মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে খুব ভালোভাবেই যোগাযোগ হচ্ছে জানিয়ে ক্রেমলিন বলেছে, ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেনের অধীনে যে মাত্রায় সম্পর্কের ক্ষতি হয়েছে, তাতে তাৎক্ষণিক ফল আশা করা বেশি তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।
রয়টার্স লিখেছে, শান্তি স্থাপনকারী হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকতে চান বলে দাবি করা ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তিনি ইউক্রেনে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধের রক্তস্নান শেষ করতে চান।
তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ শনিবার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে আলোচনা হয়ত ঠিকঠাক চলছে, কিন্তু এমন একটি সময় আসে, যখন আপনাকে হয় চুপ থাকতে হবে, নয়ত চুপ রাখতে হবে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার সম্পর্ক প্রসঙ্গে বলেছেন, সবকিছু খুব ভালোভাবে চলছে।
বাইডেনের অধীনে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের যে ক্ষতি হয়েছে, সে কথা তুলে ধরে পেসকভ বলেন, তবে অবশ্যই তাৎক্ষণিক কোনো ফল আশা করা ঠিক হবে না।
এদিকে শুক্রবার সেন্ট পিটার্সবুর্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের বৈঠকের পর ইউক্রেনের সুমি শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকে ইউক্রেনীয় সমঝোতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বছর পুতিনের সঙ্গে উইটকফের তৃতীয় বৈঠককে ফলপ্রসূ বলে বর্ণনা করেছেন রাশিয়ার বিশেষ দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভ।
বিবিসি লিখেছে, সুমি শহরের কেন্দ্রস্থলে রাশিয়ার হামলায় অন্তত ৩৪ জন নিহত ও ১১৭ জন আহত হয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, হতাহতদের মধ্যে ১৫ শিশুও রয়েছে।
দুটি দূরপাল্লার ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে আঘাত হানে। ক্ষেপণাস্ত্র দুটি সুমি স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং এর কংগ্রেস সেন্টারের আশপাশের এলাকায় আঘাত হানে।
ঘটনার পর প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতের আশপাশে রাস্তায় রক্তাক্ত লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এতে অন্তত দুই শিশু নিহত হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, আহতদের মধ্যে এ বছর জন্ম নেওয়া একটি মেয়ে রয়েছে। চিকিৎসকরা যতটা সম্ভব- জীবন বাঁচাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন।
সন্ধ্যায় এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, পাম সানডেতে শহরের একেবারে কেন্দ্রস্থলে এই হামলা চালানো হয়। একমাত্র সম্পূর্ণ উন্মাদ বদমাশই এমন কাজ করতে পারে। হামলার বিষয়ে মস্কো এখনো প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি।
ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ বিবিসিকে বলেছে, হামলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চারটি ভবনের পাশাপাশি ক্যাফে, দোকান ও পাঁচটি অ্যাপার্টমেন্টসহ ২০টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১০টি গাড়ি ও ট্রামও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ঘটনায় কঠোর জবাব দিতে অন্যান্য দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জেলেনস্কি বলেন, আলোচনা কখনোই দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান বোমা হামলা ঠেকায়নি। রাশিয়া ঠিক এ ধরনের সন্ত্রাস চাইছে এবং এই যুদ্ধ টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আগ্রাসীর ওপর চাপ না থাকলে শান্তি প্রতিষ্ঠা অসম্ভব।
বিবিসি লিখেছে, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কংগ্রেস কেন্দ্রটি সাধারণত শিশুদের ক্লাসের জন্য ব্যবহৃত হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, ওই স্থানটি পুরো শহরের জন্য শিক্ষামূলক কেন্দ্র এবং বিভিন্ন কোর্স, ক্লাব এবং মাস্টার ক্লাসের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়।
সুমির কর্মকর্তারা বিবিসিকে বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ক্লাস্টার যুদ্ধাস্ত্রে ভরা ছিল, যা বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে নির্বিচারে হত্যা করতে সক্ষম।
নাতালিয়া নামের এক নারী যখন তার শিশুকে নিয়ে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন, তখন দ্বিতীয় আঘাতটি তার গাড়িতে আঘাত করে। তিনি বলেন, আমরা যদি সময়মতো আশ্রয়কেন্দ্রে না যেতাম তাহলে আমরা গাড়িতেই থাকতাম এবং মারা যেতাম।
৫১ বছর বয়সী সভিতলানা স্মিরনোভা বিবিসিকে জানান, পাম সানডেতে বন্ধুদের সঙ্গে গির্জায় যাওয়ার পর তিনি হামলার মধ্যে দৌড়ে আশ্রয় নেন।
তিনি বলেন, আমার এক বন্ধু বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়েছে। ও হাসপাতালে আছে, অপারেশন করা হয়েছে, এখনও অচেতন। আহত ছেলেকে নিয়ে সে বাইক চালাচ্ছিল।
এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত কিথ কেলোগ বলেছেন, এই হামলা যে কোনো শালীনতার সীমা অতিক্রম করেছে এবং এ কারণেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে কঠোর পরিশ্রম করছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারও এই হামলাকে ভয়ঙ্কর বলে নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি শান্তির প্রতি তার প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনকে এখন অবশ্যই শর্তহীনভাবে পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে হবে- যেমনটি ইউক্রেন করেছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ বলেছেন, সুমি হামলা রাশিয়ার ওপর যুদ্ধবিরতি চাপিয়ে দেওয়ার জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। তিনি এক্স পোস্টে বলেন, সবাই জানে, এই যুদ্ধ রাশিয়া একাই শুরু করেছে। এবং আজ এটা স্পষ্ট যে, মানুষের জীবন, আন্তর্জাতিক আইন এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার প্রতি নির্লজ্জ অবজ্ঞা প্রদর্শন করে রাশিয়া একাই এ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ