ক্রীড়া ডেস্ক: ব্যাটিং ব্যর্থতায় আবারো হারের মুখ দেখলো বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার কাছে ২১ রানে হেরেছে সাকিব আল হাসানের দল। সুপার ফোরে টানা দুই হারে এশিয়া কাপ থেকে কার্যত বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেলো লাল-সবুজ জার্সিধারীদের।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ২৫৭ রান সংগ্রহ করে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৩৬ রানে থেমেছে বাংলাদেশ। টাইগারদের হয়ে সর্বোচ্চ ৮২ রানের (৯৭ বল) ইনিংস খেলেছেন তাওহীদ হৃদয়।
এদিন লক্ষ্য খুব বড় ছিল না। ওপেনিংয়ে নেমে আরও একবার ভালো সূচনাও এনে দিয়েছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও নাইম শেখ। ফলে ১১তম ওভারে বিনা উইকেটে পঞ্চাশ পার করে বাংলাদেশ। ওপেনিংয়ে জুটি ভাঙে ৫৫ রানে।
১১.১ ওভারে আউট হন মিরাজ। ২৯ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ২৮ রান করে লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকার শিকার হন তিনি। এক ওভার পরে আবারো আঘাত হনেন শানাকা। উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন নাইম। ভালো শুরু পেয়েও ইনিংসও বড় করতে পারেনি এই ওপেনার। আউট হওয়ার আগে করেন ৪৬ বলে ২১ রান।
সাকিব আল হাসানও দলকে ভরসা দিতে পারেননি। আরও একবার 'মিনি মালিঙ্গা' খ্যাত মাথিসা পাথিরানার শিকার হন টাইগার অধিনায়ক। পাথিরানার গতিতে বিভ্রান্ত হয়ে ঠিক গ্রুপপর্বের ম্যাচের মতোই সাকিব (৭ বলে ৩) ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষককে।
ক্রিজে সেট হয়েও আরও একবার হতাশ করেছেন লিটন দাস। ২৪ বলে ১৫ রান করে ওয়াল্লেলগার বলে উইকেটরক্ষকের ক্যাচ হন ডানহাতি এই ব্যাটার। দলীয় ৮৩ রান তুলতে ৪ ব্যাটার ফেরেন সাজঘরে।
এরপর দলের বিপর্যয়ে হাল ধরেন মুশফিকুর রহিম আর তাওহিদ হৃদয়। জুটিতে তারা ১১২ বলে ৭২ রান যোগ করেন। ৪৮ বলে ২৯ করে মুশফিক শানাকার বলে ক্যাচ দিলে ভাঙে এই জুটি।
তারপরও হৃদয় আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। ৪২ বলে যখন ৬২ দরকার ছিল বাংলাদেশের। হৃদয় তখনও আশা হয়ে আছেন। কিন্তু থিকসানাকে ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই তার প্যাডে বল লাগলে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। আম্পায়ার্স কলে ফিরতে হয় হৃদয়কে। ৯৭ বলে ৮২ রানের ইনিংসে ৭টি চারের সঙ্গে একটি ছক্কা হাঁকান হৃদয়।
তিনি ফেরার পরই জয়ের আশা শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের। নাসুম আহমেদ ১৪ বলে ১৫ আর হাসান মাহমুদ ৭ বলে ১০ করে পরাজয়ের ব্যবধানই যা কমিয়েছেন। ৪৮.১ ওভারে ২৩৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
শ্রীলঙ্কার পক্ষে ৩টি করে উইকেট শিকার করেন থিকসানা, শানাকা আর পাথিরানা।
এর আগে সাদিরা সামারাবিক্রমার ঝোড়ো ৯৩ রানে ভর করে ৯ উইকেটে ২৫৭ রান তোলে শ্রীলঙ্কা।
এদিন শুরু থেকেই দুর্দান্ত বোলিং করছিলেন তাসকিন আহমেদ এবং শরিফুল ইসলাম। তাসকিনের প্রথম তিন-চারটি বল তো চোখেই দেখছিলেন না লঙ্কান ওপেনাররা। এলবিডব্লিউ আউটও হয়েছিলেন পাথুম নিশাঙ্কা। যদিও ডিআরএস নিয়ে বেঁচে যান তিনি।
ওই সময় আউট না হয়ে বাংলাদেশের বোলারদের ওপর চড়ে বসার চেষ্টা করেন লঙ্কান দুই ওপেনার। যে কারণে দেখা গেলো, ৫.৩ ওভার পর্যন্ত ৩৪ রানের জুটি গড়ে ফেলেন তারা।
পেসার হাসান মাহমুদ ব্রেক থ্রো এনে দেন। নিজের করা দ্বিতীয় ওভারেই দিমুথ করুনারত্নেকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন তিনি। ১৭ বলে ১৮ রান করে বিদায় নেন করুনারত্নে।
এরপর উইকেটে বেশ ভালোভাবেই থিতু হয়ে যান পাথুম নিশাঙ্কা এবং কুশল মেন্ডিস। নিঃসন্দেহে বর্তমান সময়ে শ্রীলঙ্কার দুই সেরা ব্যাটার তারা। এই জুটি নিজেদের সেভাবেই প্রমাণ করতে শুরু করে। যদিও বাংলাদেশের ফিল্ডারদের মিস ফিল্ডিং তাদের ভালো করার পেছনে অনেকটাই অবদান রাখছিলো।
শেষ পর্যন্ত পাথুম নিশাঙ্কা এবং কুশল মেন্ডিসের ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা জুটিকে ভাঙতে সক্ষম হন পেসার শরিফুল ইসলাম। ২৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে শরিফুলের বলে এলবিডব্লিউ আউট হন পাথুম নিশাঙ্কা। ৬০ বল খেলে ৫ বাউন্ডারির সাহায্যে ৪০ রান করেন তিনি।
এরপর হাফ সেঞ্চুরি করা কুশল মেন্ডিসকেও তুলে নেন শরিফুল। ৭৩ বলে ৬ চার আর ১ ছক্কায় ৫০ রান করার পর মেন্ডিসকে তাসকিন আহমেদের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন বাঁ-হাতি এই পেসার।
এরপর উইকেট শিকারে মেতেছেন তাসকিন। চারিথ আসালাঙ্কা (১০) তাকে তুলে মারতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বল উঠে যায় আকাশে। মিডঅন থেকে দৌড়ে এসে ক্যাচ নেন সাকিব। ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকেও সেট হতে দেননি হাসান মাহমুদ। ১৬ বলে ৬ রান করে টাইগার পেসারের দ্বিতীয় শিকার হন লঙ্কান অলরাউন্ডার।১৬৪ রানে ৫ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
সেখান থেকে ষষ্ঠ উইকেটে সাদিরা সামারাবিক্রমা আর দাসুন শানাকা ৫৭ বলে ৬০ রান যোগ করে দেন। ৪৭তম ওভারে শানাকাকে (৩২ বলে ২৪) বোল্ড করে এই জুটি ভাঙেন হাসান মাহমুদ। তবে ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত খেলে যান সাদিরা সামারাবিক্রমা। ৭২ বলে ৯৩ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন তিনি, যে ইনিংসে ৮টি চারের সঙ্গে ২টি ছক্কাও হাঁকান।
বাংলাদেশের হয়ে ৩টি করে উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদ। ২ উইকেট শিকার করেন শরিফুল ইসলাম। তাছাড়া সাকিব-নাসুম উইকেট শূন্য থাকলেও বেশ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন।
এবি/এইচএন