আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়ার মরুভূমিতে ট্রাফল সংগ্রহের সময় বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছেন। এ হামলার পর প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। তবে প্রাণহানির সংখ্যা আরও বেশি বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়ার মরুভূমিতে সন্দেহভাজন আইএস গ্রুপের বন্দুকধারীদের হাতে কমপক্ষে ১৮ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে একটি পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী। নিহত ব্যক্তিরা মরুভূমিতে ট্রাফল সংগ্রহ করার সময় তাদের ওপর এ হামলা চালানো হয়।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলছে, সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ দেইর আল-জোরে হামলার পর থেকে আরও ৫০ জনের বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।
দেশটির সরকারপন্থি আল-মায়াদিন টিভি জানিয়েছে, হামলায় কমপক্ষে ৪৭ জন নিহত হয়েছেন। অপরদিকে কুর্দিশ নর্থ প্রেস নিউজ এজেন্সি বলছে, হামলায় নারী ও শিশুসহ প্রায় ৪০ জন নিহত হয়েছেন।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস নিশ্চিত করেছে, এ হামলায় সরকার সমর্থক আধাসামরিক ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্সের (এনডিএফ) ৪ সদস্যসহ ১৮ জন নিহত হয়েছেন।
দেইর আল-জোর প্রদেশের দক্ষিণে অবস্থিত মরুভূমি এলাকা কোবাজিবে আইএসের বন্দুকধারীরা ট্রাফল শিকারীদের দলের ওপর গুলিবর্ষণ করে বলে গোষ্ঠীটি জানিয়েছে। এতে সেখানে বন্দুকধারী ও এনডিএফ যোদ্ধাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় সেখানে ১২টি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়।
কুর্দি-নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পূর্ব সিরিয়া থেকে নর্থ প্রেস বেশ কয়েকজন ট্রাফল শিকারীর আত্মীয় ও চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, ৪ জন এনডিএফ যোদ্ধাসহ ৪০ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন।
বিবিসি বলছে, হামলাটি আইএস চালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো দাবি করা হয়নি।
উল্লেখ্য, গত বছরও বেশ কয়েকটি বন্দুক হামলায় বহু সংখ্যক সিরিয়ান ট্রাফল শিকারী নিহত হন। সেসব হামলা ও প্রাণহানির জন্য আইএসকে ব্যাপকভাবে দায়ী করা হয়েছিল। তবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি সেসব হামলার পেছনে ছিল বলে কোনো দাবি করেনি।
ট্রাফল আসলে এক ধরনের ভোজ্য ছত্রাক যা শুষ্ক এলাকায় জন্মায়। এটি বেশ মূল্যবান একটি খাবার। মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত এ দেশে প্রতি কেজি ট্রাফল ৩৫ মার্কিন ডলার পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়ে থাকে।
যেখানে দেশটির মানুষের ন্যূনতম মাসিক মজুরি প্রায় ১৪ মার্কিন ডলার। দেশটির আনুমানিক ৯০ শতাংশ মানুষই দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে।
আইএস একসময় পশ্চিম সিরিয়া থেকে পূর্ব ইরাক পর্যন্ত বিস্তৃত ৮৮ হাজার বর্গ কি.মি. অঞ্চল দখলে নেয় এবং প্রায় ৮০ লাখ মানুষের ওপর তার নৃশংস শাসন চাপিয়ে দিয়েছিল।
২০১৯ সালে সিরিয়ায় এ গোষ্ঠীর সামরিক পরাজয় সত্ত্বেও জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, আইএস ও এর সহযোগীরা এখনো উচ্চ হুমকি হিসেবেই রয়ে গেছে।
গত জানুয়ারির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের আনুমানিক ৩-৫ হাজার যোদ্ধা রয়েছে। গত নভেম্বর থেকে সিরিয়ায় তাদের আক্রমণ আরও তীব্র হয়েছে।
এবি/এইচএন