মোঃ মিজানুর রহমান, জেলা প্রতিনিধি: পটুয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে জোয়ারের পানিতে বাড়িঘর প্লাবিত হচ্ছে। ডুবে যাচ্ছে বাদাম,মুগডালসহ মৌসুমি ফসলসহ ফসলের জমি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ( পাউবো) জানান, প্রাথমিক ভাবে ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হওয়ার তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব বেড়িবাঁধ মেরামত করতে ১৫ কোটির টাকার প্রয়োজন বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলার সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের বলই কাঠি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের জলোচ্ছাসে বেড়ি বাঁধের চারটি অংশ ভেঙে সম্পূর্ণ বিচ্ছিণ্ন হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে বাঁধের উপর ইউনিয়ন সংযোগ সড়কটি। বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি প্লাবিত হয়ে বাড়িঘর, মাঠঘাট, ফসলী ক্ষেত তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলইকাঠি,উত্তর বাদুরা ও পূর্ব আউলিয়াপুর এই তিন গ্রামের মানুষ।
গত রোববার রাতে ঝড়ো হাওয়া ও জোয়ারের ঝাপটায় বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে যায়। রাতেই জোয়ারের পানি গ্রামের বাড়িঘরে ঢুকে পড়ে।
গ্রামের দুলু মৃধা জানান, জোয়ারের জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে তাদের ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভেঙে যাওয়া বাঁধের দক্ষিন পাড়ে দুইটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুইটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা রয়েছে। এপারের তিন গ্রামের শিক্ষার্থীরা বাঁধের উপর নির্মিত সড়ক দিয়েই ঐসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতো।
এই সড়ক দিয়ে রিকশা , অটোবাইকসহ নানা ধরনের যানবাহন চলাচল করতো। কিন্তু বাঁধের সাথে সড়কটি ভেসে যাওয়ায় তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে । শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে এবং তাদের ইউপি কার্যালয়ে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয় ইউনিয়নের ৪৯ পোল্ডারের বিভিন্ন পয়েন্টে এক কিলোমিটার ও চর মোন্তাজ ইউনিয়নের ৫৫/৪ পোল্ডারের বন্যা নিয়ন্ত্রন বেড়িবাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে দেড় কিলোমিটার ভেঙে ও বাঁধ উপছে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে।
এদিকে জেলার গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৫৫/৩ পোল্ডারের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকলেও সোমবার দুপুরের জোয়ারে তা সম্পূর্ণ ভেঙে জোয়ারের পানি পূর্ব চরবিশ্বাসের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
চর বিশ্বাস ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসাইন জানান, পাউবো ৫৫/৩ পোল্ডারের বন্যা নিয়ন্ত্রন বেড়িবাঁধ একটি অংশ ভেঙে পূর্ব চরবিশ্বাসের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ইউনিয়নের চরবাংলায় কোন বেড়িবাঁধ না থাকায় তেঁতুলিয়া নদীর জোয়ারের জলোচ্ছাসে ওই চরের অভ্যন্তরে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে প্রায় দুই হাজার বাসিন্দা পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
পাউবো পটুয়াখালী সূত্র জানায়, জেলায় বেড়িবাঁধ রয়েছে এক হাজার ৮১৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৮ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ । ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জোয়ারের জলোচ্ছাসে বিভিন্ন অংশে অন্তত ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বাঁধ উপছে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্লাবিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, তার আওতায় জেলার রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়া উপজেলায় মোট ৫১৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল ১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তান্ডবে ৯ দশমিক ৫০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বেশ কয়েকটি অংশ সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে কমপক্ষে ১১ কোটি টাকা প্রয়োজন। তবে পানি নেমে যাওয়ার পর পূনাঙ্গ হিসেব পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন বলেন, তার কার্যালয়ের আওতায় এক হাজার ৩০০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রন বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৮ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জোয়ারের জলোচ্ছাসে বিভিন্ন অংশে প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে প্রয়োজন কমপক্ষে চার কোটি টাকা। অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার পর মেরামতের কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।
এবি/এইচএন