সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে অজানা গন্তব্যে পালিয়ে গেছেন। বিদ্রোহী যোদ্ধাদের রাজধানী দামেস্ক দখলের মুখে রবিবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে দেশ ছাড়েন তিনি। পরে দেশটির প্রধান সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জুলানি ঘোষণা দিয়েছেন, দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল-জালালি অন্তর্বর্তী সময় পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে বাশারের বর্তমান অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। তার উড়োজাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা যায়নি। এর মাঝে গুঞ্জন ছড়িয়েছে আসাদকে বহনকারী উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে। তার মৃত্যুর গুঞ্জনও ছড়িয়ে পড়ে। তবে আসাদের অন্যতম মিত্র রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রবিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, দেশ ছাড়ার আগে আসাদ বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে আলোচনার ভিত্তিতে তিনি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করে সিরিয়া ছাড়তে সম্মত হন। তিনি বৈঠকে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন। সিরিয়ার চলমান পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সব পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। এতে বলা হয়, আমরা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থেকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানাই। এই প্রক্রিয়ায় সিরিয়ার সব বিরোধী পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে রাশিয়া।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সিরিয়ার রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটিগুলো সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে ঘাঁটিগুলোর জন্য মারাত্মক হুমকি নেই।
এর আগে সকালে সিরিয়ার বিদ্রোহী যোদ্ধারা রাজধানী দামেস্কে ঢুকে পড়ে। সিরিয়ার জ্যেষ্ঠ দুজন সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, বাশার আল-আসাদ একটি উড়োজাহাজে চড়ে দেশ ছেড়েছেন। তবে তার গন্তব্য জানা যায়নি। তার ক্যানসার আক্রান্ত স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে কোথায় আছেন তাও জানা সম্ভব হয়নি। বাশারের পতনে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইসরায়েল, তুরস্কসহ অনেক দেশ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বাশার আল-আসাদ টানা ২৪ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। এর আগে তার বাবা হাফিজ আল-আসাদ টানা ২৯ বছর সিরিয়া শাসন করেন। বাশার আল-আসাদের পালানোর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় ৫৪ বছরের আল-আসাদ পরিবারের শাসনের অবসান হলো।
এর আগে গত কয়েক দিনে আলেপ্পো, হোমসসহ সিরিয়ার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ নেন বিদ্রোহীরা। তারা ধীরে ধীরে রাজধানী দামেস্কের দিকে এগোতে থাকেন। শনিবার রাাতে দামেস্কের উপকণ্ঠে পৌঁছে যান বিদ্রোহীরা। আর রবিবার সকালে তারা দামেস্কে ঢুকে পড়েন। বাশার আল-আসাদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার পর বিদ্রোহীরা দামেস্ককে, সিরিয়াকে ‘মুক্ত’ বলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
অন্তর্বর্তী দায়িত্বে থাকবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, ঘোষণা জুলানির
সিরিয়ার প্রধান সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএসের প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জুলানি ঘোষণা দিয়েছেন, দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল-জালালি অন্তর্বর্তী সময় পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। রবিবার এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এক বিবৃতিতে আল-জুলানি জানান, গত সেপ্টেম্বরে আসাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়া আল-জালালি ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্বে থাকবেন।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, দামেস্কে সামরিক বাহিনীকে সরকারি ভবনের কাছে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং আকাশে গুলি চালানো সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী আল-জালালি এক ভিডিও বার্তায় জানান, তার সরকার যেকোনো জনমতভিত্তিক নেতৃত্বের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রস্তুত। তিনি বলেন, আমি এখান থেকে কোথাও যাচ্ছি না এবং যাওয়ার ইচ্ছাও নেই। শান্তিপূর্ণ উপায়ে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ, প্রতিষ্ঠান ও ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে চাই। পাশাপাশি, দেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।
লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়া কে এই জুলানি
আসাদ সরকারের পতনের অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছে এইচটিএস। এর প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জুলানি। পতনের পরিপ্রেক্ষিতে এইচটিএসের প্রধান জুলানিকে নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এই বিদ্রোহী নেতার অতীত-বর্তমান নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে তার কার্যক্রমের একাল-সেকাল তুলে ধরেছে।
আবু মোহাম্মদ আল-জুলানির আসল নাম আহমেদ হুসাইন আল-শারা। ১৯৮২ সালে তিনি সৌদি আরবের রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন। তখন তার বাবা সেখানে পেট্রোলিয়াম প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করতেন। ১৯৮৯ সালে তার পরিবার সিরিয়ায় ফিরে আসে। দামেস্কের অদূরে বসতি স্থাপন করে।
দামেস্কে থাকাকালে জুলানি কী করতেন, তা জানা যায় না। ২০০৩ সালে সিরিয়া থেকে ইরাকে এসে তিনি আল-কায়েদায় যোগ দেন। এই বছরই ইরাকে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। তিনি সেখানে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনে যোগ দেন। তখন থেকে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে।
২০০৬ সালে জুলানি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের হাতে গ্রেপ্তার হন। পাঁচ বছর আটক থাকেন।
গণতন্ত্রের দাবিতে ২০১১ সালে সিরিয়ায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভ দমনে বাশার আল-আসাদ সহিংসতার পথ বেছে নেন। এর জেরে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।
২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় জুলানি ছাড়া পান। এরপর তার নেতৃত্বে সিরিয়ায় আল-কায়েদার শাখা প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা আল-নুসরা ফ্রন্ট নামে পরিচিত। সশস্ত্র গোষ্ঠীটি সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে, বিশেষত ইদলিবে শক্তিশালী হতে থাকে।
প্রথম দিকের কয়েক বছর জুলানি আবু বকর আল-বাগদাদির সঙ্গে কাজ করেন। বাগদাদি ছিলেন ইরাকের ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রধান। এই সশস্ত্র গোষ্ঠী পরে আইএসআইএল (আইএসআইএস) নাম ধারণ করে।
২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে বাগদাদি আকস্মিকভাবে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেন। সিরিয়ায় নিজেদের তৎপরতা বৃদ্ধিতে কাজ শুরু করেন। এক পর্যায়ে আইএসআইএল আল-নুসরা ফ্রন্টকে বেশ ভালোভাবে নিজেদের সঙ্গে একীভূত করে ফেলে। তখনই আইএসআইএলের জন্ম হয়।
জুলানি এ পরিবর্তন প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেন। এ অবস্থায় ২০১৪ সালে আল-জাজিরাকে প্রথমবারের মতো টেলিভিশন সাক্ষাৎকার দেন জুলানি। এতে তিনি বলেছিলেন, তার গোষ্ঠী ‘ইসলামিক আইনের’ যে ব্যাখ্যা দেবে, সিরিয়া সেই অনুযায়ী শাসিত হবে।
তবে কয়েক বছর পর জুলানির মধ্যে পরিবর্তন আসে। তিনি আল-কায়েদার মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোয় ‘বিশ্বব্যাপী খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার প্রকল্প থেকে সরে আসেন। এমন কিছুর পরিবর্তে সিরিয়া সীমান্তের ভেতরে নিজের গোষ্ঠীর তৎপরতা সীমাবদ্ধ করেন জুলানি।
জুলানির এ পরিবর্তনকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তারা মনে করেন, এর মধ্য দিয়ে জুলানির গোষ্ঠীটি বহুজাতিক বা আন্তদেশীয় গোষ্ঠীর বদলে একটি জাতীয় গোষ্ঠী হিসেবে আবির্ভূত হয়।
২০১৬ সালের জুলাইয়ে বাশার সরকার আলেপ্পোর নিয়ন্ত্রণ নেয়। তখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ইদলিবের দিকে চলে যায়। সিরিয়ার এ অঞ্চল তখনো বিদ্রোহীদের দখলে।
২০১৬ সালে জুলানি প্রকাশ্যে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি আল-নুসরা বিলুপ্ত করেন। গঠন করেন নতুন সংগঠন জাভাত ফাতেহ আল-শাম।
২০১৭ সালের শুরুর দিকে আলেপ্পো থেকে হাজার হাজার যোদ্ধা ইদলিবে পালিয়ে আসেন। এ সময়ে বিদ্রোহীদের ছোট ছোট অনেক গোষ্ঠী ও নিজের এইচটিএস গঠন করেন জুলানি।
এইচটিএসের ঘোষিত লক্ষ্যই ছিল বাশার আল-আসাদের স্বৈরাচারী শাসন থেকে সিরিয়াকে মুক্ত করা। এইচটিএস আজ এই লক্ষ্য অর্জনের ঘোষণা দিল।
এইচটিএসের অন্য লক্ষ্যের মধ্যে আছে-সিরিয়ায় ‘ইরানের সব সশস্ত্র গোষ্ঠীকে বিতাড়িত করা’। নিজেদের দেওয়া ‘ইসলামি আইনের’ ব্যাখ্যা অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করা।
পর্যবেক্ষকদের মতে, বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ‘সবচেয়ে কার্যকর’ ভূমিকা পালন করেছে এইচটিএস ও এর প্রধান জুলানি।
কোথায় গেলেন আসাদ, অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা
দেশ ছেড়ে আসাদ কোথায় গেলেন, তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। তিনি কোথায় আছেন তা এখনো স্পষ্ট নয়। তার অবস্থান নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা।
প্রাথমিকভাবে বিদ্রোহী যোদ্ধারা দামেস্কে ঢোকার সময়ই ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে করে আসাদের সিরিয়া ছাড়ার খবর মিলেছিল। সিরিয়া সরকারের দুই শীর্ষ কর্মকর্তার বরাতে রয়টার্স জানিয়েছিল, আসাদ সকালে অজ্ঞাত গন্তব্যের উদ্দেশ্যে দামেস্ক ছেড়েছেন।
পরে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আসাদ এখন সম্ভবত দেশের বাইরে। কিন্তু আসাদ কোথায় থাকতে পারেন তা তিনি জানাননি। আবার একইভাবে আসাদ আবুধাবিতে আশ্রয় পাওয়ার চেষ্টা করেছেন কিনা সেটি নিশ্চিত বা অস্বীকার কোনোটিই করেননি সংযুক্ত আরব আমিরাতের শীর্ষ এক কূটনীতিক।
কেবল আসাদই নয়, তার স্ত্রী এবং দুই সন্তান কোথায় আছে সেটিও এখনো অজানা। তবে সিরিয়া ছাড়ার পর ইরান কিংবা রাশিয়ায় যাওয়া ছাড়া আসাদের বিকল্প নেই এমনটিই ধারণা করা হচ্ছে।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের (এসওএইচআর) প্রতিষ্ঠাতা রমি আব্দুল রহমান বলেন, উড়োজাহাজটি শনিবার রাতে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ফ্লাইটরাডার ২৪ ওয়েবসাইটে ওইসময় কোনো উড়োজাহাজের উড্ডয়নের রেকর্ড নেই। তবে রবিবার সকালের দিকে চ্যাম উইংস এয়ারলাইন্সের এ৩২০ এয়ারবাসের একটি ফ্লাইট সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। উড়োজাহাজটি সময়মত শারজা পৌঁছেছে। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেছেন, আসাদ সেখানে গেছেন কিনা তা তিনি জানেন না।
ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্যমতে, উড়োজাহাজটি প্রথমে দামেস্ক থেকে পূর্বের দিকে ওড়ে যায়। এরপর ঘুরে যায় উত্তরপশ্চিম দিকে ভূমধ্যসাগর অভিমুখে। যেদিকে আছে আসাদের নিজ আলাউইত সম্প্রদায় এবং রাশিয়ার নৌ ও বিমান ঘাঁটি।
ফ্লাইটরাডার২৪ এক্সে এক পোস্টে বলেছে, উড়োজাহাজটি পুরোনো এবং এর ট্রান্সপন্ডার পুরোনো হওয়ায় কিছু ডাটা ভালোমত পাওয়া যায়নি এবং খোয়া গেছে।
বাশারের ক্যানসারে আক্রান্ত স্ত্রী আর সন্তানেরা এখন কোথায়
বাশারের ক্যানসারে আক্রান্ত স্ত্রী ও সন্তানেরা এখন কোথায়, এ কৌতূহল অনেকের মনেই। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, বাশার আল-আসাদের ব্রিটিশ-সিরীয় স্ত্রী আসমা আসাদ এবং তাদের তিন সন্তান আগেই সিরিয়া ছেড়েছেন। সন্তানদের নিয়ে আসমা গত নভেম্বরের শেষের দিকে রাশিয়ায় চলে যান।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট দপ্তরের বরাতে গত মে মাসে রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ৪৮ বছর বয়সী আসমার লিউকেমিয়া (রক্ত বা অস্থিমজ্জার ক্যানসার) শনাক্ত হয়েছে। এ কারণে তিনি জনসম্মুখে কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া থেকে বিরত আছেন।
এর বছর পাঁচেক আগে আসমা স্তন ক্যানসার থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার কথা জানিয়েছিলেন।
আসমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। সেখানেই বাশার আল-আসাদের সঙ্গে তার পরিচয়। বিনিয়োগ ব্যাংকে চাকরি করতেন আসমা। পরে বাশারকে বিয়ে করে সিরিয়ায় চলে আসেন।
২০১১ সাল থেকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে। তখন থেকে সিরিয়ার নিহত সেনাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে ও দাতব্য কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলেন আসমা। কিন্তু বিদ্রোহীরা তার এ কাজ ভালো চোখে দেখেননি।
স্বামীর সঙ্গে গত বছর রাষ্ট্রীয় সফরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যান আসমা। ২০১১ সালের পর দেশের বাইরে এটিই ছিল তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর।
দামেস্কে ইরানি দূতাবাসে হামলা
দামেস্ক দখল এবং তেহরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ার রাজধানীতে অবস্থিত ইরানি দূতাবাসে হামলা চালিয়েছেন সিরিয়ার বিদ্রোহীরা। রবিবার দামেস্কের পতনের পরপরই ইরানি দূতাবাসে একদল সশস্ত্র বিদ্রোহী হামলা চালায় বলে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেলের খবরে জানানো হয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল বলেছে, দামেস্কে ইরানের দূতাবাসের কাছের দোকানের আশপাশে হামলা চালিয়েছে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। তবে সিরিয়ার বেশিরভাগ এলাকার দখল নেওয়া এইচটিএস নয়, বরং অন্য একটি গোষ্ঠী এই হামলা চালিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবের আল-আরাবিয়া টেলিভিশন চ্যানেলে ইরানি দূতাবাসের ভেতরের ভিডিও ফুটেজ শেয়ার করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, হামলাকারীরা ভবনের ভেতরে তাণ্ডব চালাচ্ছেন। এ সময় দূতাবাস ভবনের আসবাবপত্র ও কিছু জানালা ভাঙচুর এবং নথিপত্র তছনছ করা হয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমায়েল বাঘাই বলেছেন, হামলার ঘটনার আগেই রবিবার ভোরের দিকে দূতাবাস থেকে ইরানি কূটনীতিকদের সরিয়ে নেওয়া হয়।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি বলেছে, দামেস্কের সৈয়দা জিনাব এবং সৈয়দা রুক্কায়া মাজারে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হবে না বলে নিশ্চয়তা দিয়েছে এইচটিএস। দেশটির আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম বলেছে, বিদ্রোহীরা দামেস্কের দখল নেওয়ার আগেই মাজারের সমস্ত ইরানি সেবককে দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নাতনি সৈয়দা জিনাবের মাজার রয়েছে দামেস্কে। সারা বিশ্বের শিয়াদের বিশাল তীর্থস্থান হিসেবে মনে করা হয় এই মাজারকে। সিরিয়ার শিয়া মিলিশিয়াদের কাছেও মাজারটি বেশ জনপ্রিয়।
তেল আবিব সরাসরি জড়িত : ইসরায়েলি মিডিয়া
এইচটিএসের একাধিক গোষ্ঠীর সঙ্গে ইসরায়েলের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। তাদের সঙ্গে তেল আবিব প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়ালা রবিবার এ কথা জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন ইসরায়েলের লক্ষ্য হচ্ছে সশস্ত্র দলগুলো যাতে সিরিয়া ও অধিকৃত অঞ্চলের সীমান্তের দিকে অগ্রসর হতে না পারে, তা নিশ্চিত করা।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, তাদের সেনাবাহিনী সিরিয়া সীমান্তে প্যারাট্রুপার ও কমান্ডোদের সঙ্গে ব্রিগেড-৯৮ মোতায়েন করেছে।
এর আগের খবরে বলা হয়েছিল, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ট্যাংকগুলো অধিকৃত গোলান মালভূমি সীমান্তের বেড়া অতিক্রম করে সিরিয়ার ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছে।
তারা আরো জানায়, ট্যাংক নিয়ে ইসরায়েলি বাহিনী সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের কুনেইত্রা অঞ্চলে ব্যাপকভাবে প্রবেশ করেছে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ