নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। আলুর কেজি ৩৫-৩৬ টাকা, পেঁয়াজের দাম ৬৪-৬৫ টাকা এবং প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে সরকারের এই মূল্য বেঁধে দেওয়ার একদিন পর সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার দেশের বাজারে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। ব্যবসায়ীরা নতুন দামের নির্দেশনা পেলেও, কেউই মানছেন না।
শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মালিবাগ এলাকার একাধিক বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের নির্ধারণ করা মূল্যে আমরা কিনেও আনতে পারিনি, তাহলে ওই দামে বিক্রি করবো কী করে?
কাঁচাবাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, যথারীতি আলু বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা করে, যেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা করে। এছাড়াও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা করে, যেখানে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। এছাড়াও ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি হালি ৫৫ টাকা করে, যেখানে সরকারি নির্ধারিত দাম ৪৮ টাকা।
আলুর দাম প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, আলু বর্তমানে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা পাইকারি দরেই কিনে আনতে হয়েছে। ৪৪-৪৫ টাকার নিচে কিনা কঠিন, তাহলে সরকার নির্ধারিত ৩৫ টাকা করে বিক্রি করবো কী করে? আমরা কি লস দিয়ে বিক্রি করবো? আমরা যদি কমে কিনতে পারি তাহলে অবশ্যই কমে বিক্রি করবো।
তিনি আরও বলেন, সরকার নির্ধারিত দামের তালিকা এখনও আমাদের কাছে আসেনি। আমরা যদি ওই দামে কিনতে পারি তাহলে তো বেশি দামে বিক্রি করার কোনো মানে হয় না। দাম কম থাকলে বরং বিক্রি আরও বেশি হয়।
অন্যান্য দ্রব্যের দাম প্রসঙ্গে কামাল বলেন, আজকের বাজারে বেগুন এক কেজি ১০০ টাকা, করল্লার কেজি ৬০, পটল ৪০, ঢেঁড়স ৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও শসা কেজি ৫০ টাকা, ফুলকপি পিস ৩০ টাকা, বাঁধাকপি পিস ৩০ টাকা। বাজারের দামটা মোটামুটি স্বাভাবিকই বলা যায়। তবে শুধুমাত্র বেগুনের দামটা বেড়েছে। ৬০ টাকা ৭০ টাকা ছিল সেটি এখন ১০০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে।
সরকার নির্ধারিত দাম অবগত কি না প্রসঙ্গে মনির খান বলেন, বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই অবগত। বিষয় হলো সরকার নির্ধারিত এই দাম আমাদের কাছে আসতে সময় লাগবে অন্তত এক সপ্তাহ।
তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত পেঁয়াজের যে দাম, সে দামে আমরা আজকে কিনেও আনতে পারিনি। তাহলে কীভাবে সেই দামে বিক্রি করবো?
আলুর যে সিন্ডিকেট, ভোক্তা পর্যায়ে আসার আগেই দামের পাঁচটি স্তর রয়েছে। ৩০ টাকার আলু যদি এই পাঁচটি স্তরে ২ টাকা করেও লাভ করা হয়, তারপরও ১০ টাকা বেশি দামে আমাদের বিক্রি করতে হবে।
দাম বাড়লে খুচরা বাজারে সাথে সাথে দাম বেড়ে যায় প্রসঙ্গে এই ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের খুচরা বাজারে যে কোনো পণ্যের দাম আড়তের সাথে মিলিয়ে বিক্রি করতে হয়। আড়ৎ যদি রাতারাতি দাম কমিয়ে দেয়, তাহলে আমরাও কমে বিক্রি করতে পারি। আবার আরও যদি রাতারাতি দাম বাড়িয়ে দেয়, তাহলে আমাদেরও বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে। দামটা আসলে সরাসরি আড়তের সাথে নির্ধারিত।
ডিম ব্যবসায়ী মো. মকবুল মিয়া বলেন, প্রতি ডজন ডিম বিক্রি করছি ১৫৫ টাকা করে, হালিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা দরে। সরকারের নতুন দাম নির্ধারণ বিষয়ে কিছুই জানি না। আমরা যদি কমদামে কিনে আনতে পারি, তাহলে কম দামে বিক্রি করতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
তিনি আরও বলেন, খুচরা বাজারে তদারকি করার আগে পাইকারি বাজার এবং আড়ৎগুলোতে কী দামে বিক্রি হচ্ছে, সেটি আপনাদের দেখা উচিত।
মকবুল মিয়া আরও বলেন, শুনেছি সরকার আলু পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। বাজারে এসে তার কোনো প্রতিফলন দেখছি না। যেখানে আলু বিক্রি করতে বলা হয়েছে ৩৫ টাকা করে, সেখানে আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি।
এখনও দামের কতটুকু পার্থক্য ভাবাই যায় না। আজকে যদি দাম না কমিয়ে উল্টো বাড়ানো হতো, তাহলে ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়তি দামে বিক্রি শুরু হয়ে যেতো। বর্তমানে ব্যবসায়ীদের চরিত্রটাই এমন হয়ে গেছে।
বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই জানিয়ে এই ডিম বিক্রেতা বলেন, কেউ কারও নির্দেশনা মানে না। যে যেভাবে পারছে দাম বাড়াচ্ছে, আর বিক্রি করছে। মানুষ তাদের কাছে অনেকটাই জিম্মি বলেও জানান তিনি।
বাজার করতে আসা ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো না। মানুষের আয়-ইনকাম কমে গেছে। অসংখ্য মানুষ বেকার হয়ে ঘুরছে। এই অবস্থায় বাজার যদি এমন উর্ধ্বমুখী হয়, তাহলে আমরা বাজার করবো কী করে? আমাদের সংসার কী করে চলবে?
এবি/এইচএন