গত ৮ ডিসেম্বর দৈনিক আমার বাংলায় ’সাতক্ষীরা রেঞ্জে সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে রমরমা মাছ ধরার ব্যবসা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরপরেই নড়ে চড়ে বসে সাতক্ষীরা রেঞ্জ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৯ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এ অভিযানে সুন্দরবনের কদমতলা স্টেশন এর টহল ফাঁড়ি নটাবেকি সুন্দরবনের অভয়ারণ্য থেকে ১৮ জন, হলদি বুনিয়া অভয়ারণ্য থেকে ১৭ জন জেলে সহ মোট ৮টি নৌকা জব্দ করা হয়। এছাড়া বুড়ি গোয়ালিনী স্টেশন এর পুষ্পকাঠির টহল ফাড়ি থেকে ১০ জন জেলেসহ ২টি নৌকা জব্দ করা হয়।
মোট ১০টি নৌকাসহ ৪৩ জন জেলেকে আটক করে সাতক্ষীরা রেঞ্জ। এই ৪৩ জন জেলে ও ১০টি নৌকার মালিক আকবর কোম্পানি, মহাসিন কোম্পানি, ডাক্তার শরিফ কোম্পানি ও হোসেন কোম্পানির।
তবে জেলেদের তথ্য মতে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের অভয়ারণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নৌকা চলে নটাবেকি ওসি হারুনের এলাকায়। সেখানে কম হলেও ৪০টি নৌকা অভয়ারণ্যে চলতি এই মরা ‘গোনে’ মাছ ধরেছে। এসব নৌকা প্রতি নটাবেকির টহল অফিসার মোঃ হারুন এর ড্রাইভার জামাল কোম্পানি ও জেলেদের থেকে সুবিধা গ্রহণ করে থাকেন। হলদিবুনিয়া টহল ফাঁড়িতে প্রায় ৫০টির মত নৌকা মাছ ধরছে। যার মধ্যে কমপক্ষে ৬টি ইন্ডিয়ান নৌকা রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলেদের এক কোম্পানির মালিক বলেন, এসিএফ স্যাররা খুবই ভালো। এসিএফ স্যাররা চান না সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে মাছ ধরুক। কারণ তারা অনেকে জানেনই না যে অভয়ারণ্যে আমরা মাছ ধরছি। এজন্য তাদের কোন বিনিময় দিতে হয় না আমাদের। কিন্তু ওসি এবং এসও দের নলেজে না দিয়ে এবং তাদের বিনিময়ে না দিয়ে কোন জেলেরা সুন্দরবনের কোথাও মাছ ধরতে পারে না। তাতে হোক অভয়ারণ্য বা অভয়ারণ্য ছাড়া। যা এসিএফ স্যাররা জানেনও না। আমরা পড়ছিও ভাই সংকটে।
যে দোষী না তাকে আমরা দোষ দিতে চাই না। কিন্তু টাকা ছাড়া সুন্দরবন এ ব্যবসা করাও যায় না। সুন্দরবনের ওসিদের যদি টাকা না দেওয়া লাগতো তাহলে একটা জেলে এক বছরে যে মাছ ধরত তা দিয়ে পরবর্তী এক বছর সে বসে বসে খেতে পারতো।
এ বিষয়ে এক জেলে বলেন, অভয়ারণ্য বলে সুন্দরবন এ কিছুই নেই। তবে নতুন এসিএফ স্যার এসে কঠোর হওয়ায় আমরা জেলারাসহ সবাই একটা আতঙ্কে আছি। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা ওসি। ওসিদের বিনিময় না দিলে সুন্দরবনের বৈধ জায়গায় হোক বা অভয়ারণ্যে মাছ ধরতে যাওয়া সম্ভব হয় না।
বুড়ি গোয়ালিনীর স্টেশন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, আমার একটি টহল পারি পুষ্পকাঠি থেকে ১০ জন জেলে ও দুইটি নৌকা জব্দ করা হয়।
কদমতলার এস স্টেশন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সুলাইমান বলেন, আমার এলাকার টহল ফাঁড়ি নটাবেকির থেকে ১৮ জন জেলে এবং হলদিবুনিয়া থেকে ১৭ জন জেলেসহ ৮ টি নৌকা জব্দ করা হয়।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন কর্মকর্তা মোঃ মশিউর রহমান বলেন, আমি নতুন এসেছি অনেক কিছুই আমার জানা ছিল না। তবে জানার পরপরই আমি অভিযান পরিচালনা শুরু করেছি, যার নজির ইতোমধ্যেই আপনারা দেখেছেন। আমি যতদিন সুন্দরবনে থাকবো ততদিন অভয়ারণ্যে কেউ মাছ ধরলে তার পরিণতি এরকমই হবে।
আর কেউ যদি কোন লেনদেন করে এর যদি প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে সময় স্বল্পতার কারণে আমরা আরো অনেক জায়গায় পৌঁছাতে পারিনি। এ অভিযান চলবে।
আমার বাঙলা/এনবি