মেয়েদের অনুশীলন বয়কটের বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানে যেতে চেয়েছিল বাফুফে। পিটার বাটলারের অধীনে সাবিনা খাতুন-সানজিদা আক্তাররা জিম সেশন না করায় সবাই অপেক্ষায় ছিলেন ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি তাবিথ আউয়ালের। দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরলেই কোচ ও ফুটবলারদের সঙ্গে বসে চলমান বিদ্রোহের সমাধান করবেন বলেই মনে করেছিলেন সবাই।
সভাপতি আসা পর্যন্ত মেয়েরা অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না বলেই ধরে নিয়েছিলেন ফেডারেশনের দায়িত্বে নিয়োজিতরা। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় নারী ফুটবলাররা তিন পৃষ্ঠার বিবৃতিতে ইংলিশ কোচ বাটলারের বিরুদ্ধে বডি শেমিং (শারীরিক গঠন নিয়ে লজ্জা দেওয়া), দলের অভ্যন্তরে সিনিয়র-জুনিয়র বিভাজন সৃষ্টি, গালাগাল, মানসিক নির্যাতন করার মতো যে গুরুতর অভিযোগগুলো তুলেছেন, তা অন্য কোনো পক্ষের ইন্ধন হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারা।
নারী ফুটবলের উদ্ভূত পরিস্থিতি ক্ষতিয়ে দেখতে এরই মধ্যে সিনিয়র সহসভাপতি ইমরুল হাসানকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বাফুফে। পুরো ঘটনা তদন্ত করে রিপোর্ট সাত দিনের মধ্যে জমা দেবে এই কমিটি। আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরুর আগে ইংরেজি ভাষায় লেখা একটি চিঠিকে ক্লু হিসেবে দেখছে কমিটি।
সাবিনা-মাসুরাদের লেখা তিন পৃষ্ঠার বাংলা বিবৃতিটি একটা ইংরেজি চিঠি থেকে অনুবাদ করা হয়েছে বলে শুক্রবার জানিয়েছে বাফুফের একটি বিশ্বস্ত সূত্র। তাদের ধারণা, সেই চিঠি লিখে দিয়েছেন ফেডারেশনের সাবেক টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি! তার সঙ্গে অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের নিয়মিত যোগাযোগ আছে বলে জানিয়েছে ওই সূত্র। বর্তমানে বেকার থাকা স্মলি আবারও বাংলাদেশের ফুটবলে ফেরার জন্য এই অস্থিরতা উস্কে দিচ্ছেন বলে সন্দেহ করছেন ফুটবল-সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
বাফুফের ক্যাম্পে থাকা সবাই যে আন্দোলনের পক্ষে, তা কিন্তু নয়। তাই ক্যাম্পেরই একটি অংশ ইংরেজি লেখা চিঠিটি বাফুফে কর্তাদের দিয়েছে। সেই চিঠি চলে গেছে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করা সভাপতি তাবিথের কাছে। চিঠির ভাষাগুলো অতীতে স্মলির সঙ্গে যেভাবে চালাচালি হয়েছিল, তার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে বলে দাবি ওই সূত্রের।
২০১৬ সালে বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করা পল স্মলি মূলত মেয়েদের ফুটবলের সঙ্গেই বেশি যুক্ত ছিলেন। ২০২৩ সালে পদত্যাগ করলেও ঋতুপর্ণা চাকমা-মারিয়া মান্ডাদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ সব সময়ই ছিল। যে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে, তারা এই চিঠি নিয়ে এগোবে। প্রত্যেক মেয়ের সঙ্গে আলাদা কথা বলবে।
কোচ অফিসিয়ালদের সঙ্গে বসবে। কারও ইন্ধন আছে কিনা, তদন্তের আগে এখনই এ বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছেন না ইমরুল হাসান। তিনি বলেন, ‘আমরা সবার সঙ্গে কথা বলবো। পুরো বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করব। আসলে সমস্যাটা কোথায়, জানবো। আশা করছি, সাত দিনের মধ্যে আমরা রিপোর্ট জমা দিতে পারবো। প্রয়োজনে আমরা নারী উইং কমিটির প্রধানের সঙ্গে কথা বলবো। সবার সঙ্গে কথা বললে অনেক কিছু পরিষ্কার হবে। কেন এই পর্যায় পর্যন্ত বিষয়টি গড়াল, তাও জানার চেষ্টা করবো। তবে এই দায় কার, তা এখনই বলতে পারবো না। মাত্র তো দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দেখা যাক কী হয়।’
ফেডারেশনের কর্তারা মনে করছেন, ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে চলে আসা কয়েকজন ফুটবলার ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখে আন্দোলনের নাটক সাজাচ্ছেন। তাদের মতে, ‘মূলত বয়স বেশি হওয়া, পারফরম্যান্স তলানিতে নেমে যাওয়া মেয়েদের বিকল্প খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন বাটলার। যারা বাটলারের গুডবুকে নেই, তারাই এসব করছে। কারণ জাতীয় দল থেকে বাদ পড়লে মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন পাবে না এই শঙ্কা থেকে কোচ বাটলারকে ইস্যু বানিয়েছে মেয়েরা। যে অভিযোগগুলো তারা দিয়েছে, সেগুলো বিশ্বাস করাটা কঠিন। সভাপতির দেশে ফেরা পর্যন্ত মেয়েরা অপেক্ষা করতে পারতো।’
মাত্রই বাটলারের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাফুফে। দুই বছরের চুক্তিতে টাকার অঙ্ক অনেক। আর্থিক সংকটে থাকা বাফুফে চাইছে না বড় অঙ্কের ক্ষতির সম্মুখীন হতে। আবার বাটলারকে বাদ দিলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ফুটবল পড়বে ইমেজ সংকটে। পোশাক নিয়ে কথা বলাসহ বাটলারের বিরুদ্ধে গুরুতর যে অভিযোগগুলো তুলে ধরেছেন সাবিনারা, তা বিশ্বাস করছেন না ইংলিশ কোচের সঙ্গে কাজ করা এক কোচিং স্টাফ।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্যাম্পে যেতে ভয় পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কোচিং স্টাফ। তিনি বলেন, ‘ফিটনেস লেভেল নিয়ে একজন কোচ প্রশ্ন তুলতেই পারেন। তাই বলে সেটাকে আপনি বডি শেমিং হিসেবে দেখতে পারেন না। আমার জানামতে, কোচ মেয়েদের অনেক স্বাধীনতা দিয়েছেন। আমার বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ দেয়, তাহলে পদত্যাগ করবো।’
আমারবাঙলা/জিজি