অন্তরা আফরোজা: দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি বলতে গেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে অনড়। কিন্তু সরকার ইচ্ছা করলেই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে দাবী অনুযায়ী কাজটি করতে পারছেনা। আর এই দাবি আদায়ের জন্য বিএনপি হরতাল-অবরোধের পথ বেছে নিয়েছে। সেক্ষেত্রে বিএনপির এই পন্থাটি সাধারণ মানুষকে বেশ ভোগান্তিতে ফেলে দিয়েছে।
তফসিল অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে আগামী ৭ জানুয়ারি ২০২৪। এতে করে প্রতি সপ্তাহে এখন নিয়ম করে সাধারণ মানুষকে হরতাল-অবরোধের ভোগান্তিতে ভুগতে হচ্ছে। আর এই ভোগান্তির প্রভাবটা বেশি পড়ছে শিক্ষার্থীদের উপর। হরতাল অবরোধের এই ঝামেলায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজস্ব বাস দিচ্ছে না। কারণ প্রায় প্রতিদিনই সারাদেশে গড়ে ৮-১০ টা করে বাস পোড়ানো হচ্ছে, এই ভয়ে। এতে করে বাস না থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আসা-যাওয়া করতে যেমন অসুবিধা হচ্ছে, তেমনি তারা বাস পোড়ানোর ভয়ে স্কুলে-কলেজে যেতেও চাচ্ছে না।
অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ডিসেম্বরে পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও নির্বাচনের জন্য তা এগিয়ে নভেম্বরে করা হয়। কিন্তু এসব হরতাল- অবরোধের কারণে তাও নিতে পারেনি। ২০২৩ সালে ৪৫তম বিসিএস এর লিখিত পরীক্ষা গত ২৭ নভেম্বর হবার কথা থাকলেও হরতাল-অবরোধের কারণে তা স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। এতে করে যেমন শিক্ষার্থীদের মাঝে একটা মানসিক ধীরগতি চলে এসেছে; তেমনি অনেক ক্ষেত্রে পড়াশোনা থেকেও তারা পিছিয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে নিরাপত্তা জনিত কারণে অভিভাবকেরা শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছে। গত কয়েকদিনের অবস্থা পর্যালোচনা করে বলা যায়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল গুলোতে শিক্ষার্থীরা বেশ সীমিত আকারে ছিলো। আশু নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা নভেম্বরে হবার কথা থাকলেও এখন তা অনেক ক্ষেত্রে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে সব থেকে বেশি ঝামেলার মধ্যদিয়ে যেতে হচ্ছে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে মাধ্যমিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, কিন্তু দেশের বর্তমান অবস্থা তার সুস্পস্ট ইঙ্গিত দেয়না। অন্যান্য বছরগুলোতে এ সময় সারা দেশের স্কুল-কলেজগুলোতে পাঠ্যবই পাঠানো হয়ে যায়, অথচ এ বছর অবরোধের কারণে সেসব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
তাই আমার মতে, শিক্ষাখাতকে রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে আলাদা রাখা দরকার। শিক্ষা ব্যবস্থা রাজনীতির কোন অংশের মধ্যে পড়ে না। অযথাই শিক্ষার্থীদের এসব ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এসব হরতাল অবরোধের কারণে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা, বার্ষিক পরীক্ষা, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন, ক্লাস এসব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে করে আমাদের মতো শিক্ষার্থীরা যেমন সঠিক সময়ের শিক্ষার আলো থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, তেমনি দেশের জন্য তারা বোঝা হয়ে উঠ্ছে।
এরূপ অবস্থার অবসান খুব জরুরি।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী