সংগৃহীত
সারাদেশ

পটুয়াখালীতে সৌদির সাম্মামের বাণিজ্যিক চাষ

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

রোদের মাঝে ঝলমল করছে মাঠজুড়ে হলুদ রঙের এক ফল। প্রথম দেখায় মনে হতে পারে আরব দেশের কোনো মরুভূমির দৃশ্য। অথচ এ দৃশ্য পটুয়াখালীর বল্লভপুর গ্রামের। যেখানে সৌদি আরবের জনপ্রিয় ও সুস্বাদু সাম্মাম ফলের বাণিজ্যিক চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কামরুজ্জামান জুয়েল নামে এক কৃষি উদ্যোক্তা।

পটুয়াখালী সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামের বাসিন্দা কামরুজ্জামান জুয়েল। রুপালী ব্যাংকের জেলা শাখায় সহকারী মহাব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত থাকার পাশাপাশি কৃষিকাজকে বেছে নিয়েছেন স্বপ্ন পূরণের হাতিয়ার হিসেবে। সাত বছর ধরে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বর্তমানে তিনি ‘হাওলাদার এগ্রো’ খামারে চাষ করছেন তিন ধরনের সাম্মাম ফল। এর মধ্যে রয়েছে মাস্ক মেলন, রক মেলন ও হানি ডিউ মেলন।

পাঁচটি প্লটে ৪৬ শতক জমিতে প্রায় দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করে গড়ে তোলা এই বাগানে বর্তমানে চলছে ফল বিক্রি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে এই ফল। পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২০ টাকা দরে।

এখানে সাম্মাম চাষে ব্যবহার করা হয়েছে নানা আধুনিক পদ্ধতি। পোকামাকড় থেকে ফসল রক্ষায় ব্যবহার করা হয়েছে সেক্স ফেরামোন ফাঁদ ও হলুদ আঠালো ফাঁদ। আর অতিবৃষ্টি থেকে গাছের গোড়া রক্ষায় ব্যবহার করা হয়েছে মালচিং পেপার। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সুফলে ফলনও এসেছে চমৎকার।

স্বাদে, ঘ্রাণে ও রঙে আকর্ষণীয় হওয়ায় শহরের মানুষও ছুটে যাচ্ছেন তার খামার দেখতে ও ফল কিনতে। খামার পরিদর্শনে আসা ভবানী শংকর সিংহ বলেন, এমন ফল বাংলাদেশের মাটিতে চাষ হচ্ছে, ভাবতেই অবাক লাগছে। স্বাদে ও ঘ্রাণে দুর্দান্ত, দেখতে যেন সোনালি মুকুট।

খুচরা ক্রেতা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ফলের কথা শুনে অতি আগ্রহ থেকেই এখানে এসেছিলাম। এখন তো প্রতি বছর আসব ইনশাআল্লাহ। এত সুন্দর স্বাদ খুব কম ফলে পাওয়া যায়, এ ছাড়া ফলের দাম তুলনামূলকভাবে অনেক কম।

কামরুজ্জামান জুয়েল বলেন, কৃষির প্রতি ভালোবাসা ছোট থেকেই। আর ভালোবাসার জায়গা থেকেই ব্যাংকিং পেশার পাশাপাশি শুরু করি কৃষিকাজ। তবে শুরু সহজ ছিল না। দুই-তিনবার বড় ক্ষতির মুখে পড়েছিলাম কিন্তু হাল ছাড়িনি। প্রতিটি ভুল থেকে শিখেছি, নিজেকে প্রস্তুত করেছি নতুনভাবে। ধৈর্য, পরিশ্রম আর সঠিক পরিকল্পনা এই তিনটিই আমাকে আজকের জায়গায় এনেছে।

তিনি আরো বলেন, অনেকেই মনে করেন বিদেশি ফল আমাদের দেশে চাষ সম্ভব নয়। আমি সেই ধারণা ভাঙতে চেয়েছি। প্রযুক্তি আর সাহস কাজে লাগাতে পারলে সবই সম্ভব। এখন মানুষ আমার খামারে আসছে, ফল কিনছে, আগ্রহ দেখাচ্ছে এটিই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। যদি কেউ সাম্মাম চাষে আগ্রহ দেখায়, আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে।

হাওলাদার এগ্রোতে সাম্মাম ছাড়াও ছাগল, গরু, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, আম ও ড্রাগন ফলের আবাদ হচ্ছে। এতে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে চার থেকে পাঁচ জনের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সাম্মাম ফল চাষ আমাদের দেশে নতুন হলেও এটি সম্ভব। সেটি প্রমাণ করেছেন জুয়েল সাহেব। তার খামার আধুনিক কৃষিপদ্ধতির দারুণ একটি উদাহরণ। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে তাকে সব ধরনের কারিগরি সহায়তা দিচ্ছি এবং চাই আরও উদ্যোক্তা এমন কাজে এগিয়ে আসুক।

কামরুজ্জামান জুয়েলের এ সাফল্য গোটা পটুয়াখালীকে গর্বিত করছে। কৃষি সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য এটি হতে পারে এক অনুপ্রেরণার গল্প।

আমারবাঙলা/এমআরইউ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

দু’পক্ষের সংঘর্ষে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিহত

রাজধানীর বনানীতে বেসরকারি প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যা...

বিশ্বের সবচেয়ে দামি ‘সূর্যডিম’ আমের চাষ যশোরে

জাপানের বিখ্যাত সূর্যডিম (মিয়াজাকি) আমের চাষ হয়েছে...

ইস্টার সানডে আজ

খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব &l...

গাজাবাসীর প্রতি ফের সমর্থন জানালেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি

হলিউড অভিনেত্রী ও মানবাধিকারকর্মী অ্যাঞ্জেলিনা জোল...

মারা গেলেন পোপ ফ্রান্সিস

পোপ ফ্রান্সিস মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের গুরুত...

লন্ডনে আ.লীগ নেতার ছেলের বিয়েতে একসঙ্গে সাবেক চার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী

লন্ডনে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকের ছেলে...

আদালতে ভেংচি কেটে শাজাহান খানের হাসাহাসি

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান আদালতে ভেংচি কেটে হা...

ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতি বিষয়ক হাইকোর্টের রায় স্থগিত

আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের প...

‘আমার চাওয়া অভিনয় রাষ্ট্রীয় পেশা হিসেবে স্বীকৃতি পাক’

অভিনয়শিল্পী সংঘের ত্রিবার্ষিক মেয়াদের নির্বাচনে গত শনিবার সভাপতি পদে বিজয়ী হয়...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা