আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কোয়ান্টাম বিন্দুর আবিষ্কার এবং সংশ্লেষণের জন্য ২০২৩ সালে তিন গবেষক রসায়নে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হয়েছেন। বিজয়ীদের মধ্যে দুই মার্কিন ও এক রুশ বিজ্ঞানী।
বুধবার (৪ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে স্টকহোমে রসায়নে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস।
এ বছর রসায়নে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন মৌঙ্গি জি বাওয়েন্দি, লুইস ই ব্রুস এবং আলেক্সি আই. একিমভ। কোয়ান্টাম ডট আবিষ্কার এবং সংশ্লেষণের জন্য তারা এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
নোবেল কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, কোয়ান্টাম ডট আবিষ্কার ও উন্নয়নের জন্য এই সম্মানজনক পুরষ্কারে তাদের ভূষিত করা হয়েছে। কোয়ান্টাম ডটস সেমিকন্ডাক্টর ন্যানোক্রিস্টাল নামেও পরিচিত।
১৯৮০ এর দশকে আলেক্সি একিমভ রঙিন কাঁচে আকার-নির্ভর কোয়ান্টাম প্রভাব তৈরি করতে সফল হন। একিমভ দেখান, রঙটি তামা ক্লোরাইডের ন্যানো পার্টিকেল থেকে এসেছে এবং কণার আকার কোয়ান্টাম প্রভাবের মাধ্যমে কাচের রঙকে প্রভাবিত করে।
কয়েক বছর পরে লুই ব্রুস বিশ্বের প্রথম বিজ্ঞানী হিসেবে তরলে অবাধে ভাসমান কণার আকার-নির্ভর কোয়ান্টাম প্রভাব প্রমাণ করেছিলেন।
১৯৯৩ সালে মৌঙ্গি বাওয়েন্দি কোয়ান্টাম বিন্দুর রাসায়নিক উৎপাদনে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। যার ফলে প্রায় নিখুঁত কোয়ান্টাম কণা তৈরি হয়।
তিন বিজ্ঞানীর আবিষ্কৃত এবং বিকাশ করা এই কোয়ান্টাম ডট এলইডি বা কিউএলইডি প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার মনিটর এবং টেলিভিশন স্ক্রিন তৈরি করা হয়। এর ফলে এলইডি বাতির আলোতে আরও সূক্ষ্মতা যোগ হয়েছে। জৈব রসায়নবিদ এবং চিকিৎসকরা জৈব টিস্যুর ম্যাপ তৈরিতেও কোয়ান্টাম কণা ব্যবহার করেন।
মৌঙ্গি জি বাওয়েন্দি ফ্রান্সের প্যারিসে ১৯৬১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি লাভ করেন। বর্তমানে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউটের (এমআইটি) অধ্যাপক তিনি।
লুই ই. ব্রাস ১৯৪৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তিনি।
আলেক্সি আই. একিমভ ১৯৪৫ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। সেন্ট পিটার্সবার্গের আইওফ ফিজিক্যাল-টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট ১৯৭৪ সালে পিএইচডি লাভ করেন তিনি। নিউ ইয়র্ক ন্যানোক্রিস্টাল টেকনোলজি ইনকর্পোরেটেডের প্রাক্তন প্রধান বিজ্ঞানী তিনি।
এ বছর ২ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ধাপে ধাপে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হচ্ছে। গত সোমবার (২ অক্টোবর) চিকিৎসাবিজ্ঞানে, মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) পদার্থে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সাহিত্যে ও শুক্রবার (৬ অক্টোবর) শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর নাম জানা যাবে। দুদিন বিরতি দিয়ে ৯ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে অর্থনীতিতে নোবেলজয়ীর নাম।
প্রসঙ্গত, ডিনামাইট আবিষ্কারক সুইডেনের বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের ১৮৯৫ সালে করে যাওয়া একটি উইল অনুযায়ী নোবেল পুরস্কার প্রচলন করা হয়। প্রথম পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় ১৯০১ সালে। সেময় পৃথিবীর বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে সফল, অনন্যসাধারণ গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবকল্যাণমূলক কার্যক্রমের জন্য পাঁচটি বিষয়ে পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিষয়গুলো হলো পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্র, সাহিত্য ও শান্তি। যদিও অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় ১৯৬৯ সাল থেকে।
এ বছর নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য বাড়ছে। গতবারের চেয়ে এ বছরের বিজয়ীরা ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা বেশি পেতে চলেছেন।
নোবেল ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ২০২৩ সালে নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য বাড়িয়ে ১ কোটি ১০ লাখ ক্রোনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
এবি/এইচএন