মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামকে উপেক্ষা করেই আলুর দাম হিমাগার পর্যায়ে ৩০ ও খুচরা বাজারে ৩৭ টাকা করে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। হিমাগার কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন নতুন করে এ দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন।তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ব্যবসায়ী ভুল বলছে। তারা কারসাজিতে মেতেছে।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার কয়েকটি হিমাগার ঘুরে, ব্যবসায়ী ও হিমাগার ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা যায়।
বুধবার সকাল দশটার দিকে হিমাগার পর্যায়ে আলুর দাম, আলু বের হওয়ার বিষয়টি সরজমিনে দেখা গেছে। এ সময় মুক্তারপুর এলাকার বিক্রমপুর মাল্টিপারপাস কোল্ডস্টোরেজে গেলে দেখা যায়, হিমাগার থেকে আলু বের করে শেডের মধ্যে রাখা হয়েছে। সেগুলো বাছাই করছেন শ্রমিকরা। পাঁচদিন হিমাগারটিতে কর্মচঞ্চলতা না থাকলেও আজকে ছিল কর্মচাঞ্চল্য পূর্ণ।
এ সময় হিমাগারের শ্রমিক এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে আমাদের সঙ্গে সভা হয়েছে। সেখানে আলুর ক্রয়, বিক্রয় মূল্য নিয়ে বিভিন্ন কথা হয়েছে। আমাদের দাবি-দাওয়ার পেক্ষিতে এক পর্যায়ে হিমাগার থেকে ৩০ টাকা দরে আলু বিক্রি করার অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। তবে খুচরা বাজারে ৩৭ টাকার মধ্যে রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
৩০ টাকা দরে আলু বিক্রির খবরে হিমাগার ১৫০ বস্তার মত আলু বের করে শেডে রাখেন বিক্রমপুর মাল্টিপারপাস কোল্ডস্টোরেজের আলু মজুতদার ব্যবসায়ী মো. ইউনুস ব্যাপারি। তিনি বলেন, দুই হাজার বস্তা আলু কিনেছিলাম ৩৬ টাকা করে। এখন ১ হাজার বস্তা আলু আছে। আলুর দাম ২৬-২৭ টাকা নির্ধারন করার পর আলু বিক্রি করিনি। গতকাল জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে আবারো ৩০ টাকা কেজি আলু বিক্রি শুরু করেছি।
পরে বেলা বারোটার দিকে রিভারভিউ কোল্ড-স্টোরেজে গেলে দেখা যায়, সেখানেও একটি শেডে আলু ছড়িয়ে রাখা হয়েছে। হিমাগারে ব্যবস্থাপক রেজাউল করিমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আজকে আরও সাড়ে পাঁচশ বস্তা আলু হিমাগার থেকে বের হবে। দামের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয় নিয়ে আমাদের কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে।
বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে কদম রসুল কোল্ড স্টোরেজে ঢুকতেই আলুর দামের ব্যাপারে একটি ব্যানার চোখে পড়ে। সেখানেও ৩০ টাকা দামের বিষয়টি লেখা ছিল।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকরা সভা করেন। সেখানে তারা দাবি জানিয়েছিলেন যে, ৩০ টাকা করে আলু বিক্রি করলে তাদের লোকসান হবে না। আমি সভায় ছিলাম না, ৩০ টাকার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলতে পারবেন।
হিমাগার থেকে ৩০ টাকা বিক্রির বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর রিপন বেলা সোয়া তিনটার দিকে বলেন, যারা বলছে ৩০ টাকার কথা তারা ভুল বলছেন। সভায় আমরা বলেছি খুচরা পর্যায়ে ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা বিক্রি করতে। হিমাগার পর্যায়ে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই বিক্রি করা হবে। যারা ৩০ টাকা বলেছে, ব্যানারে লিখেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে সরকার নির্ধারিত দামে হিমাগার থেকে আলু বের হওয়া শুরু করেছে। আমি নিজে হিমাগার ঘুরে তদারকি করছি।
তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সভায় উপস্থিত থাকা হিমাগার ব্যবস্থাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যবসায়ীদের আবদারের প্রেক্ষিতে হিমাগারে ৩০ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে ৩৭ টাকা থেকে ৪০ টাকার মধ্যে রাখার পক্ষে ছিলেন প্রশাসনের লোকজন। বিষয়টি লিখিত নয়, গোপনে রাখার কথা ছিল।
এবি/ওশিন