্ট গার্ডের কাছে আটক হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সুন্দরবনে প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার সাথে সখ্য থাকায় সুন্দরবনে অবাধে হরিণ, বাঘ ও পাখি শিকার ও জলদস্যুদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় সময় জেলেদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে।

জানা যায়, হরিণ শিকারের জন্য সুন্দরবনে হরিণ শিকারিদের বড় একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। মূল শিকারিরা সুন্দরবনের ভেতর থেকে হরিণ এনে লোকালয়ের সহযোগীদের হাতে পৌঁছে দেয়। সেখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় হাত বদল হয়ে থাকে। সাধারণত শীতের শুরুতে সক্রিয় হয়ে ওঠে হরিণ শিকারিরা। প্রতিনিয়ত গভীর সুন্দরবন থেকে ফাঁদ পেতে ও বন্দুক দিয়ে হরিণ শিকার করে তারা। এসব পেতে রাখা ফাঁদে অনেক সময় বাঘসহ সুন্দরবনের অন্যান্য প্রাণীও মারা পড়ে।

জানা যায়, সুন্দরবনের কালির চর, আগ্রাকোনা বালীঝাকি, ফিরিঙ্গী মেঘনা, পাতকোষ্টা, কাগা, পাগড়াতলী, তালতলী, ইলসেমারি, মানিক চোরা, কাছিকাটা, খলিশাবুনিয়া এসব এলাকায় হরিণের সংখ্যা বেশি থাকায় শিকারিদের লক্ষ্য থাকে এ চরকে ঘিরে।

স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে চিহ্নিত হরিণ শিকারি দস্যুদের সখ্য চোখে পড়ার মতো। তাদের সাথে চুক্তিতে হরিণ শিকারে নেমে পড়ে শিকারিরা। যে কারণে হরিণ শিকার করে পার পেয়ে যাচ্ছে শিকারিরা। বন বিভাগের সদস্যরা হরিণ শিকারিদের ধরতে অভিযানে যাওয়ার আগে সুন্দরবনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার কাছ থেকে খবর পেয়ে সতর্ক হয় চক্রটি।

সাতক্ষীরা রেঞ্জ বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২৩ সালে হরিণ শিকারের অপারাধে ১৪টি মামলা দেওয়া হয়। এ মামলায় ৩৩ জন আসামিসহ ৮৩ কেজি মাংস ও ৬৯৯টি হরিণ মারা ফাঁদ উদ্ধার করে। ২০২৪ সালে হরিণ শিকারি ১০ জন, বিষ দিয়ে মাছ শিকারি ১২ জন ও এক বাঘ শিকারিকে আটক করে।

সাতক্ষীরা রেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী বন বিভাগের কাছে হরিণ শিকারিদের ৪ স্টেশনে ১০৮ জনের একটা তালিকাও রয়েছে। তার মধ্যে কোবাদক স্টেশনে ৩০ জন, বুড়িগোয়ালিনী স্টেশনে ৪২ জন, কদমতলা স্টেশনে ২০ জন, কৈখালী স্টেশনে ১৬ জন। তালিকা ছাড়াও আরো অনেকে হরিণ শিকারের সাথে জড়িত রয়েছে বলেও জানা যায়।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব আলিনুর রহমান বাবুল বলেন, সুন্দরবন আমাদের পরিবেশ রক্ষা করে। সুন্দরবন আমাদের প্রধান ঐতিহ্য আর এ সুন্দরবনে থাকা হরিণ, পাখি ও বাঘ সুন্দরবনের আকর্ষণ বৃদ্ধি করে। কিন্তু প্রশাসনের কিছু অসৎ ব্যক্তি ও বন বিভাগের অসৎ কিছু কর্মকর্তার কারণে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
শ্যামনগর থানার ওসি হুমায়োন কোবির মোল্লা জানান, কেউ সুন্দরবনের কোনো অনিয়মের সাথে জড়িত থাকলে, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের কদমতলা স্টেশনের কর্মকর্তা সোলাইমান হোসেন বলেন, অভয়ারণ্য এলাকায় জেলেদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। নিয়মিত ফরেস্টের টিম বনদস্যু, হরিণ শিকারি ও অবৈধ জেলেদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করে আসছে।

সাতক্ষীরা রেঞ্জ ফরেস্ট কর্মকর্তা জিয়া বলেন, আমি নতুন এসেছি। আমরা সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে সজাগ থাকি। বনের ভেতর থেকে হরিণ মারার অনেক ফাঁদ উদ্ধার করেছি। বন বিভাগের কেউ হরিণ, পাখি ও বাঘ শিকারসহ অবৈধ কাজে জড়িত এটা জানতে পারলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সুন্দরবন বনদস্যুদের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা খুব দ্রুতই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাথে নিয়ে যৌথভাবে বনদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাব। বিগত দিনে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন লোকজন এনে পিকনিকের নামে হরিণ মেরে ভূরিভোজ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই, তখন আমি এখানে ছিলাম না। অপরদিকে বনদস্যুদের ভয়ে সুন্দরবনে পর্যটকদের আগমন খুবই কম বলে স্বীকার করেন। তবে তিনি পর্যটকদের নির্ভয়ে সুন্দরবন ভ্রমণ করার কথা বলেন।

এদিকে পর্যটক নিয়ে সুন্দরবন ঘোরানো নৌকার সুজন মাঝি বলেন, এবার পর্যটক নেই বললেই চলে। পর্যটক কম হওয়ার কারণে আমাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমন পর্যটকশূন্য আগে কখনো দেখি নাই।

আমার বাঙলা/এনবি

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ট্রান্সপোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিয়নের বিজয় দিবস উদযাপন

বাংলাদেশ ট্রান্সপোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিয়ন মহান বিজ...

ধূমপানে বুদ্ধি কমে, বলছে গবেষণা

ধূমপানে অনেক ক্ষতি। এতে করে ফুসফুস বা হৃদপিণ্ডের ক্ষতি হয়। ধূমপান মস্তিষ্কেও...

পালানোর পর প্রথমবার বিবৃতিতে যা বললেন আসাদ

বিদ্রোহীদের অভিযানের মুখে গত ৮ ডিসেম্বর দেশ ছেড়ে র...

সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তির লটারি আজ, ফল দেখা যাবে যেভাবে

দেশের সরকারি-বেসরকারি স্কুলে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি...

ফিরল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ বেশকিছু বিষয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অ...

সংস্কার একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া: আমির খসরু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, স...

সরিষা চাষে ঝুঁকছেন বরেন্দ্র জনপদের চাষিরা

দেশে ঊর্ধ্বমুখী ভোজ্যতেলের বাজার। সম্প্রতি সয়াবিন...

লেবানন থেকে ফিরেছেন আরো ৯৪ বাংলাদেশি

যুদ্ধবিধ্বস্ত লেবানন থেকে দেশে ফিরেছেন আরো ৯৪ জন ব...

ইসরায়েল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে: খামেনি

সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের সরকার পতনের ফলে তেহরানের ন...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা