প্রতি বছরের মতো এবারও শীতে সাতক্ষীরার তালার বিল মথুরার বিলে বেড়েছে পরিযায়ী পাখির আনাগোনা। শীতপ্রধান অঞ্চল থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আসছে অতিথি পাখির দল, যার কিছু আসছে সাতক্ষীরা অঞ্চলেও।
পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ আর অবাধ বিচরণ বিমোহিত করছে এলাকাবাসী ও দর্শনার্থীদের। কিন্তু শিকারির থাবা প্রতিনিয়ত এ কলকাকলি থামিয়ে দিতে সক্রিয়।
ইতোমধ্যে এ বিলে বিভিন্ন জাতের অতিথি পাখি এসেছে। এছাড়া, বেশ কিছু বিপন্ন প্রায় ও বিরল প্রজাতির দেশিয় পাখি বছর জুড়েই এ বিলে অবস্থান নেয়। দেশীয় প্রজাতির এসব পাখির জন্য এ বিল ও আশপাশ এলাকা নিরাপদ আবাস হিসেবেই চিহ্নিত। এখন পর্যন্ত মথুরা বিলে অবস্থান নেওয়া অতিথি পাখির মধ্যে বেশি দেখা গিয়েছে বড় পানকৌড়ি, পাতি-কুট, গিয়িরা হাঁস, তিলা হাঁস প্রভৃতি।
জানা যায়, প্রচন্ড শীতের প্রকোপ থেকে আত্মরক্ষার্থে সুদূর হিমালয়, সাইবেরিয়াসহ শীত প্রধান অঞ্চল থেকে অতিথি পাখিরা এ অঞ্চলে আসে। এসব পাখির মধ্যে রয়েছে বালি হাঁস, জলপিপি, কোম্বডাক, সরালী কাস্তে চাড়া, পাতাড়ি হাঁস, কাদা খোচা, ডংকুর, হুরহুর, খয়রা, সোনা রিজিয়া অন্যতম। ৮০ দশকে এদেশে আসা অতিথি পাখির সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ৩০০ প্রজাতির। কিন্তু বর্তমানে এ সংখ্যা নেমে ৬০ থেকে ৭০ এ চলে এসেছে। প্রশাসন তৎপর হলে এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ হলে এসব পাখি শিকার বন্ধ হবে বলে এলাকার সচেতন মহল মনে করেন।
অতিথি পাখি সম্পর্কে শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, নভেম্বরের শেষ থেকেই অপরূপ সুন্দর এ বিলে আসতে শুরু করে অতিথি পাখির ঝাঁক। প্রতিদিন বিচিত্র রঙের অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত হয় বিলটি।
পাশ্ববর্তী যশোর জেলার কেশবপুর এলাকার মিজান মাষ্টার জানান, দেশের পাখির মধ্যে বালি হাঁস, পাতি সরালি, বেগুনি কালিমসহ বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস বিভিন্ন এলাকা থেকে বিলে আসছে। পাখিগুলো বিলে ও বিলের চারপাশে কচুরিপানার মধ্যে অবস্থান করছে।
পাখী প্রেমিক সেলিম মোল্লা জানান, পাখি শিকারিরা দিনের বেলা গরু-মহিষ চড়ানো, ধান চাষ, হাঁস চড়ানোর নামে ছদ্মবেশে বিলে ঘোরাঘুরি করে। এ সময় সুযোগ বুঝে বিষটোপের মাধ্যমে পাখি ধরে তারা পালিয়ে যায়। আর সন্ধ্যার পর থেকেই ১০-১২ জন সংঘবদ্ধ হয়ে পাখি শিকারে নামে। তারা জাল দিয়ে ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করে গভীর রাত পর্যন্ত। ভোর হওয়ার আগেই তারা বিল থেকে চলে যায়। এয়ারগান দিয়েও শিকার করা হচ্ছে অতিথি পাখি।
পাখিদের আবাসস্থলগুলো এখন অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। একশ্রেণির চোরা শিকারী পাখির অবাধ বিচরণে এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে ধ্বংস হচ্ছে জীব বৈচিত্র ও পরিবেশ। শুধু সাতক্ষীরা সদর নয়, বিভিন্ন উপজেলায়ও রয়েছে এমন পাখি শিকারের অভিযোগ।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য শংকর কুমার জানান, দিনরাত পাখিদের কিচিরমিচির আর কলতানে মুখরিত বিলের দৃশ্য দেখে পাখিপ্রেমিদের মন সহজেই জুড়িয়ে যাবে। সাতক্ষীরার তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মোঃ রাসেল বলেন, বিভিন্নস্থানে অতিথি পাখি শিকারের অভিযোগ পেয়েছি। ইতোপূর্বে সবাইকে অতিথি পাখি শিকার না করতে আহ্বান জানানো হয়েছে। এরপরও যারা অতিথি পাখি শিকার করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ বলেন, অতিথি পাখি শিকারের সময় স্থানীয়রা একটু তথ্য দিয়ে সহায়তা করলে তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল জানান, অতিথি পাখি শিকার বন্ধে আমারা প্রশাসনের জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের চিঠি দেওয়া শুরু করেছি। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়েও কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করছি। তা ছাড়া সঠিক খোঁজ খবর পেলে আমরা সেখানে গিয়ে অভিযান পারিচালনা করে শিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
আমার বাঙলা/এনবি