চট্টগ্রাম বন্দরের স্থায়ী আমানত হিসেবে বিভিন্ন ব্যাংকে রাখা ১৩শ কোটি টাকার ভবিষ্যৎ ক্রমশ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতির মাঝে ফেরত পেয়েছে মাত্র ১৮ কোটি টাকা। বারবার চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও টাকা ফেরতে ব্যাংকগুলোর আশানুরূপ সাড়া না পেয়ে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর।
চট্টগ্রাম বন্দরের হিসাব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সাবেক এস আলমের মালিকানাধীন চারটি ব্যাংকে ৯২৭ কোটিসহ স্থায়ী আমানত হিসাবে বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় অন্তত ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা আটকে আছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে স্থায়ী আমানত নগদায়নের অনুরোধ জানিয়ে আসছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
ডিসেম্বরের মধ্যে টাকা পরিশোধের অঙ্গীকার করলেও এখন পর্যন্ত শুধু একটি ব্যাংক থেকে ১৮ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় টাকা ফেরত পাওয়ার সহযোগিতা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চাইলেও পরে সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। মূলত টাকা দিতে তারা গড়িমসি করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যেহেতু ব্যাংকগুলো গ্যারেন্টার, তাই তাদের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, মোট আয়ের ৫০ শতাংশ সরকারি ব্যাংকে ও বাকি ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখতে হয়। সেই অনুযায়ী বেসরকারি ব্যাংকে রাখা ১৩০০ কোটি টাকা নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। দুর্বল ব্যাংকগুলো স্থায়ী আমানতের টাকা এখন আর ফেরত দিতে পারছে না।
মূলত আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের কনটেইনার ও পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থাপনা ভাড়া দিয়ে বছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা আয় করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে নিজস্ব খরচ মিটিয়ে বছরে অন্তত ১ হাজার কোটি টাকা জমা হিসাবে থাকছে। আর এই টাকা নিয়েই জটিলতা চলছে। তবে, এসব দুর্বল ব্যাংকে শত শত কোটি টাকা জামানত হিসেবে রাখা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ জাফর আলম বলেন, যারা এই ব্যাংকের মালিক ছিলেন, তারা অনেক প্রভাবশালী ছিলেন। তাদের প্রভাবেই এটি ঘটতে পারে।
আতঙ্কিত গ্রাহকরা একযোগে টাকা তুলে নেয়ায় ব্যাংকগুলোতে সাময়িক তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে ব্যাংকগুলো সেই তারল্য সংকট কাটিয়ে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি ব্যাংকগুলোর লিগ্যাল অ্যাডভাইজারের।
লিগ্যাল অ্যাডভাইজার অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেন, ব্যাংকগুলোর টাকা বন্দর কর্তৃপক্ষ কীভাবে ফেরত পাবে, সেটি বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করবে। ইতোমধ্যেই তারা বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। জনগণ টাকা পেতে শুরু করেছে।
ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক এরই মধ্যে ১৮ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে। এছাড়া আরও ১২ কোটি টাকা আগামী মাসে নগদায়ন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে স্থায়ী আমানতের টাকা দ্রুত নগদায়ন না হলে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
আমারবাঙলা/জিজি