নিজস্ব প্রতিবেদক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স্রোতে এক সময় হয়ে উঠে ইতিহাস। পৃথিবীর বয়স যতোই বাড়ে ইতিহাস ততোই সমৃদ্ধ হয়। এই সমৃদ্ধ ইতিহাসের প্রতিটি ঘটনার প্রতি মানুষের আগ্রহ চিরাচরিত। ইতিহাসের প্রতিটি দিন তাই ভীষণ গুরুত্ব পায় সকলের কাছে।
আমার বাঙলার পাঠকদের আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে সংযোজন করেছে নতুন আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিন’।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর), ২৯ ভাদ্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৭ সফর ১৪৪৪ হিজরী। এক নজরে দেখে নিন ইতিহাসের এ দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম-মৃত্যুদিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়।
ঘটনাবলী:
১১২৫ - ডিউক লোথারিয়াস জার্মানির রাজা হিসেবে অভিষিক্ত হন।
১২৫০ - ক্রসেড যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় খ্রিস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে ঐতিহাসিক মানসুরিয়ে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।
১৫০১ - মাইকেল এঞ্জেলো বিখ্যাত ডেভিড মূর্তি নির্মাণ শুরু করেন।
১৬০৯ - অভিযাত্রী হেনরী হাডসন আমেরিকার নিউ জার্সিতে একটি নদী খুঁজে, পরবর্তীতে নদীটির নাম রাখা হয় হাডসন নদী। স্থানীয় আদিবাসীরা নদীটিকে ডাকতো মু-হে-কুন-নে-তুক (Muh-he-kun-ne-tuk) নামে।
১৭৮০ - বহুতল ভবনে উঠানামা করার জন্য ব্যবহৃত লিফট বা এলিভেটর আবিস্কৃত হয়।
১৭৮৮ - নিউইয়র্ক সিটি আমেরিকার প্রথম রাজধানী হয়।
১৭৮৯ - মার্কিন সরকার নিউ ইয়র্ক ব্যাংক থেকে প্রথম ঋণ নেয়।
১৮৪৭ - আমেরিকা-মেক্সিকো যুদ্ধে মেক্সিকো দখল করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
১৮৯৮ - প্যারিসের ২০ হাজার রাজমিস্ত্রি ধর্মঘট করে।
১৯২২ - লিবিয়ার আজিজিয়ায় পৃথিবীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয় ১৩৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
১৯২৯ - ৬৩ দিন অনশনের পর বিপ্লবী যতীন দাস লাহোর কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৪০ - বাকিংহাম প্যালেসে বোমা বর্ষণ করে জার্মানি।
১৯৪৩ - জেনারেল চিয়াং কাইশেক চীনা প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি পদে পুনর্নির্বাচিত হন।
১৯৪৮ - ভারতের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী বল্লভভাই পাতিল স্বাধীন হায়দ্রাবাদ রাজ্যকে ভারতের সাথে যুক্ত করতে হায়দ্রাবাদে সেনাবাহিনীকে প্রবেশের অনুমতি দেন।
১৯৫৯ - চাঁদের উদ্দেশে রাশিয়ার লুনিক-২ নামক রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়।
১৯৯৩ - ওয়াশিংটনে পিএলও নেতা ইয়াসির আরাফাত ও ইসরাইলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিনের মধ্যে আপোষমূলক জেরিকো-গাযা’ ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
১৯৯৫ - শ্রীলঙ্কায় এক বিমান দুর্ঘটনায় ৭৫ জন নিহত হন।
১৯৯৮ - বুরকিনো যশো স্থলমাইন নিষিদ্ধ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
২০০০ - তুরস্কে ভূমিকম্পে ১০৮ জনের মৃত্যু।
২০০১ - পূর্ব তিমুরে পার্লামেন্ট সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এটাই প্রথম পার্লামেট।
২০০৮ - দিল্লীতে এক সিরিজ বোমা হামলায় ৩০ নিহত ও ১৩০ জন আহত হয়।
জন্মদিন:
৭৮৬ - আল মামুন ইবনে হারুন, আব্বাসীয় খলিফা।
১০৮৭ - জন দ্বিতীয় কমনেনাস, বাইজেনটাইন সম্রাট।
১৬৯৪ - জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন, বাঙালী শ্রুতিধর ও পণ্ডিত। (মৃ.১৯/১০/১৮০৭)
১৬৯৪ - ইয়ংজো জোসেওন, কোরিয়ার শাসক।
১৮৮৬ - রবার্ট রবিনসন, নোবেলজয়ী ইংরেজ রসায়নবিদ।
১৮৮৭ - লেওপল্ড রুজিচকা, রসায়নে নোবেলজয়ী সুইস বিজ্ঞানী।
১৯০৪ - সৈয়দ মুজতবা আলী, বাংলাদেশী বাঙালি সাহিত্যিক। (মৃ.১১/০২/১৯৭৪)
সৈয়দ মুজতবা আলী (১৩ সেপ্টেম্বর ১৯০৪ – ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪) একজন প্রখ্যাত সাহিত্যিক। তিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও রম্যরচয়িতা। তিনি তার ভ্রমণকাহিনির জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয়। বহুভাষাবিদ সৈয়দ মুজতবা আলীর রচনা একই সাথে পাণ্ডিত্য এবং রম্যবোধে পরিপুষ্ট।
সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতে আসামের অন্তর্ভুক্ত সিলেটের করিমগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা খান বাহাদুর সৈয়দ সিকান্দার আলী সাব-রেজিস্ট্রার ছিলেন। তার পৈতৃক ভিটা মৌলভীবাজার, পৈতৃক নিবাস হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার উত্তরসূর গ্রামে।
সৈয়দ মুজতবা আলী সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। পিতার বদলির চাকরি হওয়ায় মুজতবা আলীর প্রাথমিক শিক্ষাজীবন কাটে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ১৯২১ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন।
তিনি ছিলেন বিশ্বভারতীর প্রথমদিকের ছাত্র। এখান থেকে সংস্কৃত, ইংরেজি, আরবি, উর্দু, ফার্সি, হিন্দি, গুজরাটি, ফরাসি, জার্মান ও ইতালীয়সহ পনেরোটি ভাষাশিক্ষা লাভ করে ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে বি.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন।
এরপর তিনি আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। অতঃপর দর্শনশাস্ত্র পড়ার জন্য বৃত্তি নিয়ে জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে গবেষণার জন্য তিনি ডি.ফিল লাভ করেন ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৩৪-১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মিশরে কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে ১৯২৭ থেকে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মুজতবা আলী কাবুলের শিক্ষা দপ্তরে অধ্যাপনা করেন। সেখানে তিনি ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার শিক্ষক ছিলেন।
১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে বরোদার মহারাজার আমন্ত্রণে তিনি বরোদা কলেজে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এখানে তিনি আট বছর কাটান। এরপর দিল্লির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের খণ্ডকালীন প্রভাষকের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি পঞ্চাশের দশকে কিছুদিন আকাশবাণীর স্টেশন ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন পাটনা, কটক, কলকাতা এবং দিল্লিতে। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শান্তিনিকেতনে প্রত্যাবর্তন করেন। বিশ্বভারতীর ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের রিডার হিসেবে যোগ দেন।
১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অবসরগ্রহণ করেন। তাদের পরিবারের পরিচয় তুলে ধরতে মৌলভীবাজারে তার ও তার পিতার নামে দুটি সড়কের নাম রাখা হয়েছে। যার একটি সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী সড়ক এবং আরেকটি খান বাহাদুর সৈয়দ সিকন্দর আলী সড়ক। এছাড়াও তার স্মৃতি ধরে রাখতে তার লেখা বইয়ের নামে গ্রন্থাগারের নাম রাখা হয়েছে ‘দেশে বিদেশে’।
শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় সেখানের বিশ্বভারতী নামের হস্তলিখিত ম্যাগাজিনে মুজতবা আলী লিখতেন। পরবর্তীতে তিনি ‘সত্যপীর’, ‘ওমর খৈয়াম’, ‘টেকচাঁদ’, ‘প্রিয়দর্শী’ প্রভৃতি ছদ্মনামে বিভিন্ন পত্রিকায়, যেমন: দেশ, আনন্দবাজার, বসুমতী, সত্যযুগ, মোহাম্মদী প্রভৃতিতে কলাম লিখেন।
তার বহু দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন ভ্রমণলিপি। এছাড়া লিখেছেন ছোটগল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা। বিবিধ ভাষা থেকে শ্লোক ও রূপকের যথার্থ ব্যবহার, হাস্যরস সৃষ্টিতে পারদর্শিতা এবং এর মধ্য দিয়ে গভীর জীবনবোধ ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা তাকে বাংলা সাহিত্যে এক বিশেষ মর্যাদার আসনে বসিয়েছে।
অনেকের মতে, ১৯৫০-৬০ দশকে মুজতবা আলী ছিলেন বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক।তার একটি বিখ্যাত উক্তি হলো: “বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না।”
তুলনাত্মক ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক মুজতবার ধর্মদর্শন নিয়ে বড় ভাই সৈয়দ মুর্তাজা আলী মন্তব্য করেন: তার (মুজতবা আলীর) সাহিত্যে বিন্দুমাত্র ধর্মীয় সংকীর্ণতা ছিল না। কিন্তু তার এই উদারতার জন্য গোঁড়া স্বধর্মীরা তাঁকে কোনোদিন ক্ষমা করেননি।
১৯১৬ - রুয়াল দাল, ওয়েল্সীয় সাহিত্যিক।
১৯৬৯ - শেন ওয়ার্ন, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার, এবং হ্যাম্পশায়ারের অধিনায়ক।
১৯৭৩ - ফাবিও কান্নাভারো, ইতালীয় ফুটবলার।
১৯৮৯ - টমাস মুলার, জার্মান ফুটবল খেলোয়াড়।
মৃত্যুবার্ষিকী:
১৫৯৮ - স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ।
১৮৭২ - লুডউইগ ফয়েরবাক, জার্মানীর একজন বস্তুবাদী দার্শনিক।
১৯১০ - রজনীকান্ত সেন, বিশিষ্ট বাঙালি কবি এবং সুরকার। (জ.২৬/০৭/১৮৬৫)
১৯২৪ - ভূপেন্দ্রনাথ বসু, ভারতীয় রাজনীতিবিদ, আইনজীবী এবং ১৯১৪ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি। (জ.১৩/০১/১৮৫৯)
১৯২৯ - যতীন্দ্র নাথ দাস, ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের শহীদ বিপ্লবী। (জ.২৭/১০/১৯০৪)
২০১৩ - আনোয়ার হোসেন, বাংলা চলচ্চিত্রের ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ খ্যাত কিংবদন্তি অভিনেতা।
এবি/এইচএন