আল আমিন বিন আমজাদ, ফুলবাড়ী প্রতিনিধি: দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের পাতিগ্রাম মোড়ে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কয়লা উত্তোলনের কারণে পাতিগ্রাম ও পাঁচঘরিয়া সহ কয়েকটি গ্রামের বাসাবাড়ি কম্পনে ফেটে যাওয়ায় ভূমি ও বসতবাড়ি রক্ষা কমিটির বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল সোমবার সকাল ১১টায় পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের পাতিগ্রাম মোড়ে ভূমি ও বসতবাড়ি রক্ষা কমিটির সভাপতি মোঃ মতিয়ার রহমানের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
পাতিগ্রাম ও পাঁচঘরিয়ার প্রায় ৩ হাজার নারী পুরুষ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। বিক্ষোভ শেষে দুপুর ১২টায় পাতিগ্রাম মোড়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে ভূমি ও বসতবাড়ি রক্ষা কমিটির সভাপতি মতিয়ার রহমান বলেন, আমরা ৬ দফা মেনে নেওয়ার জন্য খনি কর্তৃপক্ষকে বারবার তাগাদা দিয়েছি। কিন্তু আমাদের কোন কথা কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিচ্ছেনা। ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নের মধ্যে রয়েছে পাঁচঘরিয়া ও পাতিগ্রামের বাড়িঘরগুলি কয়লা তোলার কারণে ফেটে যাচ্ছে, আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে তা দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে, চলাচলের জন্য প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে, তা দ্রুত পুন:নির্মাণ করতে হবে।
সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে এলার্ট ফান্ড দিতে হবে, ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসীর সাথে সমঝোতা চুক্তি মোতাবেক বেকারদের চাকুরী ও ভূমি অধিগ্রহণ করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। খনি কর্তৃপক্ষ সমঝোতা চুক্তি ভঙ্গ করে বহিরাগতদেরকে চাকুরী দেওয়া বন্ধ করতে হবে, পূর্বের অধিগ্রহণকৃত মসজিদ কবরস্থান গুলোর বিষয়ে জায়গা অধিগ্রহণ করে মসজিদ ও কবরস্থানের জায়গা নির্ধারণ করে দিতে হবে।
পাতিগ্রাম ও পাঁচঘরিয়া গ্রামে বসবাসরত ৪হাজার পরিবারের মাঝে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নে খনি কর্তৃপক্ষ ও পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সংসদ সদস্যকে অবগত করলেও আজ পর্যন্ত কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছেনা। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে আর কতদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ২টি গ্রামে বসবাস করব? এই এলাকার ভূ-গর্ভ থেকে কয়লা তোলার কারণে প্রতিনিয়ত দেবে যাচ্ছে।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কর্মকর্তা কর্মচারীরা লাভবান হলেও এলাকার গ্রাম ২টি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমরা অতি দ্রুত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি আমাদেরকে বাঁচান, তা না হলে এই যন্ত্রণা থেকে মৃত্যু অনেক ভালো।
সমাবেশে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলী বলেন স্কুল কলেজ মাদ্রাসা কবরস্থান রাস্তাঘাট সবই ধ্বংস হয়ে গেছে। বাকি কিছু নেই। কিন্তু আমরা এখান থেকে অসুস্থ রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে যাব, রাস্তার বেহাল অবস্থা থাকায় অ্যাম্বুলেন্স্ও এই গ্রাম ২টিতে আসতে চায় না। তাহলে আপনারা বোঝেন আমরা কিভাবে জীবনযাপন করছি?
পাতিগ্রামের আইয়ুব আলী, পাঁচঘরিয়া গ্রামের মোজাহার আলী, আব্দুল কাদের, মোছাঃ হেলেনা খাতুন সহ একাধিক ব্যক্তি জানান, নলকুপে পানি উঠছে না, এ এলাকায় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে, স্কুল কলেজ মাদ্রাসাগুলিতে যাওয়ার রাস্তা থাকলেও বর্ষাকালে চলাচল করা সম্ভব হয়না। সমস্ত রাস্তা খনির কারণে মাটির নিচে তলিয়ে গেছে। নেই কোন মসজিদ, নামাজ পড়ার ঈদগাহ মাঠ এবং ফুটবল খেলার মাঠসহ সব ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা এর প্রতিকার চাই ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
এই বিষয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ সাইফুল ইসলাম এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
পাতিগ্রামের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে পাতিগ্রাম ও পাঁচঘরিয়ার প্রায় ৩ হাজার নারী-পুরুষ স্কুল কলেজ মাদ্রাসার ছাত্র ছাত্রী স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন।
পরিশেষে সভাপতি বলেন, আমাদের আজকের এই সমাবেশে ৬দফা দাবি মেনে না নিলে আগামীতে কঠোর থেকে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। ঘেরাও করা হবে কয়লা খনি।
এবি/এইচএন