সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের বিনসাড়া গ্রাম। এ গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলামের স্ত্রী নার্গিস।
অন্য আট-দশটি নারীর মতো নন নার্গিস। বাড়িতে স্বামী শয্যাশায়ী। শাশুড়ি বয়সের ভারে অসুস্থ। পিঠাপিঠি ভাইবোন। পরিবারের সাত সদস্যের খাবারের যোগার করতে হয় নার্গিসকে। আগে এ বাড়ি-ও বাড়ি কাজ করতেন। বহুদিন অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কেটেছে কাজ না পেয়ে। নিরুপায় হয়ে স্থানীয় একটি রাইস মিলে দিনমজুর খাটতে শুরু করেন। এখন তিনি ওই রাইস মিলের পাঁচ ধরনের মেশিন একাই সামলান।
মিল মালিক আবুল কালাম আজাদ বলেন, তিন বছর হয়েছে রাইস মিল স্থাপন করার। শুরুর দিকে ইয়াসিন নামে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি মিলের মেশিন চালাতেন। নার্গিস দিন মজুরের কাজ করতে-করতে চার মাসে রাইস মিলের মেশিন চালানো শিখে নেন। তিনি খুব সহজ-সরল। কিন্তু তার ছিল অদম্য ইচ্ছা। নার্গিস রাইস মিলের পাঁচটি মেশিনে মানুষ ও পশুর নয় ধরনের খাদ্য প্রস্তুত করতে পারেন।
বিনসাড়া গ্রামের ইয়াসিন বলেন, নার্গিস আমার নিকটতম প্রতিবেশী। তার খুব অভাব-অনটনের সংসার। একদিন কাজ না করলে পেটের ভাত জোটে না। প্রতিদিন কাজও পান না। আমি মাঠে-ঘাটে সব কাজ করতে পারি। এজন্য আমার রাইস মিলের মাসিক চাকরি তাকে দিয়েছি। তিনি শুধু মেশিন চালানো নয়, মেশিনের খুঁটিনাটি সব সমস্যা ঠিক করতে পারেন।
নার্গিস বলেন, রাইস মিলে ২০০ টাকায় দিন মজুরের কাজ করতাম। মেশিন চালিয়ে মাসে নয় হাজার টাকা পাই। এ টাকাতে বেশ কষ্টে ভরণপোষণ চলে আমাদের। স্বামী অসুস্থতাজনিত কারণে কোনো কাজ করতে পারেন না। শাশুড়ির যথেষ্ট বয়স হয়েছে। বড় ছেলে নাঈমের বয়স ১৫ চলছে। অন্য দুই ছেলে ও এক মেয়ে আরো ছোট।
নার্গিসের স্বপ্ন নিজ বাড়িতে ধান ভাঙানো মেশিন বসানো। একটি মেশিনে শুধু ধান ভাঙলেও সংসারের অভাব কেটে যেত বলে জানান তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, কাজিপুর গ্রামের কাজিপুর সড়কের পাশে সরকার রাইস মিলে মেশিন চালাচ্ছেন নার্গিস। মিলের মেশিনের চাকায় ফিতা তুলে দেওয়া থেকে শুরু করে সব তিনি নিজেই করছেন। সরষে ভাঙানোর পর আরেক মেশিনে চাল ঢেলে দিচ্ছেন চালের আটা করার জন্য। তারপর আরেক মেশিনে মাছের খাদ্য প্রস্তুত করছেন।
কাজিপুর গ্রামের ইউসুফ আলী বলেন, ধান, ধানের চিটা ও ভুট্টা দিয়ে মাছের খাদ্য প্রস্তুত করে নিলাম। নার্গিস একজন ভালো মেশিন চালক। খুব ভালো করে সব খাবার প্রস্তুত করে দেন।
এ গ্রামের মনোয়ার খাতুন নামে একজন গৃহিণী বলেন, আমার স্বামী ভাপা পিঠা বিক্রি করেন। আমি চাল থেকে আটা করে নিলাম।
সমাজ সংগঠক মামুন বিশ্বাস বলেন, নিজেদের অবস্থান থেকে সহযোগিতার হাত বাড়ালে নার্গিসের স্বপ্ন পূরণ সম্ভব। বিশেষ করে দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত নার্গিসের পরিবারটির মুক্তি মিলত।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছা. খাদিজা নাসরিন বলেন, নার্গিসের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তার জীবনমান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ