ক্রীড়া প্রতিবেদক: ২০১৮ সালে বাংলাদেশের যুবাদের দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে শেষ বলে হেরে শিরোপার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছিল। এবার সেই স্টেডিয়ামেই ইতিহাস লিখল নতুন প্রজন্মের যুবারা। ২০২০ সালে যুব বিশ্বকাপের পর আরও একবার বাংলাদেশের ক্রিকেটে বড় সাফল্য এল যুবাদের হাত ধরে। এবার এশিয়া মহাদেশের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল।
দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশি সাক্ষী হলেন জুনিয়র টাইগারদের নতুন কীর্তির। বিজয় দিবসের ঠিক একদিন পর দুবাই থেকে ভেসে এলো দেশের ক্রিকেটের গৌরবমাখা অনন্য অর্জনের খবর।
এশিয়া কাপের ফাইনালে আরব আমিরাতকে বাংলাদেশ হারাল ১৯৫ রানের বড় ব্যবধানে। আসরের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক আশিকুর রহমান শিবলির সেঞ্চুরিতে ভর করে বাংলাদেশ তুলেছিল ২৮৩ রান। জবাবে আরব আমিরাত অলআউট হয়ে গেছে মাত্র ৮৭ রানে।
বাংলাদেশ গ্রুপপর্বেও আরব আমিরাতের বিপক্ষে ৬০ রানে বড় জয় পেয়েছিল। সেমিফাইনালে হারিয়েছে টুর্নামেন্টে রেকর্ড আট বারের শিরোপাজয়ী ভারতকে। আসরজুড়ে অপরাজিত থেকে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে ছিল জুনিয়র টাইগাররা। ফাইনালে সেই আমেজটা টাইগাররা ধরে রাখল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। একপেশে ফাইনালে কোনো সুযোগই তারা দেয়নি প্রতিপক্ষ আরব আমিরাতকে।
শুরুতে আশিকুর রহমান শিবলীর ১২৯ রানের ম্যারাথন এক ইনিংস ছিল। তাকে সঙ্গ দিয়েছিলেন চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ান এবং আরিফুল ইসলাম। একজনের রান ৬০, আরেকজন করেছেন ৫০। এরপর বল হাতে গতি আর সুইংয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেছেন রোহানাত দৌলা বর্ষণ-মারুফ মৃধারা। বর্ষণ নিয়েছেন তিন উইকেট। দুই উইকেট নিয়ে জয়ের মিছিলে শামিল হয়েছেন আরেক পেসার ইকবাল হোসাইন ইমন।
২৮৩ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে কোনো পর্যায়েই সুবিধা করতে পারেনি আরব আমিরাতের ছেলেরা। ইনিংসের প্রথম বলটা চার মেরে শুরু করলেও টাইগার পেসারদের সামনে অসহায় হয়েই থাকতে হয়েছে তাদের। অর্জুন শর্মাকে সাজঘরে ফেরান এই টুর্নামেন্টে তারকা হয়ে ওঠা পেসার মারুফ মৃধা। দলের রান তখন ১২। দলীয় ২৮ রানের সময় আবারও তার আঘাত। এবার ফিরলেন অক্ষত রাই।
৩৫ থেকে ৪৫, ১০ রানের ব্যবধানে আরও তিন উইকেট হারায় আরব আমিরাত। তিনবারই বাংলাদেশের নায়ক বর্ষণ। তার ইনসুইং আর আউটসুইংয়ে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে স্বাগতিকদের মিডল অর্ডার। ৪৫ রানে পঞ্চম উইকেটের পরেই বরং কিছুটা প্রতিরোধ দেখায় দলটি। ধ্রুব পরশহার এবং ইয়ায়িন রাই মিলে ১৬ রান যোগ করেন। এজন্য দুজনে খেলেছেন ৫ ওভারের বেশি।
তাদের সেই জুটি ভেঙেছেন ইমন। পরপর দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচ একেবারেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন এই পেসার। ৬১ রানে পতন ঘটে ৭ম উইকেটের। এরপর ৭১ রানে হার্দিক পাইকে ফেরান স্পিনার জীবন। আর ৭২ রানে মারুফের বলে আউট হন আইমান আহমেদ। বাংলাদেশের জয় তখন ছিল কেবল সময়ের ব্যাপার।
শেষ উইকেটের জন্য খানিক সংগ্রাম করতে হয়েছে টাইগার বোলারদের। ধ্রুব প্রতিরোধ করতে চেয়েছেন ১১তে নামা অমিদ রহমানকে সঙ্গে নিয়ে। সেখানে এসেছে আরও কিছু রান। তবে তাতে ম্যাচের গল্প বদলানো যায়নি। আরব আমিরাত আউট হয় ৮৭ রানে। বাংলাদেশ হয়ে যায় যুব এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ শুরুতে উইকেট হারালেও খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হয়নি তাদের। দলীয় ১৪ রানের মাথায় জিশানের উইকেট বাংলাদেশের জন্য পরিস্থিতি খানিক কঠিন করলেও সেখান থেকে দ্রুতই ঘুরে দাঁড়ায় জুনিয়র টাইগাররা।
চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ১২৫ রানের বড় এক পার্টনারশিপ গড়েন ফর্মের তুঙ্গে থাকা শিবলী। দুজনের এই জুটিই অনেকটা এগিয়ে দেয় বাংলাদেশকে। দুজনেই রান তুলেছেন সাবলীল ভঙ্গিতে। ফিফটির দেখা পেয়েছিলেন দুজনেই। সবকিছু যখন ছিল ঠিকঠাক, তখনই আঘাত আসে টাইগার শিবিরে। ৬০ রান করে ফিরে যান রিজওয়ান।
এরপরে ক্রিজে এসেই ঝড় তুলেছেন আরিফুল ইসলাম। শিবলীর সঙ্গে তার জুটি ছিল ৮৬ রানের। এরমাঝে ৫০ রান একাই তুলেছিলেন আরিফুল। ৩৯ বলে পেয়েছেন ফিফটির দেখা। একইসঙ্গে শতকের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেছিলেন শিবলী। টুর্নামেন্টে এটি তার দ্বিতীয় শতক।
আরিফুল অবশ্য আউট হয়েছেন ফিফটির পরের বলেই। এরপর খানিক ধুঁকেছে বাংলাদেশ। আহরার আমিন এবং মোহাম্মদ শিহাব দুজনেই আউট হয়েছেন দ্রুত। তবে শেষদিকে দ্রুতগতির এক কার্যকরী ইনিংস উপহার দিয়েছেন অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান রাব্বি। ১০ বলে ২১ রান করে দলের ইনিংসে রেখেছেন কার্যকরী ভূমিকা। তবে অবিচল ছিলেন শিবলী। নিজের ইনিংসটা টেনে নিয়েছেন ১২৯ পর্যন্ত। বাংলাদেশও তাতে পেয়েছে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পুঁজি।
এবি/এইচএন