সম্প্রতি নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দরের আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে। ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা বৃদ্বির সাথে সাথে বৃদ্বি পেয়েছে রাজস্ব। ১ ডিসেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর ভারত থেকে এ বন্দর দিয়ে ৭৯৬ ট্রাক পণ্য আমদানি হয়েছে। যেখান থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১০.২৯ কোটি টাকা। আর ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৯০৭.৫৮ কোটি টাকা। যেখানে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল মাত্র ৬৩১ কোটি ৭১ লাখ ৮৭ হাজার ৯৭৩ হাজার টাকা।
তবে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে ব্যবসায়ীরা কিছুটা বিপাকে থাকলেও আমদানি-রপ্তানিতে খুব বেশি নীতিবাচক প্রভাব পড়েনি ভোমরা বন্দরে। বরং ভোমরা স্থলবন্দরের ব্যবস্থাপনা ও বন্দরের ব্যবসায়ী সংগঠন সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সার্বিক ও সুষ্ঠু ব্যবস্থা ও শ্রমিক সংগঠনের ইতিবাচক ভূমিকার কারণে আগের চেয়ে বন্দরের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভোমরা স্থলবন্দরের দেওয়া তথ্য মতে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৭ লাখ ৮৭ হাজার ৮৯৬ মেট্রিক টন বিভিন্ন পণ্য আমদানি হয়েছে। আর রাজস্ব এসেছে ৫১৯.৭৮ কোটি টাকা। যেখানে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ লাখ ৯৮ হাজার ৭০১ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হলেও রাজস্ব আদায় হয় ৩৪১.৯০ কোটি টাকা। এই সময়ের মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের চেয়েও ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে পণ্য আমদানি বেশি হলেও রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে। গত ৫ মাসে পণ্য আমদানি কম হলেও ১৭৭.৮৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে। আর বাংলাদেশ থেকে এ বন্দর দিয়ে গত নভেম্বর মাসে ৩ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার ৯৭৫ মেট্রিক টন পণ্য ২ হাজার ৮৪ ট্রাকে ভারতে রপ্তানি হয়েছে।
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রহিত ট্রেডাসের স্বতাধিকারী রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী জানান, কোভিট এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং পরবর্তী সময়ে মধ্যপ্রাচ্য সংকটের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। বিশ্বের অনেক বড় বড় বন্দরে ন্যায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থল বন্দর ভোমরা, বেনাপোল ও চট্টগ্রাম সুমুদ্র বন্দরসহ দেশের বিভিন্ন বন্দরে আমদানি-রপ্তানিতে মন্দা ভাব দেখা দেয় এবং অর্থনীতে কিছুটা ধাক্কা লাগে। এরপর চলতি বছর জুলাই-আগস্টে দেশে শুরু হয় ছাত্র-জনতার বৈষম্যবরোধী আন্দোলন, যা আগস্টেও অব্যাহত ছিল। ওই সময় আন্দোলন, কারফিউ, বোলাকেডের কারনে আমদানি-রপ্তানিতে কিছুটা অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছিল আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। এত সব প্রতিবন্ধকতার পরও ভোমরা স্থল বন্দরে রাজস্ব আদায় তুলনামূলকভাবে বৃদ্বি পেয়েছে। ভারতের ঘোজাডাঙ্গা বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানিতে অর্জন করেছে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। কিন্তু আগরতলা বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলা ও পতাকা অবমাননার ঘটনায় নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ায় বেনাপোল বন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরের আমদানি-রপ্তানি ঝুকির মধ্যে পড়ে। অনেকস্থানে আমদানি-রপ্তানি বধাগ্রস্থ হয়। কিন্তু ভোমরা স্থলবন্দর এর আওতামুক্ত থাকায় এখনও পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে বন্দরের সকল কার্যক্রম।
ভোমরা স্থল বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. শফিউল বসর ও সহ-কারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাকিব জানান, ভোমরা স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে। গত অর্থ বছরের চেয়ে পণ্য কম আমদানি হলেও বন্দরের রাজস্ব বৃদ্বি পেয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৭ লাখ ৮৭ হাজার ৮৯৬ মেট্রিক টন বিভিন্ন পণ্য আমদানি হয়েছে। সেখান থেকে রাজস্ব এসেছে ৫১৯.৭৮ কোটি টাকা। যেখানে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ লাখ ৯৮ হাজার ৭০১ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হলেও রাজস্ব আদায় হয় ৩৪১.৯০ কোটি টাকা। এই সময়ের মধ্যে গত ৫ মাসে পণ্য আমদানি কম হলেও ১৭৭.৮৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে। শুধু গত নভেম্বর মাসে ভোমরা বন্দরের আমদানিকৃত পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা ৬ হাজার ৫৫২টি। যা থেকে রাজস্ব্য আদায় হয়েছে ১২২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আর ১ ডিসেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারত থেকে আমদানিকৃত ২২০টি পণ্যবাহী ট্রাক ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে পাথর, পেঁয়াজ, চাইল,আদা, সরিষাল খৈল, শুকনা মরিজ, ফল, হলুদ, ডাল উল্লেখযোগ্য।
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী সংগঠন ভোমরা সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ইসুতে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বৈরি অবস্থা সৃস্টি হয়েছে। ফলে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা আমদানি-রপ্তানি নিয়ে অনেকটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দরের আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে। ওপারের ঘোজাডাঙ্গা সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অচিন্দ কুমার ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত মন্ডলের সাথে কথা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশে পন্য আমদানির ক্ষেতে কোনো প্রতিবন্ধকতা এখনো পর্যন্ত সৃষ্টি হয়নি। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদেরকে সর্তক থেকে আমদানি-রপ্তানিতে যাতে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃস্টি না হয় সে জন্য বিশেষভাবে তাদেরকে অনুরোধ করা হয়েছে।
আমার বাঙলা/এনবি