নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ১৫৬টি উপজেলায় শুরু হয়েছে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। মঙ্গলবার (২১ মে) সকাল ৮টায় শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ একযোগে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
এর আগে গত ৮ মে প্রথম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই ভোটে ইসির প্রত্যাশা অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি হয়নি। মোট ভোট পড়েছিল মাত্র ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। তবে দ্বিতীয় ধাপের ভোটে কেন্দ্রে পর্যাপ্ত ভোটার উপস্থিতি হবে বলে প্রত্যাশা করছে ইসি। সেজন্য কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি বাড়াতে এবং নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠু করতে সব ধরনের প্রস্তুতিও নিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র বিবেচনায় পর্যাপ্ত এবং কোথাও অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের সুপারিশ করেছে ইসি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠিও পাঠানো হয়েছে। সে হিসাবে সাধারণ কেন্দ্রে ১৭ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮-১৯ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া দুর্গম এলাকায় সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২০-২১ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
আবার উপজেলার আয়তন, ভোটার সংখ্যা ও ভোটকেন্দ্রের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে উপজেলায় ২-৪ প্লাটুন বিজিবি সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। একইসঙ্গে নিরাপত্তা বিবেচনায় ১৬ উপজেলায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, ১৫৬ উপজেলায় মোবাইল স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবি মোতায়েন থাকবে ৪৫৮ প্লাটুন। ভোটকেন্দ্রে পুলিশ মোতায়েন থাকবে ৪৭ হাজার ৮২৯ জন। স্ট্রাইকিং ও মোবাইল টিম হিসেবে পুলিশ থাকবে ১৯ হাজার ৫৭ জন। এলিট ফোর্স র্যাব থাকবে ২ হাজার ৭৬৮ জন ও আনসার সদস্য থাকবে ১ লাখ ৯৩ হাজার ২৮৭ জন।
ভোটের আগে-পরে নির্বাচনী আচরণবিধি মানাতে ইসির পক্ষ থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট। তারা কাজ শুরু করেছেন ভোট গ্রহণের তিন দিন আগেই। আজ ভোটের দিন এবং আগামীকালও প্রতি তিন ইউনিয়নে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। একইসঙ্গে ভোটগ্রহণের দু’দিন পর পর্যন্ত প্রতি উপজেলায় একজন করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন।
ইসি সূত্রে, ১৫৬ উপজেলায় মোট কেন্দ্রের সংখ্যা রয়েছে ১৩ হাজার ১৬টি। ভোট কক্ষ রয়েছে ৯১ হাজার ৫৮৯। অস্থায়ী ভোট কক্ষ রয়েছে আট হাজার ৮৪১টি। দ্বিতীয় ধাপের এ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ কোটি ৫২ লাখ ৪ হাজার ৭৪৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫ হাজার ৪৬৪ জন, নারী ভোটার রয়েছেন ১ কোটি ৭২ লাখ ৯৯ হাজার ৪৭ জন এবং হিজড়া ভোটার রয়েছেন ২৩৭ জন।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপের ১৫৬ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে তিন পদে এক হাজার ৮২৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬০৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬৯৩ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৯৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আবার তিন পদে ২২ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এরই মধ্যে বিজয়ী হয়েছেন। দুটি উপজেলায় তিন পদে সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় লাভ করেছেন।
আজকের ১৫৬ উপজেলার ভোটে মোট ২৪টি উপজেলায় নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। বাকি ১৩২ উপজেলায় ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। যেসব এলাকায় ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা ওইসব এলাকায় একটি করে কারিগরি টিম গঠন করেছে ইসি।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সহকারী পরিচালক (বৈধ এবং সঠিকতা যাচাইকরণ) মুহা. সরওয়ার হোসেন জানান, ২৪টি উপজেলার ইভিএম মেশিনের কার্যক্রম নির্বাচন ভবনের ‘ইভিএম কন্ট্রোল রুম’ থেকে পরিচালনা করা হবে। ভোটে ইভিএমের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা নির্বাচন অফিসার, উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, মোবাইল কারিগরি টিম এবং ভোটগ্রহণকারী কারিগরি টিমের সঙ্গে ‘ইভিএম কন্ট্রোল রুম’ থেকে সার্বক্ষণিক সমন্বয় করা হবে। সেজন্য আইডিইএ প্রকল্প (পর্যায়-২) থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের ২৪ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট কাস্টিং তথ্য দুই ঘণ্টা পরপর ঢাকায় পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ভোট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের (প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার) মোবাইল অ্যাপস বা এসএমএসের মাধ্যমে ২ ঘণ্টা পরপর ভোট কেন্দ্রের কাস্টিং ভোটের তথ্য পাঠাতে হবে।
প্রথম ধাপের চেয়েও দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ আরও সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর। তিনি বলেন, বর্তমান কমিশনের সময়ে সবগুলো ভোটই শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ হয়েছে। ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে ইসি (নির্বাচন কমিশন) উদ্বিগ্ন নয়। ভোট পড়লেই খুশি ইসি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ ও প্রশাসন অত্যন্ত সতর্ক রয়েছে। আমরা আশা করি, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন প্রথম ধাপের চেয়েও সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে। একইসঙ্গে ভোটার উপস্থিতিও আগের চেয়ে বাড়বে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
দেশের ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে চার ধাপে ৪৭৬টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে কিছু উপজেলায় তফসিল ঘোষণার পরে মামলা জটিলতা ও বৈধ প্রার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। আর বাকি ১৯টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচনের সময় এখনো হয়নি। তবে পরবর্তী সময়ে বাকি উপজেলাগুলোর ভোটের আয়োজন করা হবে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
উল্লেখ্য, ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ৮ মে। আর আজ দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬টি উপজেলার ভোটগ্রহণ চলছে। এরপর তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলায় আগামী ২৯ মে এবং চতুর্থ ধাপে ৫৫টি উপজেলায় আগামী ৫ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২২টি, দ্বিতীয় ধাপে ২৪টি, তৃতীয় ধাপে ২১টি ও চতুর্থ ধাপে ২টি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইলেকশন কমিশন (ইসি)।
এবি/এইচএন