গাজীপুর প্রতিনিধি: গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নতুন ভবন খুব শীঘ্রই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। ঢাকার বাইরে প্রথম গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ই-পাসপোর্টের (ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট) কার্যক্রম শুরু হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম এবং বিশ্বে ১১৯তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু হয়।
ইতিমধ্যে আগারগাঁও, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, ঢাকা সেনানিবাস, বাংলাদেশ সচিবালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ দেশের ৬৪ জেলায় ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম চালু আছে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকা হিসেবে গাজীপুর জেলা একটি অন্যতম দায়িত্বশীল জেলা হিসেবে চিহ্নিত।
এই চিহ্নিত জেলায় বর্তমানে কর্মরত আছেন, উপ-পরিচালক মো. আফজাল হোসেন, তার সাথে কথা বলে জানা যায়, মানব সেবায় তাদের মূল লক্ষ্য ই-পাসপোর্টের সেবার মান আরো বাড়াতে হলে মানব ভোগান্তির দিক চিন্তা করে আগে তাদের সমস্যাগুলো দূর করতে হবে। কারণ গাজীপুর একটি শিল্প এলাকা এই গাজীপুর জেলায় প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ লক্ষ লোক বসবাস করে।
অনেক মানুষের স্বপ্ন ইচ্ছে পূরণের আশায় ই-পাসপোর্ট করতে আমাদের কাছে ছুটে আসেন, পাসপোর্ট করার মধ্যেও বিভিন্ন উদ্দেশ্য থাকে যেমন প্রবাসে চাকরির উদ্দেশ্যে, ঘোরাফেরার উদ্দেশ্যে আবার কেউবা চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশে যেতে হয়। ই-পাসপোর্ট এমন একটি ইম্পর্টেন্ট জিনিস আমাদের পার্শ্ববর্তী ইন্ডিয়াতে যেতে হলেও পাসপোর্ট এর প্রয়োজন হয়।
তাই ই-পাসপোর্ট সেবার মান আরো বেশি বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ও পরিবেশ সুন্দর করার জন্য বর্তমান ৬০/১, উওর রাজবাড়ী (টাংকিরপাড়), জয়দেবপুর, গাজীপুর থেকে স্থান পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নতুন পাসপোর্ট অফিসের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে বলে জানায়। আমরা খুব শীঘ্রই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নতুন পাসপোর্ট অফিস চালু করতে যাচ্ছি।
গাজীপুরের নতুন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের ঠিকানা, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ওয়ারলেস, চৌরাস্তা, জয়দেবপুর, গাজীপুর।
যে কারণে অনেক দূর দূরান্ত থেকে পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তিদের প্রথমত সমস্যা রাস্তাঘাটের যানজট নিয়ে। বিভিন্ন দূর দূরান্ত থেকে আসা ইমারজেন্সি পাসপোর্ট করা কর্মজীবী ব্যক্তিদের নির্ধারিত টাইমের ভিতর এসে সবকিছু করতে হয়।
রাস্তার যানজটের জন্য অনেক সময় ভোগান্তির শিকার হতে হয়, তাই পাসপোর্ট অফিসটি যানজট মুক্ত জায়গায় হলে সবার জন্য ভালো হবে বলে আশা করি। আফজাল হোসেন আরো জানায়, অনেক সময় দেখা যায় পাসপোর্ট করা ব্যক্তিরা দালালদের ফান্দে পড়ে টাকা পয়সা দিয়ে পাসপোর্ট হাতে পেতে অনেক সময় চলে যায়, পড়তে হয় বিভিন্ন চিন্তার ভিতর।
তাই এসব দালালদের ফান্দে না পড়ে, পাসপোর্ট সংক্রান্ত যেকোনো বিষয় নিয়ে সরাসরি অফিসে এসে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ই-পাসপোর্ট হলো একটি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, যাতে একটি এমবেডেড ইলেকট্রনিক চিপ রয়েছে। এ চিপের মধ্যে রয়েছে বায়োমেট্রিক তথ্য, যা পাসপোর্টধারীর পরিচয় প্রমাণের জন্য ব্যবহার করা হয়। এতে মাইক্রোপ্রসেসর বা চিপ এবং অ্যান্টেনাসহ স্মার্টকার্ড প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। পাসপোর্টের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চিপে সংরক্ষণ করা হয়।
ই-পাসপোর্টে যেসব বায়োমেট্রিক তথ্য নেওয়া হয় সেসব হলো- ছবি, আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) ও আইরিশ। ইলেকট্রনিক বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থা (ই-বর্ডার) দিয়ে পাসপোর্ট চিপের বাইরের বায়োমেট্রিক বৈশিষ্ট্যগুলোর তুলনামূলক যাচাই করা হয়। পাবলিক কি ইনফ্রাস্ট্রাকচারের (পিকেআই) মাধ্যমে পাসপোর্ট চিপে থাকা তথ্য যাচাই করা হয়। তাই জালিয়াতি করা কঠিন। সাধারণ পাসপোর্ট থেকে ই-পাসপোর্টের পার্থক্য হলো, এতে মোবাইল ফোনের সিমের মতো ছোট ও পাতলা আকারের চিপ থাকে।
এতে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকবে, যার অনেক বৈশিষ্ট্য থাকবে লুকানো অবস্থায়। ই-পাসপোর্ট করার সময় মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) তথ্য ভান্ডারে পাওয়া তথ্যগুলো ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে। সাধারণ পাসপোর্টের মতো ই-পাসপোর্টের আবেদনও অনলাইনে পাওয়া যাবে। চাইলে পিডিএফ ফরম নামিয়ে নিয়ে হাতেও পূরণ করা যাবে। ফরম পূরণের সময় ছবি ও সত্যায়িত করা লাগবে না। তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আবেদনপত্র গ্রহণের সময় আবেদনকারীর ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের ছবি নেওয়া হবে। সেসব তথ্য চিপে যুক্ত হবে। ইমিগ্রেশন পুলিশ বিশেষ যন্ত্রের সামনে পাসপোর্টের পাতাটি ধরতেই সব তথ্য বেরিয়ে আসবে। ই-পাসপোর্ট এর পাতা দুই ধরনের। একটি ৪৮ পাতার, অন্যটি ৬৪ পাতার। সাধারণ, জরুরি ও অতি জরুরির জন্য ফি তিন ধরনের। দুই দিনের মধ্যে পাসপোর্ট দেওয়ার নিয়ম চালু হয়েছে। এ জন্য ফিও বেশি গুণতে হবে। ই-পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে ফি জমা দিয়ে ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করা যাবে।সাইটে বাংলা বা ইংরেজি ভাষা নির্বাচন করে নেওয়ার সুবিধা আছে।
সেখানে শুরুতেই অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন, নতুন/রি-ইস্যু বাটন পাওয়া যাবে। এখানে ক্লিক করে সরাসরি আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। এর আগে দেখে নিতে পারেন ই-পাসপোর্ট আবেদনের ৫টি ধাপ। একটি ধাপ হচ্ছে বর্তমান বসবাসরত জেলাতে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু হয়েছে কি না, তা দেখা। এর পরেরগুলো হচ্ছে অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন ফরম, পাসপোর্ট ফি পরিশোধ, ছবি ও ফিঙ্গারপ্রিন্টের জন্য পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ ও পাসপোর্ট অফিস থেকে ই-পাসপোর্ট সংগ্রহ। এর মধ্যে খেয়াল রাখতে হবে, কাগজপত্র ও ব্যক্তিগত তথ্য যাচাই, আবেদনকারীর ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ ও আইরিশের ছবি গ্রহণ, যথাযথভাবে পাসপোর্ট ফি পরিশোধ হয়েছে কি না এবং তালিকাভুক্তির পর সরবরাহ করা ডেলিভারি ফি সংরক্ষণ।
পাসপোর্ট গ্রহণের সময় ডেলিভারির রসিদ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া সর্বশেষ পুরোনো পাসপোর্ট যদি থাকে সাথে করে নিতে হবে। ই-পাসপোর্ট আবেদন অনলাইনে দাখিল করার সময়ে পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করা যাবে। পাসপোর্ট ফি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হিসাব করা হবে।
বাংলাদেশের পাসপোর্ট অফিসের আবেদন দাখিলের ক্ষেত্রে অনলাইনে পেমেন্ট করা যাবে। অনলাইন পেমেন্ট ছাড়াও ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া এবং ঢাকা ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া যাবে। সোনালী ব্যাংকের পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্ট দেওয়া হয় এবং এখন পর্যন্ত চালু করা অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি হলো স্টারকার্ড, ভিসাকার্ড, কিউ-ক্যাশ, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বিকাশ ও ডিবিবিএল নেক্সাস এ অনলাইনে পেমেন্ট করতে পারবেন। (৪৮ পৃষ্ঠা ৫ বছর মেয়াদি ২১ দিনে রেগুলার ডেলিভারি ৪ হাজার ২৫ টাকা, ১০ দিনে এক্সপ্রেস ডেলিভারি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা, ২ দিনে সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা। ৪৮ পৃষ্ঠা ১০ বছর মেয়াদি ২১ দিনে রেগুলার ডেলিভারি ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, ১০ দিনে এক্সপ্রেস ডেলিভারি ৮ হাজার ৫০ টাকা ও ২ দিনে সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা)-(৬৪ পৃষ্ঠা ৫ বছর মেয়াদি ২১ দিনে রেগুলার ডেলিভারি ৬ হাজার ৩২৫, ১০ দিনে এক্সপ্রেস ডেলিভারি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা, ২ দিনে সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি ১২ হাজার ৭৫ টাকা, ৬৪ পৃষ্ঠা ১০ বছর মেয়াদি ২১ দিনে রেগুলার ডেলিভারি ৮ হাজার ৫০, ১০ দিনে এক্সপ্রেস ডেলিভারি ১০ হাজার ৩৫০, ২ দিনে সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি ১৩ হাজার ৮০০ টাকা) তবে ১৮ বছরের কম ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকরা শুধুমাত্র ৫ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট পাবেন।
ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা জন্ম নিবন্ধন সনদ (বিআরসি) অনুযায়ী। অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছরের কম) আবেদনকারী, যার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই, তার মা বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। ই-পাসপোর্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এর মাধ্যমে ই-গেট ব্যবহার করে খুব দ্রুত ও সহজে ভ্রমণকারীরা যাতায়াত করতে পারবেন। ফলে বিভিন্ন বিমানবন্দরে ভিসা চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না।
এর মাধ্যমেই ইমিগ্রেশন দ্রুত হয়ে যাবে। ই-গেটের নির্দিষ্ট স্থানে পাসপোর্ট রেখে দাঁড়ালে ক্যামেরা ছবি তুলে নেবে। থাকবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ের ব্যবস্থাও। সব ঠিক থাকলে তিনি ইমিগ্রেশন পেরিয়ে যেতে পারবেন। কোনো গরমিল থাকলে জ্বলে উঠবে লালবাতি। কারও বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকলে, সেটিও জানা যাবে সঙ্গে সঙ্গে।
কর্মকর্তারা বলছেন, আপাতত ই-পাসপোর্টের পাশাপাশি প্রচলিত এমআরপি পাসপোর্ট ব্যবস্থাটিও বহাল থাকবে। তবে নতুন করে আর কাউকে এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে না। বর্তমানে এমআরপি পাসপোর্টধারীরা যখন নবায়ন করতে যাবেন, তখন তাদেরকেও ই-পাসপোর্ট দেয়া হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে সব এমআরপি পাসপোর্ট তুলে নেয়া হবে।
এবি/ওশিন