পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ‘রক্ত ফল’ ভালো ফলে। পাহাড়িদের কাছে ফলটি ব্যাপক চাহিদা থাকায় অনেককে বাণিজ্যিকভাবে এ ফল আবাদের উদ্যোগ নিয়েছেন।
কাঁচা অবস্থায় দেখতে অনেকটা আঙুরের মতো মনে হলেও পাকলে একেবারে লাল টকটকে। কাঁচা অবস্থায় এ ফলটি খাওয়া যায় না, তবে পেকে লাল হওয়ার পরই খাওয়া শুরু হয়।
পাকা ফলটি খোসা ছাড়ানোর পর ভেতরের বিচিসহ অংশটি দেখতে অনেকটা জমাট বাধা রক্তের মতো। চুষে খাওয়ার সময় শরীরের যেখানেই স্পর্শ হবে সেখানেই লাল হয়ে যায়। দেখে মনে হবে শরীরের কোন অংশ কেটে গেছে। তাই ফলটিকে ‘রক্ত ফল’ বলা হয়।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এ ফলটি নিয়ে এখনো কোনো গবেষণা করা হয়নি। পার্বত্য তিন জেলার বিভিন্ন এলাকায় এ ফলটি দেখা যায়। বাজারেও ভালো চাহিদা রয়েছে।
বুনো এই ফলটিকে ইংরেজিতে ব্লাড ফ্রুট বা বাংলায় রক্ত ফল বলে। তবে পাহাড়িদের কাছে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। চাকমা ভাষায় ‘রসকো’, ত্রিপুরা ভাষায় ‘থাইটাক’ এবং মারমা ভাষায় ‘লস্কর’ নামে পরিচিত। খেতে টক ও মিষ্টি হওয়ায় বেশ জনপ্রিয় এই ফলটি। বিশেষ করে ছোট ছেলে-মেয়েদের খুব প্রিয় এই ফলটি।
গাছটি বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। কাণ্ড একেবারে নরম। অন্য গাছের উপর ভর করে উপরে উঠে। একটি কাষ্টযুক্ত গাছের চারপাশ দখল করে শাখাপ্রশাখা বিস্তৃত হয় রক্তফলের লতার। ফ্রেব্রুয়ারি থেকে থোকায় থোকায় ফুল দেওয়া শুরু হয় এবং এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়।
পেকে লাল হওয়ার পরই খাওয়ার উপযোগী হয় ফলটি। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক গাছে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ হাজার ফল ধরে। বীজ এবং কলম উভয় পদ্ধতিতে এ গাছের বংশ বিস্তার করা যায়।
নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের কৃষ্ণমাছড়া এলাকার সুব্রত বিকাশ চাকমা তার বাড়ির পাশে এ ফলের আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, তার এই ফলের লতাটির বয়স ১৮ বছরের বেশি হবে। বীজ থেকে লতাটি লাগানোর ছয় থেকে সাত বছরের মধ্যে ফল এসেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার টাকার উপর ফল বিক্রি করেছেন তিনি।
প্রতি কেজি ৩০০ হতে ৪০০ টাকা দরে এ বছর আরো ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মতো ফল বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন সুব্রত বিকাশ।
একই এলাকার ভরত ধন চাকমা বলেন, আমি কয়েকটি রসকো ফল খেয়ে বিচিগুলো একটা গর্তে রোপণ করেছি। এরপর বিচি থেকে লতা বের হয়ে বড় হতে হতে প্রায় আট বছর পর ফল ধরেছে। এতে কোনো পরিচর্যা করতে হয় না। তবে পানি দিলে ফলগুলো বড় হয়, আবার পানি না দিলেও চলে। আমার এ বছর মণ খানেকের মতো ফল এসেছে। এখনো পুরোপুরি পাকে নাই, পাকলে বেচা-বিক্রি শুরু করব।
কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, পুষ্টিগুণ হিসেবে এই ফলে ফাইবার ছাড়াও ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-৬ রয়েছে। পাহাড়িরা এই ফলের লতা জন্ডিস ও চুলকানির ওষুধের কাজে ব্যবহার করেন। এ ছাড়া এই ফলটি খেলে রক্তশূন্যতা দূর হয় বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।
আমারবাঙলা/এমআরইউ