স্পেনের পূর্বাঞ্চলের ভ্যালেন্সিয়া প্রদেশের পাইপোর্তা শহরে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে পড়েন দেশটির রাজা, রানি ও প্রধানমন্ত্রী। তাদের গায়ে কাদা ছোড়া হয়েছে। গত কয়েক দিনের বন্যায় ওই অঞ্চলে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় সময় রবিবার (৩ নভেম্বর) পাইপোর্তা শহরে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনে যান স্পেনের রাজা ষষ্ঠ ফিলিপ এবং রানি লেতিজিয়া। তাদের সঙ্গে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজও। আরো ছিলেন ভ্যালেন্সিয়ার আঞ্চলিক প্রধান কার্লোস মেজন।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পাইপোর্তা শহরে স্প্যানিশ রাজা-রানির গায়ে কাদা ছুঁড়ে এবং তাদের ‘মার্ডারার’ (হত্যাকারী) ও ‘শেম’ (লজ্জা) বলে চিৎকার করছেন একদল ক্ষুব্ধ মানুষ। এএফপি জানিয়েছে, জনতার ছোড়া কাদা রাজা–রানির মুখে ও কাপড়ে লাগে। এসময় মুখ ও পোশাকে কাদামাটি লেগে থাকা অবস্থাতেই রাজা ও রানি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের সান্ত্বনা দেন।
স্পেনে বন্যায় দুর্গত অঞ্চলগুলোতে উদ্ধারকর্মীরা এখনো পার্কিং এলাকা ও টানেলগুলোতে তল্লাশি চালাচ্ছেন। বলা হচ্ছে, এটি দেশটিতে কয়েক দশকের মধ্যে আঘাত হানা সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা।
তবে বন্যার পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থতা ও পর্যাপ্ত সহায়তার অভাবের অভিযোগ উঠেছে স্প্যানিশ সরকারের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।
বিবিসি জানিয়েছে, বিক্ষোভের সময় রাজা ফিলিপের নিরাপত্তারক্ষী এবং পুলিশ সদস্যরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও জনতার আক্রোশের মুখে তারা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হন। পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠলে প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। সানচেজের গাড়ির দিকে পাথরও ছুঁড়ে মারতে দেখা গেছে। এর পরপরই জনতা ক্ষোভ প্রকাশ করে ‘সানচেজ কোথায়?’ বলে চিৎকার করতে থাকেন।
১৬ বছর বয়সী পাউ নামের এক কিশোর জানায়, আমি তো মাত্র ১৬ বছরের, আমরা এখানে সহায়তা করছি – কিন্তু নেতারা কিছুই করছেন না। এখনো মানুষ মারা যাচ্ছে। এসব আর সহ্য করতে পারছি না।
এক নারী অভিযোগ করেন, তারা আমাদের মরতে দিয়েছে। আমরা সবকিছু হারিয়েছি – আমাদের ব্যবসা, বাড়িঘর, স্বপ্ন।
প্রধানমন্ত্রী সানচেজ গত শনিবার ১০ হাজার সৈন্য, পুলিশ এবং সিভিল গার্ড সদস্যকে দুর্গত এলাকায় পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন এবং একে স্পেনের শান্তিকালীন বৃহত্তম মোতায়েন বলে উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, এই সহায়তা যথেষ্ট নয় এবং সেবা প্রদানে মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে।
রাজা ফিলিপ পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, বিক্ষোভকারীদের রাগ ও হতাশা আমি বুঝতে পারছি।
তবে স্থানীয় পার্লামেন্ট সদস্য হুয়ান বোর্দেরা এই সফরকে ‘খুবই খারাপ সিদ্ধান্ত’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, সরকার সতর্কতাগুলো উপেক্ষা করেছে এবং মানুষের মধ্যে সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ আজ দেখা গেছে।
পরে স্পেনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে জানানো হয়, রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের ভ্যালেন্সিয়া সফর স্থগিত করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার মুষলধারে বৃষ্টির জেরে স্পেনের পূর্বাঞ্চলের ভ্যালেন্সিয়া প্রদেশ ও আশপাশের এলাকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। ভেসে যায় বিভিন্ন সেতু, সড়ক ও ভবন। পানির তোড় থেকে বাঁচতে অনেক মানুষকে বাড়ির ছাদে উঠতে বা গাছ আঁকড়ে ধরতে দেখা যায়।
স্পেনে বন্যায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে তিন দিনের জাতীয় শোক পালন করা হয়েছে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ