নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ অমর একুশে বইমেলা-২০২৪’র সমাপনী দিন। শেষ দিনে বেলা ১১টায় মেলা শুরু হয়ে চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বইমেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বইমেলার জন্য বড় আশীর্বাদ হয়ে এসেছে মেট্রোরেল। ফলে অন্য বছরের তুলনায় এবার মেলায় বেড়েছে মানুষের সমাগম।
মেট্রারেলের কল্যাণে রাজধানীর উত্তরাসহ নানা জায়গায় থেকে মেলায় মানুষ এসেছে। অন্য সময় যানজটের ভয়ের কারণে মানুষ মেলায় আসতো না সাধারণত। ফলে এবার মেলায় অন্যান্য বছরের তুলনায় বিক্রি কয়েকগুণ বেড়েছে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বইমেলা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অনুমোদনক্রমে মেলার সময় আরও ২ দিন বাড়ানো হয়।
লিপ ইয়ারের কারণে এবার ফেব্রুয়ারি হয় ২৯ দিনের। ২৯তম দিনটি বৃহস্পতিবার হওয়ায় প্রকাশকদের দাবি ছিল মেলার সময় বাড়িয়ে শুক্রবার-শনিবার পর্যন্ত নেয়া।
তবে সময় বাড়িয়েও সে অনুযায়ী বিক্রি খুব কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা। তারা মনে করছেন, বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড পাঠকদের মনে দাগ কেটেছে। তাই মেলায় ভিড়-বিক্রি কম।
গতকাল শুক্রবার হলেও মেলায় ভিড় কম দেখা গেছে। সেই তুলনায় আগের দিন বৃহস্পতিবার মেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক আদিত্য অন্তর বলেন, শুরু থেকেই প্রকাশক ও পাঠকদের প্রত্যাশা ছিল যেন সময় ২ দিন বাড়ানো হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সময় বৃদ্ধি করেছে। এটি আমাদের জন্য ভালো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ বছর বইয়ের বেচাকেনা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। কারণ গত কয়েক বছর ধরেই অর্থাৎ করোনার পর থেকে বইমেলা ওইভাবে জমে উঠেনি। সেই বিবেচনায় এ বছর শুরু থেকেই বইমেলা জমজমাট।
বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকার কারণে শুরু থেকেই পাঠক ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কেউ যদি বলে থাকেন, এ বছর বইমেলায় বিক্রি কম হয়েছে, তাহলে আমি বলব তাদের বিক্রি করার মতো বইয়ের অভাব রয়েছে। অন্যান্য বছর যেখানে মেলা শুরুর এক সপ্তাহ বা দশ দিন পর বিক্রি শুরু হতো সেখানে এ বছর শুরু থেকেই বিক্রি হয়েছে।
তবে অন্বেষা প্রকাশনীর প্রকাশক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, শুক্রবার অনুযায়ী পাঠক ও ক্রেতা বেশি হওয়ার কথা ছিল। সে রকম প্রত্যাশা করে আমরা মেলা ২ দিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলাম।
কিন্তু বৃহস্পতিবার বেইলি রোডের মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনেকের মনে প্রভাব বিস্তার করেছে। কারণ এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে অনেকেই বাসা থেকে বের হতে চান না। অনেকের আবার মন খারাপ থাকে। সেজন্য হয়তো মেলায় পাঠকের সংখ্যায় একটু প্রভাব পড়েছে।
তাম্রলিপি প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি কাউসার হোসেন বলেন, বেচাবিক্রি শুক্র-শনিবারের মতো হচ্ছেই না। নরমাল দিনের মতোও হচ্ছে না। অনেকেই হয়তো জানেন না মেলা ২ দিন বেড়েছে। এটাও হতে পারে, যারা বই কেনার তারা ২৯ তারিখের মধ্যেই কিনে ফেলেছেন।
ঐতিহ্য প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি হাসেম আলী বলেন, বেচাবিক্রি নেই বললেই চলে। মেলার ১৫-১৬তম দিন থেকে যদি মেলা বাড়ার ঘোষণা আসত হয়তো, তাহলে প্রতি শুক্র-শনিবারের মতোই আজকে বিক্রি হতো।
আজ বিকেল ৫ টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা ভাষণ দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৪’-এর সদস্য-সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ।
এ অনুষ্ঠানে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার ও শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হবে।
এবি/এইচএন