সুনির্দিষ্ট কোন মামলা ছাড়াই এক গৃহবধূকে (২৫) আটক করে ধর্ষণচেষ্টা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে রাজবাড়ীর পাংশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিমাদ্রি হাওলাদারসহ তিন জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে ভুক্তভোগী গৃহবধু।
রবিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে রাজবাড়ীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করেন। বিচারক শেখ মফিজুর রহমান মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ফরিদপুর কার্যালয়ের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদী গৃহবধূর বাড়ি পাংশা উপজেলার মাছপাড়া ইউনিয়নের লক্ষণদিয়া গ্রামে। মামলার এক নম্বর আসামী হলেন হিমাদ্রি হাওলাদার, দুই নম্বর আসামী পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের কাচারীপাড়া গ্রামের এতেম শেখের ছেলে আরিফ হোসেন আর তিন নম্বর আসামী পাংশা থানার ওসি।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, গত ২ এপ্রিল রাত ১১ টার দিকে পাংশা থানার ওসি মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের নির্দেশে এসআই হিমাদ্রি হাওলাদার ও সহযোগী আরিফ হোসেন ওই গৃহবধুর বাড়িতে যান। এ সময় এসআই হিমাদ্রি ও সহযোগী আরিফ হোসেন ওই গৃহবধুর বাড়ির বিভিন্ন কক্ষে তার স্বামীকে খোঁজার অজুহাতে তল্লাশি চালান। এক পর্যায়ে গৃহবধুর স্বামীকে না পেয়ে তারা গৃহবধুকে জাপটে ধরে যৌনাঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেন ও ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এরপর তারা ওই গৃহবধূকে টেনে হিঁচড়ে ঘর থেকে বের করার সময় তিনি ওয়ারেন্ট দেখতে চান। এ সময় তারা জানান ওসির নির্দেশে ওয়ারেন্ট ছাড়াই তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। পরে তাকে থানায় এনে শারীরিক, মানসিক ও দৈহিক নির্যাতন চালানো হয়।
মামলায় আরো অভিযোগ করা হয়, স্বামীসহ স্বজনরা ওই গৃহবধূকে ছাড়িয়ে আনার জন্য থানায় গেলে ওসি, এসআই ও সহযোগী আরিফ তাদের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। এক পর্যায়ে ২০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে মুচলেকার মাধ্যমে গৃহবধূকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে তাদের দাবি করা মোটা অংকের টাকা না দিলে গৃহবধুর স্বামীকে গ্রেফতার করে অস্ত্র ও মাদক মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়া হয়।
এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর অভিযোগও করা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
রাজবাড়ীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট জাহিদ উদ্দিন মোল্লা বলেন, ট্রাইব্যুনালের বিচারক গৃহবধূর দায়ের করা মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ফরিদপুর কার্যালয়ের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
পাংশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, এক তরুণীকে অপহরণের অভিযোগে পাংশা থানায় মামলা হয়। মামলার আসামী ছিল এই মামলার বাদীর ভাস্তে। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিল এসআই হিমাদ্রী। আমরা জানতে পারি উক্ত মামলার বাদীর হেফাজতে তরুণীকে রেখেছে। এজন্য তাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তরুণীকে আমরা উদ্ধার করি। তারপরই আজ আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করছে। মামলার দুই নম্বর আসামী অপহরণ হওয়া তরুণীর মামা। মামলাটিতে কোন পক্ষের ইন্ধনে রয়েছে।
আমারবাঙলা/ইউকে