ক্রীড়া ডেস্ক: সাকিব-মুশফিকের জোড়া অর্ধশতকের পরও পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারেনি ব্যাটিং ধসে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর এবার পাকিস্তানের বিপক্ষেও ২০০ স্পর্শ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ৩৮.৪ ওভারে মাত্র ১৯৩ রানে অলআউট হয়েছে টিম টাইগার।
বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানের লাহোরে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে কোনো রান যোগ করার আগেই উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। সেখান থেকে আর বের হতে পারেনি।
সাকিব-মুশফিক চেষ্টা করেছিলেন, তবে বাকিদের ব্যর্থতায় তা আর পূর্ণতা পায়নি। সাকিব ৫৭ বলে ৫৩ ও মুশফিক ৮৭ বলে ৬৪ রান করেন।
অপরদিকে এদিন আরো একবার জ্বলে উঠে পাকিস্তানের হারিস রউফ। বাংলাদেশের ইনিংসের কোমর ভেঙে দিয়ে মাত্র ১৯ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন। ৩ উইকেট নিয়েছেন নাসিম শাহ। বাংলাদেশ দল ৩ রান তুলতেই শেষ ৪ উইকেট হারায়।
লাহোরে শাহিন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফদের তোপে ৪৭ রান তুলতেই ৪ উইকেট চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে দলের হাল ধরেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহিম।
তারা প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে বাংলাদেশকে লড়াকু পুঁজি গড়ার পথ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বাকিরা চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়ে বড় শট খেলতে গিয়ে একের পর এক উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন। টাইগাররা শেষের ৯ বলে ৩ রান তুলতে ৪ উইকেট হারায়।
ফলে ঘুরে দাঁড়ানোর পরও বাংলাদেশের ইনিংস ৩৮.৪ ওভারে ১৯৩ রানেই গুটিয়ে গেলো। অর্থাৎ এশিয়া কাপের সুপার ফোরপর্বে প্রথম ম্যাচ জিততে পাকিস্তানকে করতে হবে ১৯৪।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫৪তম হাফসেঞ্চুরির দেখা পান সাকিব। কিন্তু হাফসেঞ্চুরির পর রান বাড়াতে গিয়ে ভুল করে বসেন টাইগার অধিনায়ক। ফাহিম আশরাফকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপব্যাকওয়ার্ড স্কয়ারলেগ বাউন্ডারিতে ক্যাচ হন সাকিব। ৫৭ বলে তার ৫৩ রানের ইনিংসে ছিল ৭টি চারের মার।
সাকিবের আউটে ভাঙে মুশফিককে নিয়ে গড়া ১২০ বলে ১০০ রানের জুটি। এর পরপরই মুশফিক করেন ক্যারিয়ারের ৪৬তম ওয়ানডে ফিফটি। তিনি দেখেশুনে খেলছিলেন, কিন্তু বাকিদের মধ্যে দায়িত্বজ্ঞানের লেশও ছিল না।
দারুণ ছক্কা হাঁকিয়ে নজরে আসেন শামীম পাটোয়ারী। কিন্তু দলের বিপদে এই হাল ধরার বদলে আবারও ওপরে তুলে মারতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন (২৩ বলে ১৬)। এরপর মুশফিক ৮৭ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৬৪ করে হন হারিস রউফের শিকার।
একটা প্রান্ত ধরে খেলার চেষ্টাও করেননি আফিফ হোসেন। নাসিম শাহকে পুল করতে গিয়ে বল তুলে দেন আকাশে (১১ বলে ১২)। পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারলেও যেখানে আড়াইশর বেশি স্কোর গড়া সম্ভব ছিল না, সেখানে যাচ্ছেতাই ব্যাটিং প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের ইনিংস ১৯৩ রানেই থামে।
হারিস রউফ ১৯ রানে ৪টি আর নাসিম শাহ ৩৪ রানে তিনটি উইকেট নেন।
মেহেদী হাসান মিরাজ আগের ম্যাচে ইনিংস ওপেন করতে নেমে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন। যে কারণে লাহোরে পাকিস্তানের বিপক্ষেও মিরাজকে দিয়ে ইনিংস ওপেন করানো হলো। তার ওপর আফগানদের বিপক্ষে তিনি নাঈম শেখের সঙ্গে ওপেনিং জুটিতেই প্রায় ১০ ওভার খেলেছিলেন।
সব মিলিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট জুটি ভাঙতে চাননি এবং শাহিন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহদের বিপক্ষে মিরাজকে দিয়েই ইনিংস ওপেন করালো টিম ম্যানেজমেন্ট।
কিন্তু মেহেদী মিরাজ পাকিস্তানের বিপক্ষে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের হয়ে আর ক্লিক করতে পারেননি। শাহিন শাহ আফ্রিদির বিপক্ষে প্রথম ওভার খেলেছেন নাঈম শেখ। যদিও কোনো রান করতে পারেননি।
নাসিম শাহ দ্বিতীয় ওভার বোলিং করতে আসেন। তার প্রথম বল মোকাবিলা করেন মিরাজ এবং প্রথম বল মোকাবিলা করতে গিয়েই ক্যাচ তুলে দেন তিনি (১ বলে ০)।
নাসিম শাহ যে বলটি করেছিলেন, সেটিতে সাধারণত উইকেট আসে না। কিন্তু শর্ট লেন্থের বলটি ছিলেন পা বরাবর। মিরাজ ফ্লিক করতে গিয়ে ব্যাটের ওপরের কানায় লাগান। স্কয়ার লেগে দাঁড়িয়েই ক্যাচটি ধরেন ফাখর জামান।
এরপর চোখ ধাঁধানো ৪টি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন লিটন দাস। তবে এই ব্যাটার সেট হয়ে ভুল করার অভ্যাস থেকে বের হতে পারেননি। শাহিন আফ্রিদির বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন। ১৩ বলে করেন ১৬ রান।
নাইম শেখও সেট হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু হারিস রউফের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে বল সোজা আকাশে তুলে দেন এই বাঁহাতি ওপেনার। ২৫ বলে ৪ বাউন্ডারিতে নাইমের ব্যাট থেকে আসে ২০ রান।
তাওহিদ হৃদয় আরও একবার ব্যর্থ। রউফের ১৪৫ গতির বলে যেন চোখেই দেখেননি। বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন এই তরুণ (৯ বলে ২)।
এবি/এইচএন