মো. নাজির হোসেন: মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়িতে একাধিক স্থানে সরকারি রাস্তা কেটে ড্রেজার পাইপ বসিয়ে অবাধে অবৈধ বালুর ব্যবসা করছেন কতিপয় ভূমিদস্যু। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মুন্সীগঞ্জের তালতলা গৌরগঞ্জ খাল দিয়ে বাল্কহেড দিয়ে বালি পরিবহন করা হচ্ছে। প্রশাসনের চোখকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও অবাধে বাল্কহেড দিয়ে চলছে মাটি পরিবহন।
অন্যদিকে, সরকারি রাস্তা কেটে ও ফুটা করে ড্রাইভেশন দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বালিগাঁও-কুন্ডের বাজার সংযোগ সড়কের কান্দাপাড়া ও কাইচাইল এলাকায় রাস্তা কেটে এবং গর্ত করে স্থাপন করা হয়েছে অবৈধ ড্রেজার পাইপ। আর এই সমস্ত ড্রেজার পাইপ দিয়ে পাশের তালতলা গৌরগঞ্জ খাল হতে বাল্কহেড দিয়ে আনা বালু আনলোড করা হচ্ছে। অথচ এই খালে বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন।
সিরাজদীখান উপজেলার বারইপাড়া গ্রামের রসিদ কান্দাপাড়া সড়কের পাশে উন্মুক্তস্থানে প্রায় এক একর জমিতে টিনের বাউন্ডারি দিয়ে নির্মাণ করেছেন বিশাল বালু রাখার স্থান। এখানে বালু স্তূপ করে রেখে বিভিন্ন ট্রাক ও ট্রলিতে করে বিক্রি করছেন বিভিন্ন স্থানে। পাশের তালতলা গৌরগঞ্জ খালে বাল্ব হেড ভর্তি বালি রেখে কাটার ড্রেজারের মাধ্যমে ওই বালু উত্তোলন করছেন ওই স্থানে।
এতে তিনি সড়কটিকে দুটি ফুটো করে পাইপ স্থাপন করেছেন একটি ফুটো দিয়ে ড্রেজার হতে টেনে তোলা হচ্ছে বালি অপর ফুটা দিয়ে নামানো হচ্ছে পানি। এতে সড়কটি ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া তিনি রাস্তার পাশে বালু রেখে বিক্রি করায় ওই সমস্ত বালু পরিবহণ করতে গিয়ে স্থানে স্থানে রাস্তার পিচ উঠে গিয়ে ওইস্থানে সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয় বৃদ্ধ রতন মিয়া (৭০) বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ রশিদ এখানে বালু রেখে ব্যবসা করছেন। প্রায়দিনই সে বাল্কহেড দিয়ে বালু এনে তুলে পরে তা ট্রাক, ট্রলি ও ভ্যানে ভরে বিভিন্নস্থানে বিক্রি করছেন।
এদিকে, একই সড়কের কাইচাইল দারুল উলুম মাদ্রাসার দক্ষিণ পাশের সরকারি কার্পেটিং করা রাস্তা কেটে স্থাপন করা হয়েছে ড্রেজার পাইপ লাইন। গত শুক্রবার রাতে কাইচাইল গ্রামের শরীফ হালদার সড়ক কেটে ড্রেজার পাইপ স্থাপন করে এবং ওই স্থানে ড্রাইভেশন দিয়েছেন। তালতলা গৌরগঞ্জ খালে একটি মাটি কাটার ড্রেজারও ইতিমধ্যে এনেছেন তিনি।
পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ করতে থাকা শ্রমিক জানান, শরীফ হালদার তাদের দিয়ে এ পাইপ লাইন টানাচ্ছেন। এ ব্যাপারে শরিফ হালদারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ড্রেজার পাইপ তিনি টানছেন বিষয়টি স্বীকার করে সাংবাদিকদের অনৈতিক প্রস্তাব দেন।
এদিকে, উপজেলার নয়াগাঁও এলাকায় কৃষি জমি হতে মাটি কেটে অপর একটি কৃষি জমি ভরাটের কাজ চলছে। এ ভরাট কাজ করতে গিয়ে নয়াগাঁও এলাকার প্রধান সড়কটির উপরে ড্রাইভেশন স্থাপন করা হয়েছে। নয়াগাওঁ গ্রামের মোতালেব মিয়া এই কৃষি জমি কর্তন করে অপর কৃষি জমি ভরাট করছে।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি পুকুরের মাটি কেটে পুকুর ভরাট করছি। কৃষি জমি কাটছি ও ভরাট করছি না। রাস্তার উপরে ড্রাইভেশন দেওয়ার অনুমনি নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে সে কোন অনুমতি নেয়নি বলে জানান।
এছাড়াও উপজেলার হাসাইল মাছঘাট এলাকায় নদীর পারে বালু কাটার ড্রেজার রেখে বাল্কহেড দিয়ে মাটি এনে ভরাট ব্যবসা করছেন স্থানীয় হাসাইল বানরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান দেওয়ান ও নেকবর মেলকার। জনাকীর্ণ ওই স্থানে ড্রেজার চলায় পথে যাতায়াতকারী ও ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানটিতে বিকট শব্দে মানুষ বিরক্তবোধ করলেও মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেনা।
ওই ড্রেজার দিয়ে মাটি বহন করতে গিয়ে পাশের সড়কটিতে স্থাপন করা হয়েছে একাধিক ড্রাইভেশন। এছাড়া রাস্তার এক স্থানের বিছানো ইট খুলে রাস্তা গর্ত করে স্থাপন করা হয়েছে পাইপ লাইন। তাছাড়া রাস্তার উপরে দীর্ঘ পাইপ লাইনের সারিতো রয়েছেই।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান দেওয়ান বলেন, আমি কোন ড্রেজার ব্যবসা করিনা। এই ড্রেজারটি ওসমান মেলকারের।
তবে এ বিষয়ে ওসমান মেলকার বলেন, আমি ও চেয়ারম্যান একসাথে ড্রেজার ব্যাবসা করি। ওই ড্রেজারটি তাদের বলে স্বীকার করেন তিনি।
এ ব্যাপারে টঙ্গীবাড়ি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেজওয়ানা আফরিন বলেন, আমরা এ বিষয়ে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। অনেক জরিমানাও করেছি।
তিনি আরও বলেন, তবে বর্ষাকাল হওয়ায় এবং পানির উপর দিয়ে ড্রেজার পাইপ লাইন ও ড্রেজার স্থাপন করায় আমাদের ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করতে কষ্টকর হয়ে পরে। আমি এ বিষয়গুলো খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবো।
এবি/এইচএন