সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি :দরপত্রে অনিয়মের অভিযোগে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলীসহ ৫ কর্মকর্তাকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স প্রোঃ লিঃ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সিরাজগঞ্জের স্বত্বাধিকারী। কৃতকার্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দেয়ায় ১৩ মে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে এ আইনি নোটিশ পাঠান আইনজীবী জিল্লুর রহমান।
এতে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী, চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও),বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি, এলজিইডির পাবনা-বগুড়া প্রকল্প পরিচালক, সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলীকে বিবাদী করা হয়।
নোটিশ সূত্রে জানা যায়, দরপত্রে উত্তীর্ণ হয়েও মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কেন কাজ পাবে না। এলজিইডি ইচ্ছাকৃতভাবে দীর্ঘদিন ধরে অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে বলেও নোটিশে বলা হয়। সুপ্রিম কোর্টের রায় অমান্য করা হয়েছে উল্লেখ করে নোটিশ পাওয়ার ৭ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব চাওয়া হয়। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানানো হয়।
এলজিইডিসহ একাধিক সূত্র বলছে, দরপত্রে মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীম কনস্ট্রাকশন অকৃতকার্য হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির আওতায় না এনে উল্টো অবৈধভাবে কাজ দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এলজিইডির একটি সিন্ডিকেট। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান প্রকৌশলী ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী কবির তালুকদার। অভিযোগ করায় সেই প্রতিষ্ঠানকেই কৌশলে বাদ দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন ঢাকা ও সিরাজগঞ্জের এলজিইডি কর্মকর্তারা।
অনিয়ম নিয়ে গত চার মাস ধরে অভিযোগ করেও কোন সুরাহা না পেয়ে শেষমেশ এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীসহ ৫ কর্মকর্তাকে আইনি নোটিশ পাঠান হয়েছে বলে জানায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
আইনি নোটিশ পাওয়ার ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী আহরাম আলী সত্যতা স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেডের স্বত্ত্বাধিকারী মো. কবির তালুকদার জানান, আমি গতকালও পাবনা -বগুড়া প্রকল্প পরিচালক, সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলীকে মৌখিকভাবে পুনরায় বলেছি। কিন্তু কর্ণপাত করেননি। অনৈতিকভাবে লাভবান হয়ে কৃতকার্য হওয়ার পরও আমার প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেয়ার নানান অপকৌশল চালানো হচ্ছে। বিষয়টা এমন, আমার দরপত্র হাত-পা বেঁধে সমুদ্রে ফেলেছে। এখন বলছে সাঁতরে বাঁচতে। ন্যায়ের পক্ষে আইন-আদালত কতটা কাজ করে-সেটাই দেখার বিষয়।
প্রসঙ্গত, গত ৯ জানুয়ারি তাড়াশ উপজেলার দরপত্রে (আইডি নং ৯০৭২২৪) ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড, মীম কনস্ট্রাকশন ও জিনাত আলী জিন্নাহ নামের তিন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। সিমিলার কাজ না থাকায় দরপত্রে মিম কনস্ট্রাকশন অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। পরে ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেডের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে প্রকল্প পরিচালকের (পাবনা- বগুড়া) কার্যালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। এক পর্যায়ে সেই প্রকল্প পরিচালকের সহায়তায় পুনঃমূল্যায়নের জন্য ফের জেলায় পাঠানো হয়।
পুনঃমূল্যায়নে বিতর্কিত ও দুর্নীতিগ্রস্থ নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম মীম কনস্ট্রাকশনের পক্ষে মতামত দিয়ে স্বাক্ষর করেন। টেন্ডার কমিটির অন্য সদস্যদেরও মীম কনস্ট্রাকশনের পক্ষে মতামত দিয়ে স্বাক্ষর করতে চাপ দেন বলেও জানা যায়। কিন্তু অন্য সদস্যরা নোট অব ডিসেন্ট বা দ্বিমত পোষন করে দরপত্রটি ঢাকা অফিসে পাঠানো হয় বলে জানা যায় । এমন অনৈতিক কার্যক্রম দীর্ঘদিন চলতে দেখে ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী কবির তালুকদার গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান প্রকৌশলী ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন । এরপর বিষয়টি নিয়ে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে একাধিক সংবাদ প্রকাশ হয়।
টালবাহানা করে কাজটির কার্যাদেশ না দিয়ে গত ৩০ এপ্রিল মেসার্স ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স লক হয়ে যায়। হঠাৎ গত ২ মে এই দরপত্রের সময় বাড়ানোর নোটিফিকেশন আসে। যাতে সময় দেওয়া হয় ৮ মে মধ্যে একসেপ্ট করতে হবে। অন্যথায় বাতিল বলে গণ্য হবে। কিন্তু গত ৭ মে সুপ্রিম কোর্টে লক অবমুক্তকরণে রায় হয়। একই তারিখে অবমুক্ত চেয়ে বিপিপিএ বরাবর আবেদন করলেও কৌশলে লকটি দুই দিন পর অর্থাৎ ৯ মে (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় অবমুক্ত করা হয়। ফলে ৮ মে সময় বাড়ানোর জন্য নোটিফিকেশন একসেপ্ট করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
এবি/এইচএন