নিজস্ব প্রতিবেদক: রমজান মাস আসলে সেহরি-ইফতারের অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়া বাংলাদেশে যেন অনেকটা স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে গেলেই পাওয়া যাচ্ছে বাড়তি দামের উত্তাপ।
সোমবার (১১ মার্চ) রমজানের আগের দিন ইফতারে শরবতে বেশি ব্যবহার করা লেবুর দাম যেন আকাশ ছুঁয়েছে।
অন্যান্য সময় যেখানে লেবু হালির দাম হয় ২০-৩০ টাকা, সেখানে বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৫০ টাকায়। এছাড়া বড় আকারের লেবু প্রতি পিস ২০ টাকা করেও বিক্রি হচ্ছে কোথাও কোথাও। সে হিসেবে, এক হালি লেবুর দাম হয়েছে ৮০ টাকা।
গরম সবে পড়তে শুরু করেছে। এ সময় ইফতারে রোজাদাররা শসা-খিরাই রাখার চিন্তা করলেও দাম শুনে পকেটের হিসাব মেলাতে হচ্ছে। শসার দাম কোথাও কোথাও ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। কোথায়ও আবার পাওয়া যাচ্ছে সর্বনিম্ন ৮০ টাকায়।
কেবল লেবু-শসাই নয়, রমজানকে সামনে রেখে বাজারে সবজি, মাছ-গোশত, বরই-পেয়ারা থেকে খেজুর-নাসপাতি সব পণ্যে লেগেছে বাড়তি দামের তাপ। ফলে পছন্দের জিনিস কিনতে এসে না কিনে ফিরে যাচ্ছেন কেউ কেউ। আবার কেউ বাজেট সংকটে চাহিদার তুলনায় কম কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
রাজধানীর পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে সব ধরনের বিক্রেতারা দাবি করছেন, আড়তে পণ্য আছে। তবে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই বাড়তি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়েছে। কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, অন্য দেশ পণ্যের দাম কমালেও রমজানে বাংলাদেশে দাম বাড়ছে। তাই সরকারের মনিটরিং বাড়ানোর প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন ক্রেতারা।
লক্ষ্মীবাজার ডিআইটি মার্কেটের সামনে শসা, লেবু, পুদিনা ও লেটুস পাতার ভ্যান নিয়ে আসা আব্দুর রশীদ জানান, পণ্যগুলো কারওয়ান বাজার থেকে কিনেছেন। তবে সবগুলো পণ্য বাড়তি দামে কিনতে হয়েছে।
তিনি বলেন, গতকাল শসা কিনেছি ৫০ টাকা কেজি। আজ নিলো ৬৫ টাকা কেজি। একদিনে কেজিতে ১৫ টাকা বেশি লাগছে। বিক্রি করছি ৮০ টাকা।
এই বিক্রেতার জানান, কমপক্ষে ১০ জন ক্রেতা লেবু আর শসার দাম শুনে না কিনে চলে গেছেন। যাওয়ার সময় বিড়বিড় করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কয়েকজন।
৬টি বড় লেবু কিনলেন গৃহিণী শবনম। তিনি জানান, দাম বেশি হলেও রোজার জন্য কিনতে বাধ্য হচ্ছি। ২ দিন আগেও এ লেবু ৪০ টাকায় কিনেছি। আজকে হালি ৮০ টাকা।
ভ্যানে সবজি বিক্রি করেন এনামুল হোসেন। সেখানে দেখা যায়, অন্য সবজির পাশাপাশি গোল এবং লম্বা ২ ধরনের বেগুনের দাম শুনেই ক্রেতাদের যেন মাথা গরম অবস্থা!
এনামুল বলেন, বেগুন সকালে ১০০ টাকা কেজি করে বিক্রি করেছেন। শেষ সময়ে ৮০ টাকা করে বিক্রি করছেন।
এ বিক্রেতা আরও বলেন, পাল্লায় বেড়েছে ৫০-৭০ টাকা। আগে ৫ কেজির পাল্লার দাম আর আজকের দাম অনেক গ্যাপ। চাইলেও কি আগের দামে দিতে পারবো?
ইসলামপুরে দোকানে চাকরি করেন শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ দামে জিনিস না কিনলে খুব ক্ষতি হবে না। ২/১ দিন পর দাম এমনিতেই কমবে। তখন কিনবো।
গত কিছুদিন ধরে ৭৪০ টাকা দরে গরুর গোশত বিক্রি করে আসা দোকানি আজ ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। কারণ জানতে চাইলে লক্ষ্মীবাজারের গোশত বিক্রেতা জয়নাল আবেদিন জানান, বেশি দামে গরু কিনেছি, গোশতের দামও বেশি নিচ্ছি। ২/৪ দিন গেলে আবার আগের দামে বেচতে পারবো আশা করি।
এদিকে আঙুর, মালটা, নাসপতি, বেল ও ছবেদা ফলও আজ অন্যদিনের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হয়েছে।
বাদামতলী থেকে ফল নিয়ে এসে মহানগর মহিলা কলেজের সামনে দোকান খুলে বসছেন শরিয়তপুরের আরিফ হোসেন। তিনি বলেন, আজকে মাল্টা ৩৫০ টাকা, আঙুর ৩৫০-৩৬০ টাকা, বেলের হালি ১৫০ টাকার নিচে বেচতে পারবো না।
এবি/এইচএন