মোঃ মিজানুর রহমান, পটুয়াখালী: বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপটি এখন ঘূর্ণিঝড়‘রিমাল’এ রূপ নিয়েছে। উপকূলীয় পটুয়াখালী জেলায় সকাল থেকে মেঘলা আবহাওয়া বিরাজ করছে। শনিবার রাত থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। ঘূর্ণিঝড়‘রিমাল’এর প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে।
আজ রোববার দুপুরের জোয়ারের সময় নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বাঁধের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। সকাল থেকে জেলার উপকূলের মানুষ নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ঘোষণা দেওয়ার পরই আজ পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলার পর জেলার ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি বাংলাদেশ (সিপিপি’র) স্বেচ্ছাসেবকরা উপকূলের মানুষদের নিরাপদে আশ্রয়ে আনতে শুরু করেছে। তারা উপকূলে মাইকিং করে ঘূর্ণিঝড়‘রিমাল’এর প্রভাব থেকে দ্রুত নিরাপদে চলে আসার আহবান জানাচ্ছেন।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি বাংলাদেশ (সিপিপি) জেলার দশমিনা উপজেলা ট্রেইনার রায়হান সোহাগ জানান, আজ রোববার সকাল থেকেই তাদের স্বেচ্ছাসেবকরা প্রস্তুতি নিয়ে প্রচারনায় নেমেছেন। দশমিনার উপকূলের বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে আসতে মাইকিং শুরু করেছেন। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত আসার পর লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে আসতে শুরু করেছে।
রায়হান সোহাগ জানান, দুপুরে জোয়ারের সময় নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে নিচু এলাকার বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। দশমিনা উপজেলার রনগোপালদি ইউনিয়নের পাতারচর এলাকার বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্লাবিত হয়েছে। তাদের স্বেচ্ছাসেবকরা ওই এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসছে।
এছাড়াও দশমিনা উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর হাদী ও চর শাহজালালের থেকে বয়স্ক নারী, পুরুষ এবং শিশুদের স্বেচ্ছাসেবকরা আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে নিয়ে আসার কাজ করছেন।
এদিকে গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি এলাকায় বেড়িবাঁধ জোয়ারের ঝাপটায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যেকোন সময়ে সম্পূর্ণ ভেঙে লোকালয়ে পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। এই অবস্থায় বাঁধ এলাকার মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কে অবহিত করা হয়েছে। পাউবোর লোকজন এসে জিওব্যাগ ফেলে বাঁধটি রক্ষার চেষ্টাকরছেন। তিনি আরো জানান, উপজেলা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন আগুনমুখা নদীতে জেগে ওঠা চর কারফারমার, চর নজীর, মুক্তিযোদ্ধারচর সহআগুনমুখা নদীর পাড়ের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার জন্য তারা কাজ করছেন। ইতিমধ্যে বিচ্ছিন্ন ও নদীরপাড়ের লোকজন নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে জোয়ারের সময় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এরফলে মানুষজন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
পাউবো, পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো, আরিফ হোসেন জানান আজকে জোয়ারের সময় নদ-নদীর পানি বিপদসীমার এক ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ কারণে অনেক এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এদিকে গলাচিপার পানপট্টি আগুনমুখা নদীর পাড়ের বেড়ি বাঁধ রক্ষায় সেখানে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে ঘূর্ণিঝড়‘রিমাল’-এর কারণে পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরকে ১০ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলেছে। দ্বীপ-চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুটের অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
এদিকে পটুয়াখালীর নদীবন্দর থেকে ঢাকা-পটুয়াখালী নৌপথের লঞ্চগুলো চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে । পটুয়াখালী নদীবন্দরের ট্রাফিক ইনেসপেক্টর দিনেশ কুমার সাহা জানান, শুধু ঢাকা-পটুয়াখালী নৌপথই নয় জেলারঅভ্যন্তরীন সকল নদীপথে নৌযান চলাচল পরবর্তী নির্দেশ, না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জেলাত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ঘূর্ণিঝড়‘রিমাল’মোকাবেলায় প্রস্তুতি হিসেবে তাদের ৭০৩ টি ঘূর্ণিঝড়আশ্রয় কেন্দ্র এবং ৩৫ টি মুজিব কিল্লা প্রস্তুত রেখেছে। প্রয়োজনে আরো বাড়ানোর প্রস্তুতিও রয়েছে। আজ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ৩৫ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে। ইতিমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে শুকনো খাবার পৌছে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মোকাবেলায় সিপিপি‘র ৮ হাজার ৭৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক মাঠে থাকবেন। দুর্যোগ ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সকল ধরনের প্রস্তুতি তারা নিয়ে রেখেছেন।
এবি/এইচএন