চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদীতে এ বছর শুরু হয়েছে রাবার ড্যামের মাধ্যমে পানি ধরে রাখার কর্যক্রম। এতে রাবার ড্যামের উজানে পানি থাকলেও নদীর ভাটি অঞ্চল একেবারেই পানিশূণ্য হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, খোদ পানি উন্নয়ন বোর্ড রাবার ড্যাম নির্মাণ করে ভাটির ২৬ কিলোমিটার নদী হত্যা করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ অংশে আন্তঃসীমান্ত নদী মহানন্দার দৈর্ঘ্য ৯৫ কিলোমিটার। প্রবেশমুখ থেকে মহানন্দা নদীর ভাটিতে ৭০ কিলোমিটার দূরে নির্মাণ করা হয় রাবার ড্যাম। রাবার ড্যামটির অবস্থান চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের রেহাইচর এলাকায়। ২০২১ সালে এই রাবার ড্যাম নির্মাণের কাজ শুরু হয়। চলতি মৌসুমেই প্রথমবারের মতো রাবার ফুলিয়ে পানি ধরে রাখার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতেই ভাটির বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে পানিশূণ্য হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাবার ড্যাম থেকে ভাটির ২৬ কিলোমিটার নদীর বেশ কয়েকটি স্থানে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ওই অঞ্চলের মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে নদীতে মাছ ধরার পেশা বারঘোরিয়া এলাকার আবুল কালাম আজাদের। নদীর ভাটিতে মাছ ধরার সময় রাবার ড্যাম দেখিয়ে তিনি বললেন, সব পানি তো আটকে আছে ওখানে। পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। একারণে এদিকে নদী শুকিয়ে গেছে। প্রায় ৪৮ বছর বয়সী আবুল কালাম আজাদ আগে কখনোই মহানন্দা নদীর এমন শুকিয়ে যাওয়া দেখেন নি বলে মন্তব্য করেন।
বারঘোরিয়া বাজারপাড়ার তুলশি হালদার বলেন, অন্য বছরের চেয়ে এবার নদী (ভাটি অংশ) শুকিয়ে গেছে বেশি। সামনে তো আরও খরা আছে। খরায় নদীর কোন অস্তিত্বই থাকবে না। যারা নদীর উপর নির্ভর করে কাজ-কর্ম করেন তারা খুব সমস্যায় পড়বেন। চামগ্রামের রশিদুল ইসলাম বলেন, রাবার ড্যামের কারণে ভাটির দিকে পানি আসছে না একেবারেই। যে কারণে নদী শুকিয়ে গেছে। শুধু নদীই শুকিয়ে যায়নি এ অঞ্চলের মানুষ ভূগর্ভস্ত পানিও পাচ্ছেন না ঠিকমতো।
আকুন্দবাড়িয়া এলাকার আবু বাক্কার বলেন, রাবার ড্যাম দিয়ে মহানন্দা নদীকেই হত্যা করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। নদীর ভাটি অঞ্চলের কথা একেবারেই না ভেবে উজানে পানি ধরে রাখার জন্য এই রাবার ড্যাম করা হয়েছে। রেহাইচর এলাকার রাশেদুল ইসলাম রানা বলেন, নদীর প্রাকৃতিক গতিপথ বাধা দিলে কতটা সাইড ইফেক্ট তা প্রকৃতিই বলে দেয়। রাবার ড্যামের ভাটি অঞ্চলের মানুষ পানির অভাবে খুব ভুগবে বলেই মনে হচ্ছে আমাদের।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছেন, মহানন্দা নদীর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু সংলগ্ন এলাকায় ৩৯৩ মিটার দীর্ঘ রাবার ড্যামের কাজ শেষ হয়েছে চলতি বছরেই। শুরুতে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৫৫ কোটি ৪৬ লাখ ৩৫ হাজার ১৯৫ টাকা। তবে পরবর্তীতে ব্যয় বাড়ানো হয় আরও ৬৯ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় রাবার ড্যাম নির্মাণের পাশাপাশি নদী খনন ও ড্যাম সংলগ্ন এলাকায় একটি সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব বলেন, রাবার ড্যাম নির্মাণের ফলে মহানন্দা নদীর উজানে অন্যান্য বছরের তুলনায় পাঁচ থেকে ছয় ফিট পানি বেশি আছে। এই পানি কৃষিকাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যান্য বছর যে সব গভীর নলকূপে পানি পাওয়া যেত না, সেসব গভীর নলকূপে এবার পানি পাওয়া যাচ্ছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ওই অঞ্চলের কৃষিতে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। অন্যদিকে ভাটি অঞ্চলে নদী শুকিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রত্যেকটা প্রকল্পেরই মেরিটস-ডিমেরিটস থাকে। আমাদের একটা প্ল্যান আছে, সেটা হচ্ছে পদ্মা নদীর পানি ব্যাক ওয়াটার ফ্লো দিয়ে মহানন্দা নদীতে সংরক্ষণ করা। এ জন্য নদী খননেরও প্রয়োজন হবে।
আমারবাঙলা/ইউকে