সাফ নারী চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড় স্বপ্না রানীর বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে। রানীশংকৈল উপজেলার বলিদ্বরা শিয়ালডাঙ্গী গ্রামে অবহেলিত এ নারী ক্রীড়াবিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় করুণ অবস্থা। পুরনো মাটির ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে একটু ফুটো। সেটি আবার খড়ের বেড়া দিয়ে আটকানো।
এলোমেলো এ ঘরে থাকা মাঝারি সাইজের একটি টিনের বাক্সে রাখা হয় স্বপ্নার নানা সময়ে পাওয়া বিভিন্ন ট্রফি, সম্মাননা স্মারক, মেডেল।
নিজের মেধা ও শ্রম উজাড় করে মাঠে খেলে দেশের সুনাম কুড়ালেও নিজের ভাগ্য বদলাতে পারেননি প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ওঠে আসা নারী ফুটবলার স্বপ্না।
ভালো একটি ঘরে নিজের অনুপ্রেরণার জন্য হলেও তার এসব অর্জন পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখবে এমন জায়গাটুকুও নেই তার। এক প্রকার বাক্সবন্দি হয়ে থাকে চ্যাম্পিয়ন এই খেলোয়াড়ের যাবতীয় অর্জন।
ফুটবলার স্বপ্না রানীর বাবা নিরেন বাবু বলেন, আমার মেয়ে যখন ফুটবল খেলা শুরু করে তখন গ্রামের অনেকে অবজ্ঞা করেছিলেন। টিটকারিমূলক কথাও বলেছিলেন। শুধু মেয়েকে নয়, আমাকেও বলেছিলেন মেয়েকে নাকি ভাঙা টিভিতে দেখা যাবে। ওসবে কান না দিয়ে মেয়েকে অনুপ্রেরণা দিয়েছি। গ্রামবাসী আমার মেয়ের সফলতায় খুশি হয়েছেন। মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন মানে আমিও চ্যাম্পিয়ন। আজ সারাদেশ আমাদের মেয়েদের নিয়ে গর্ব করছে।
কিন্তু এত অর্জনেও শঙ্কা থেকে তিনি বলেন, দেশের ফুটবল এখনো অনুন্নত। তাই মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত। মানুষ মনে করে এখন আমাদের অনেক টাকা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মেয়ের অর্জনগুলো সাজিয়ে রাখবো এমন একটি আসবাবপত্রও নেই। ওরা দেশের জন্য খেলে। তাই সরকার যেন ওদের সহযোগিতা করে। যাতে ওরা মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে। যারা দেশের জন্য খেলে সরকার যাতে তাদের একটা নিশ্চিত ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে ভূমিকা রাখে এটিই চাওয়া৷
স্বপ্নার মা সাবিলা রানী জানান, ডিসের লাইন না থাকায় মেয়ের খেলা দেখতে পারিনি। ছেলে এসে যখন বললো মেয়েরা আবারো সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আমি খুব আনন্দিত হয়েছি। খবরটা মুহূর্তে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এ আনন্দ বলে বুঝাবার মতো না।
তিনি আরো বলেন, এমন জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে একদিন দেশের ফুটবলের অনেক নাম ডাক হবে। তখন নিশ্চয় স্বপ্নার মতো খেলোয়াড়দের কদর বাড়বে।
স্থানীয় রাঙাটুঙ্গী প্রমিলা নারী ফুটবল একাডেমি থেকে উঠে আসা বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় স্বপ্না রানী।
একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা তাজুল ইসলাম বলেন, নারী ফুটবলাররা যে অর্জন এনে দিচ্ছে, এতে আমরা গর্বিত। তাদের স্থায়ী জীবিকার জন্য কিছু করা দরকার। যাতে খেলার পরে তাদের নিশ্চিত জীবিকার ব্যবস্থা হয়। আমরা চাই যেন স্বপ্না রানীদের অর্জনগুলো অনাদরে পড়ে না থাকে।
জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা বলেন, নারী খেলোয়াড়দের মধ্যে যারা আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল তাদের কীভাবে সহায়তা করা যায় সে দিকটি দেখা হচ্ছে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ