লেবাননে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর তিনি এ ঘোষণা দেন। দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় যুদ্ধের পর যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হয়েছে তারা। প্রাথমিক অবস্থায় এ চুক্তির মেয়াদ থাকবে ৬০ দিন। পরবর্তীতে এটি আবারো বৃদ্ধি করা হবে।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন নেতানিয়াহু। এসময় চুক্তির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, উত্তর ইসরায়েলের বাসিন্দারা এখন তাদের বাড়ি ফিরে যাবেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, যুদ্ধবিরতির এই চুক্তি এখন ইসরায়েলের পূর্ণ মন্ত্রিসভার সামনে যাবে। যার অনুমোদন হবে কেবলমাত্র একটি আনুষ্ঠানিকতা।
নেতানিয়াহু বলেছেন, তার মন্ত্রিসভা লেবাননে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন করবে। একই সঙ্গে তিনি জানান, হিজবুল্লাহ চুক্তি ভঙ্গ করলে ইসরায়েল আবারো হামলা চালাবে।
যুদ্ধবিরতির সময়কালের বিষয়ে নেতানিয়াহু বলেন, লেবাননে কী ঘটে তার ওপর নির্ভর করবে এর সময়।
যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে এই ঘোষণা দিল ইসরায়েল। এদিকে লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এরই মধ্যে বলেছেন, তিনি এই চুক্তিকে সমর্থন করেন।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তগুলোর বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে অন্যতম শর্তের মধ্যে একটি হচ্ছে ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহ উভয়ই ৬০ দিনের জন্য দক্ষিণ লেবানন থেকে তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করবে। হিজবুল্লাহ সীমান্তের প্রায় ১৯ মাইল উত্তরে লিতানি নদীর উত্তরে থাকবে। দক্ষিণে তাদের কোনো অবস্থান থাকবে না। সেখানে সশস্ত্র গোষ্ঠী বলতে কেবল লেবাননের সেনাবাহিনী ও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা অবস্থান করতে পারবেন।
এদিকে যুদ্ধবিরতির আগে মঙ্গলবার ইসরায়েলের বিমান হামলায় লেবাননজুড়ে অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরো বহুসংখ্যক মানুষ।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, মঙ্গলবারের বিমান হামলায় লেবাননের রাজধানী বৈরুত, পূর্ব লেবাননের বালবেক, দক্ষিণ লেবানের বেন্ত জেবেইল, চাকরা, মধ্যাঞ্চলের আল বাস্তা ও বারবোর থেকে নিহত ও আহতের সংবাদ পাওয়া গেছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। হামাসকে সহায়তায় এর পরের দিন ৮ অক্টোবর থেকে দখলদার ইসরায়েলের অবৈধ বসতি লক্ষ্য করে রকেট ছোড়া শুরু করে হিজবুল্লাহ। এর জবাবে ইসরায়েলও লেবাননে হামলা শুরু করে।
তবে হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের সীমান্ত এলাকা থেকে পুরোপুরি সরিয়ে দিতে চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর লেবাননে স্থল হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। যদিও ইসরায়েল যে লক্ষ্য করে স্থল হামলা শুরু করেছিল তারা সেটি পুরোপুরি অর্জন করতে পারেনি। উল্টো সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে।
তবে আকাশ শক্তি ব্যবহার করে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরায়েল। তাদের হামলায় দেশটির তিন হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ