দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক একইসাথে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের অতিপ্রাকৃত দৃশ্য উপভোগে ভিড় জমান দেশের অন্যতম এই পর্যটন কেন্দ্র অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটায়। তবে ভাঙনরোধে সৈকতে ফেলা বালুভর্তি জিওব্যাগের কারণে ভোগান্তি ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পর্যটকরা। একই সাথে সমুদ্র সৈকতটি হারাচ্ছে সৌন্দর্য। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে অন্তত অর্ধশতাধিক পর্যটক আহত হয়েছেন এসব কারণে।
স্থানীয়রা জানান, সৈকতের অব্যাহত ভাঙন ঠেকাতে তিন বছর আগে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়। সেসব ব্যাগ এখন পড়ে আছে এলোমেলোভাবে। কিছু কিছু ব্যাগের বালু সরে যাওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে গর্ত, শ্যাওলায় পিচ্ছিল হওয়ার কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনা।
ঢাকা থেকে সপরিবারে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটক আব্দুল জব্বার জানান, কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই মুগ্ধ করার মতো। সূর্যোদয়ের সময় যখন সোনালি আলো পানিতে ঝিলমিল করে, মনে হয় যেন কোনো ছবির জগতে চলে এসেছি। কিন্তু সৈকতের বর্তমান অবস্থা দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসে এসব জিও ব্যাগের কারনে পড়ে গিয়ে আহত হতে হওয়র ঘটনা খুবই দুঃখজনক। জিও ব্যাগে শ্যাওলা জমে গেছে, আর একটু অসতর্ক হলেই পিছলে পড়ে যাওয়া অনিবার্য।
আরেক পর্যটক আনোয়ারা বেগম জানান, পরিবার নিয়ে এসেছিলাম কুয়াকাটার সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কিন্তু গোসল করতে গিয়ে আমার ছোট ছেলে হঠাৎই পড়ে যায় এক গর্তে। পরে বুঝলাম, ছেঁড়া জিও ব্যাগ থেকে বালু সরে গিয়ে ওই গর্ত তৈরি হয়েছে। জোয়ারের সময় এগুলো পানির নিচে ঢাকা পড়ে যায়, তাই আগেভাগে বুঝে ওঠা যায় না।
বরিশাল থেকে আগত পর্যটক আবুল হাসেম জানান, সাগরের অব্যাহত ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নিয়ে জিও ব্যাগ ফেলে বরং সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট করা হচ্ছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পর্যটকরা। এ কারণে কুয়াকাটায় পর্যটক আগমনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
পর্যটন ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, কুয়াকাটা কেবল আমাদের জীবিকার উৎস নয়, আমাদের অহঙ্কার। প্রতিদিন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এখানে আসেন। কিন্তু সৈকতের যেসব জায়গায় জিও ব্যাগ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে, তা এখন বিপদের কারণ। অব্যবস্থাপনার কারণে কুয়াকাটা তার মোহনীয় রূপ হারাতে বসেছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে কুয়াকাটার সুনাম ক্ষুন্ন হবে, আর পর্যটকরাও আসতে নিরুৎসাহিত হবেন।
তবে স্থানীয় প্রশাসন এসব বিষয়ে সতর্ক ও সচেতন আছে বলে জানিয়েছেন কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পুরনো জিও ব্যাগ ও স্থাপনা অপসারণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সৈকতের অব্যাহত ভাঙ্গনরোধে শীঘ্রই সদ্য নির্মিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের জন্য ব্লক স্থাপন করা হবে। এসব ব্লক স্থাপনের পরই সৈকত থেকে এসব জিওব্যাগ অপসারন করা হবে।
আমারবাঙলা/ইউকে