মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দামে স্বস্থি থাকলেও লেবু-সয়াবিন আর যানজটে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। রমজানের ১ম, ২য় ও ৩য় দিন শহরের নতুন বাজার, পুরান বাজার, সেন্ট্রাল রোড, পোষ্ট অফিস রোডসহ শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতা ও সাধারন মানুষের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, অন্যান্য বছরে রমজানের শুরুতেই নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে আকাশচুম্বি হয়ে যেত এবার এর কিছুটা ব্যাতিক্রম হয়েছে। প্রশাসনের নিয়মিত বাজার মনিটরিং এবং ব্যাক্তি উদ্যোগে দুটি বিনা লাভের বাজার স্থাপন করায় এ বছর নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন সাধারন ক্রেতারা। তবে বেশি দামের কারণে রমজানের ইফতারিতে লেবুর শরবত খেতে না পারায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রোজাদাররা। সেই সাথে সারা দেশের ন্যায় সয়াবিন তেলের কিছুটা সংকটে ভূগছেন তারা। সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ ঢালছেন শহরের যানজট নিয়ে। বিশেষ করে কয়েক হাজার ব্যাটারী চালিত মিশুক আর টমটমের দাপটে শহরে আসা লোকদের চলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। সেই সাথে শহরের মুল সড়কে কয়েকটি বাস কাউন্টার যানজটে যেন আগুনে ঘি ঢাকার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে পথচারি ও সাধারন মানুষের অভিযোগ।
রোজাদার, সাধারন মানুষ, খুচরা ও পাইকারী বিক্রেতারা জানান, চায়ের পর এ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় লেবু। এখানকার উঁচু-নিচু পাহাড়ে নানান জাতের লেবু চাষ করা হয়। এসব লেবুর কদর ও চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। তবে প্রবিত্র মাহে রমজানে লেবুর চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুন। সবাই চায় লেবুর এক গ্লাস শরবত দিয়ে গলা ভেজাতে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুম থাকায় চাহিদানুযায়ী নেই লেবুর উৎপাদন। উৎপাদনে ভাটা পড়ায় এবং চাহিদার সাথে বাজারে সরবরাহ কমায় দুই/তিন গুন বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে লেবুকে।
বাগান মালিকরা জানিয়েছেন- লেবু সাধারণত বৃষ্টির সিজনে বেশি উৎপাদন হয়ে থাকে। এখন বৃষ্টিপাত না থাকায় লেবু উৎপাদন কম হচ্ছে। বাজারে এখন প্রতি হাজার লেবু পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ হাজার টাকায়।
লেবু চাষী মো: জলিল খান বলেন, রমজানকে সামনে রেখে কিছু বাগানী অতিরিক্ত পরিশ্রম করে লেবু ধরে রেখেছেন। বছরের অনান্য সময় যথাযত মুল্য না পেলেও এই সময়ে বেশ ভালোই দাম পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে প্রতি হালি লেবু পাইকারী ৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরা ৬০ টাকা থেকে ১২০টাকা পর্যন্ত সাইজ ভেদে বিক্রি হচ্ছে।
শহরতলীর বাসিন্ধা মোঃ মোসাহিদ আলম জানান, রমজানে লেবু আর সয়াবিন তেলের চাহিদা একটু বেশি থাকে। কিন্তু বাজারে লেবুর দাম অতিরিক্ত আর সয়াবিন তো পাওয়াই যাচ্ছে না। পাম ওয়েল দিয়েই এবার রমজানের ইফতারির ভাজাপোড়া বানাতে হচ্ছে। সেই সাথে শহরের মাত্রাতিরিক্ত টমটমের কারনে শহরের যানজট রোজাদার-পথচারিদের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব টমটমে টিনেজ বয়সের অদক্ষ চালকের কারণে প্রায় সময়’ই দুর্ঘটনায় কবলে পড়তে হচ্ছে পথচারিদের। অন্যদিকে শহরের হবিগঞ্জ সড়কে কয়েকটি বাস কাউন্টার যানজটের অন্যতম কারণ বলে যোগ করেন তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইসলাম উদ্দিন আমার বাঙলাকে বলেন, ‘রমজানের আগ থেকেই আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় করেছি। এখানে সকল নিত্যপণ্যের যথেষ্ট সরবরাহ রয়েছে। এবং দামও সহনীয় পর্যায়ে আছে। সয়াবিনের কিছুটা সমষ্যা ছিল এখন সেটা কেটে গেছে। তারপরও কেউ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে বিভিন্ন আইনে জরিমানা করা হচ্ছে। এছাড়া লেবুর সিজন না থাকায় এবং চাহিদা বাড়ায় দাম কিছুটা বেশি। যানজটের জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি। তাদেরকে কিছু দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নিয়ম না মেনে চললে আমরা মধ্য রমজানেই মাঠে নামব। যাতে ঈদের কেনাকাটায় শহরে আসা মানুষ ভুগান্তিতে না পড়েন।’ প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও যোগ করেন তিনি।
আমারবাঙলা/ইউকে