সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫
সংগৃহিত
মতামত প্রকাশিত ২৮ জানুয়ারী ২০২৪ ১২:৩৯
সর্বশেষ আপডেট ২৮ জানুয়ারী ২০২৪ ১২:৪০

রাজধানীতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বায়ু দূষণ

ফারদিন রেদোয়ান: স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। সুষম খাদ্য এবং বিশুদ্ধ বাতাস সুস্থ জীবনের জন্য অপরিহার্য। বিশুদ্ধ নির্মল বায়ুর অভাবে প্রাণী স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ে। কিন্তু দেশের সব থেকে বেশী মানুষের বাস যেই ঢাকাতে সেখানেই আশংকাজনক হারে বাড়ছে বায়ু দূষণ। ঢাকা বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহর।

ঢাকায় কুয়াশার মতো ধুলো ভাসে। ভৌগোলিক কারণে প্রতিবছর শীতের সময় ঢাকার বায়ুদূষণ বাড়লেও এবার শীত শুরুর বেশ আগে থেকেই রাজধানীর বাতাসে দূষণের পরিমাণ বেড়ে গেছে এবং দূষণের দিক থেকে প্রায়ই প্রথম হচ্ছে। যদিও দেশে কতজন মানুষ বায়ু দূষণ-জনিত রোগে আক্রান্ত হয় তার কোনো সরকারি পরিসংখ্যান নেই। কিন্তু এই সংখ্যা দিনেদিনে ক্রমেই বেড়েই চলছে। দূষিত বায়ুর কারণে হাঁচি-কাশি, ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে হতে পারে ফুসফুসের ক্যান্সার। এ ছাড়া কিডনি ও হৃদরোগের কারণও হতে পারে বায়ুদূষণ।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সবচেয়ে বেশি বায়ু দূষণের শিকার হয়েছে ঢাকা। যদিও বর্ষাকালে উন্নতি পরিলক্ষিত হয়, তবে গ্রীষ্ম থেকে শীতকালে শহরের বায়ু দূষণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পায়। বাতাসের মান নির্ভর করে এতে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণ (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম-১০) এবং অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণের (পিএম ২.৫) ওপর। কোথায় প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ভাসমান পিএম ২.৫ এর পরিমাণ কত মাইক্রোগ্রাম, তার ভিত্তিতে বিশ্বের বিভিন্ন শহরের স্কোর তৈরি করে থাকে বায়ুমান নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলো। আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে তাকে ‘মাঝারি’ বা ‘গ্রহণযোগ্য’ মানের বায়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তাকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু ধরা হয়। ৩০১ থেকে তার ওপরের স্কোরকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ধরা হয়।

বায়ুদূষণ বেশি হলে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকেন সংবেদনশীল গোষ্ঠীর ব্যক্তিরা। তাঁদের মধ্যে আছেন বয়স্ক, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও জটিল রোগে ভোগা ব্যক্তিরা। এক সমীক্ষায় দেখা যায় দৈনিক গড় বায়ুমান সূচকে ঢাকার বাসাতে দূষণ সবচেয়ে কম থাকে দুপুর ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত, যেখানে সূচক ১৫০-এর ওপরে, যা অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত। এরপর ধীরে ধীরে আবার বাড়তে থাকে। পরবর্তী সময়ে মধ্যরাতের পর দূষণের মাত্রা সবকিছু ছাড়িয়ে যায়। বায়ুদূষণকে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে মৃত্যু এবং অক্ষমতার দিকে নিয়ে যাওয়া দ্বিতীয় বৃহত্তম ঝুঁকির কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়৷ এখানে বছরে কমপক্ষে ৮০ হাজার মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায়৷ এই দূষণের পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ।

দেখা যায় রাজধানীতে সারাবছরই ছোট-বড় অজস্র ভবন নির্মাণ এবং রাস্তা মেরামতের কাজ চলে। এর পাশাপাশি গত কয়েকবছরে যোগ হয়েছে মেট্রো-রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বিভিন্ন বড় প্রকল্প। যেকোনো ধরনের নির্মাণ কাজ করার সময় বায়ু দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তরের সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা থাকলেও বেশীরভাগ সময়ই দেখা যায় বাস্তবে সেসব নিয়ম পালনের তোয়াক্কা করা হয়না। এর পর বায়ু দূষণের জন্য অন্যতম দায়ী হলো ঢাকার আশেপাশের ইটভাটা ও শিল্প কারখানাগুলো। বাংলাদেশের বেশিরভাগ ইটভাটা এখনও চলছে প্রাচীন পদ্ধতিতে। এইসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লা, কাঠ ব্যবহার করা হয়। ফলে এটা থেকে প্রচুর ছাই তৈরি হয় এবং কার্বন মনোঅক্সাইড, সালফার অক্সাইড ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের মতো দূষিত কণা বাতাসের সাথে মিশে তা দূষিত করে ফেলে।

রাজধানীতে চলাচলকারী ফিটনেসবিহীন যানবাহন, বিশেষ করে বাস ও ট্রাকও ঢাকার বায়ু দূষণের জন্য দায়ী। এক গবেষণায় দেখা যায় যানবাহনের ফিটনেস শেষ হয়ে গেলে সেগুলো ঠিকভাবে জ¦ালানি পোড়াতে পারে না এবং তখন সেগুলোর ধোঁয়ার সাথে ক্ষতিকর রাসায়নিক নির্গত হয় যা কিনা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। আবার বেশীরভাগ সময়ই দেখা যায় এখানে সেখানে স্তূপ করা ময়লা আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলা হয়। এসব ময়লা আবর্জনায় থাকে ক্ষতিকর প্ল্যাস্টিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের কেমিকেল যা কিনা পুড়ে গিয়ে বাষ্প হয়ে ভয়ানক ভাবে বায়ু দূষণ করে থাকে। তাই এখনি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এই বায়ু দূষণ রোধে।

সর্বপ্রথমে আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে। এখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা যাবে না। আর ফেলা ময়লা আগুন দিয়ে পোড়ানো যাবেনা। এতে উপকারের থেকে ক্ষতি হয় বেশী। বর্জ্য রিসাইকেল করার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারকে বায়ুদূষণ রোধে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। অবৈধ ইটভাটা, গাড়ির কালো ধোঁয়াসহ নির্মাণ কার্যক্রম থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণ, বিশেষ করে বড় বড় নির্মাণ কার্যক্রমের দূষণের বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান পরিচালনা করতে হবে। নির্মাণ, যানবাহন, শিল্পকারখানার দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা গেলেই ঢাকার বায়ুদূষণ অনেকাংশে কমে আসবে। পাশাপাশি যানবাহনগুলোতে উন্নত জ¦ালানি ব্যবহার করতে হবে। প্রচুর বনায়ন করতে হবে, কারণ গাছ বায়ুদূষণ প্রতিরোধে জোরালো ভূমিকা রাখে। নির্মাণকাজের সময় নির্মাণ স্থান ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ঢেকে নিতে হবে। সরকারিভাবে সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। নির্মল বায়ু এবং টেকসই পরিবেশ ছাড়া প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য কোনোটিই নিরাপদ নয়। তাই বায়ু দূষণ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

বিএনপি ক্ষমতায় এলে মন্দিরে হামলারও বিচার হবে: মোশারফ হোসেন

বগুড়া জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও জাত...

কটিয়াদীতে সুপেয় পানির তীব্র সংকট, টিউবওয়েলে উঠছে না পানি

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলাতে হস্তচালিত টিউবওয়েল...

খুলনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

‘জন্ম হোক সুরক্ষিত, ভবিষ্যৎ হোক আলোকিত&rsquo...

বগুড়ায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে ছাত্র-তৌহিদী জনতার মিছিল, বাটার শো-রুম ভাংচুর

বগুড়ায় ফিলিস্তিনীদের উপর হামলার প্রতিবাদে ও ইসরাইল...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা