বিতর্কিত ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদার সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আবার আলোচনায় এসেছেন। ৫ আগস্টের পর ‘আওয়ামী দালাল’ নামে পরিচিত এই আইনজীবি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। পলাতক অবস্থান থেকে সম্প্রতি এক টকশোতে অংশ নেন তিনি। সেখানে সহ-আলোচক ছিলেন ইউসিসি’র শিক্ষক সাইয়েদ আব্দুল্লাহ। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে নিঝুম মজুমদারকে টয়লেট ক্লিনার হারপিকের বোতল উঁচু করে দেখান সাইয়েদ আব্দুল্লাহ।
নেটিজেনদের মধ্যে ভিডিও ক্লিপটি ভাইরাল হয়ে পড়েছে। অনেকে প্রশ্ন করেছেন, হারপিকের সঙ্গে নিঝুম মজুমদারের সম্পর্ক কী?
এই প্রশ্নের উত্তরে রয়েছে নিঝুম মজুমদারের পরকীয়া প্রেমের এক হাস্যকর ইতিহাস।
স্ত্রী-সন্তান থাকা সত্ত্বেও নিঝুম মজুমদার জড়িয়ে পড়েন পরকীয়া সম্পর্কে। নিজের বৈবাহিক অবস্থা গোপন করে এই সম্পর্ক তৈরি করেন মিস আয়ারল্যান্ডখ্যাত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মাকসুদা আক্তার প্রিয়তীর সঙ্গে। ঘটনা ২০১৮ সালে শুরু।
পরবর্তীতে প্রিয়তী যখন জানতে পারেন, ব্যক্তিগত তথ্য গোপন করে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করেছেন নিঝুম মজুমদার, তখন নিজেকে এই সম্পর্ক থেকে সরিয়ে নিতে চান।
আর তখনই গল্পে জায়গা করে নেয় টয়লেট ক্লিনার- হারপিক!
নিঝুম প্রসঙ্গে এসব কথা প্রিয়তী নিজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উন্মোচন করেছেন।
প্রিয়তীর ফেসবুক প্রোফাইল থেকে প্রকাশিত নিঝুমের সাথে ফোনালাপ থেকে জানা যায়, তাদের সম্পর্কটা শুরুতে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহযোগিতার মনোভাবপূর্ণ থাকলেও ধীরে ধীরে তা পীড়নের পর্যায়ে চলে যায়। প্রিয়তী বার বার সম্পর্ক থেকে সরে আসার চেষ্টা করেছেন, কারণ এই সম্পর্কের মাঝে কোনো পরিণতি দেখতে পাচ্ছিলেন না।
প্রিয়তীর বক্তব্য অনুযায়ী, নিঝুম তার স্ত্রী ও সন্তান রেখেই প্রিয়তীর সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে চান। আর এ নিয়ে ক্রমাগত গোঁয়াতুর্মিও চালিয়ে যান নিঝুম। মানসিকভাবে চাপ দিতে থাকেন প্রিয়তীকে। বার বার ‘সুইসাইড’ এর হুমকি দিয়ে যান। প্রিয়তী অবস্থার গুরুত্ব অনুধাবন করে তাকে চিকিৎসা গ্রহণের অনুরোধ জানান। তার স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক নষ্ট না করারও অনুরোধ করেন।
কিন্তু নিঝুম কিছুই কানে তোলেননি। উল্টো হুটহাট দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ডাবলিনে হাজির হতে থাকেন। এতে প্রিয়তীও অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়েন। তবুও সৌজন্যতার খাতিরে তিনি দেখা সাক্ষাৎ করেন। আর এসব সরলতাকে পুঁজি করে নিঝুম আরও আগ্রাসী হয়ে উঠতে থাকেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রিয়তীকে নিয়ে নানাবিধ অসৌজন্যমূলক পোস্ট দিতে থাকেন।
প্রিয়তী এক পর্যায়ে নিঝুমের ফোন রিসিভ করা বন্ধ করে দেন। এর প্রেক্ষিতে নিঝুম ফেসবুকে প্রিয়তীকে অশ্রাব্য এবং অ-শালীন ভাষায় লেখালেখি শুরু করেন।
প্রিয়তীর বক্তব্য থেকে আরেকটু পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রিয়তী লিখেছেন-
“২৯ অক্টোবর ২০১৮-তে আমি #মি-টু নিয়ে মুখ খুলি। তখন লন্ডনের জনৈক ব্যারিষ্টার সাহেব, আমার পাশে দাঁড়ান। যদিও পরবর্তিতে এ বিষয়ে উনার তেমন কোনো ভূমিকা ছিলো না। তবে উনার সঙ্গে আমার একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়। এক পর্যায়ে উনার মোহ অন্যদিকে ঘুরতে শুরু করে, যা কখনোই আমার পরিকল্পনায় ছিল না। কখনই উনাকে জীবনসঙ্গী হিসাবে চিন্তাও আমার মাথায় আসেনি। কিন্তু উনি আস্তে আস্তে পাগলামি করা শুরু করেন। তবে আমি বন্ধু হিসাবে উনাকে চেষ্টা করেছি বোঝাতে।”
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রিয়তি আরো লিখেছেন- “এর মধ্যে ভিডিও কলে রেখে আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। আমি বরাবরই উনাকে উনার সংসার ফিক্স করতে বলেছি। এরপরেও যখন উনি আমার পিছু ছাড়তে নারাজ তখন আমি না পেরে, উনার পরিবারের মুরুব্বীদের কাছে পর্যন্ত আমার পরিবারের সদস্যদের দিয়ে অভিযোগ করিয়েছি।”
প্রিয়তীর এই পোস্টের পরই জানা যায়, ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদার তার সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে নিতে ভিওি কলেই আত্মহত্যার হুমকি দেন। এবং হারপিকের বোতলের ছিপি খুলে পান করা শুরু করেন।
তারপর থেকেই নিঝুম মজুমদারের নামও বদলে যায়। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকেই তাকে ব্যঙ্গ করে ডাকতে শুরু করেন— হারপিক মজুমদার।
আমার বাঙলা/ এসএ