দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার চৌরগাছা গ্রামে অবস্থিত শুরা মসজিদ বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহাসিক মসজিদ।
প্রায় ৫৫০ বছর পুরোনো এই মসজিদটি মুসলিম স্থাপত্যের চমৎকার নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলা থেকে দর্শনার্থী ও মুসল্লিরা মসজিদটি দেখতে এবং নামাজ আদায় করতে আসেন। মসজিদ চত্বরের প্রধান ফটকের সামনে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সাইনবোর্ডে উল্লেখ রয়েছে, এটি ষোড়শ শতকে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহর আমলে (১৪৯৩-১৫১৮) নির্মিত। স্থানীয়ভাবে মসজিদটি শুরা মসজিদ, সৌর মসজিদ বা শাহ সুজা মসজিদ নামে পরিচিত।
যদিও মসজিদের নির্মাণ নিয়ে নানা জনশ্রুতি রয়েছে, প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা অনুযায়ী এটি সুলতানি আমলের ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন। চার ফুট উচ্চতার প্ল্যাটফর্মের ওপর চুন-সুরকি, ইট এবং কালো পাথরের সমন্বয়ে মসজিদটি নির্মিত হয়েছে। মসজিদের দেয়ালে রয়েছে খোপকাটা মৌলিক টেরাকোটা অলংকরণ। এটি দুটি অংশে বিভক্ত- পশ্চিম অংশে নামাজকক্ষ এবং পূর্ব অংশে বারান্দা। নামাজকক্ষের ওপর রয়েছে একটি বর্গাকার গম্বুজ এবং বারান্দার ওপর ছোট তিনটি গম্বুজ। মসজিদের ভেতরের কিবলা দেয়ালে তিনটি পাথরের তৈরি কারুকাজযুক্ত মিহরাব রয়েছে। বাইরের দেয়ালে রয়েছে দুই সারি ইটের প্যানেল নকশা এবং ফুলের টেরাকোটার অলংকরণ।
শুক্রবারসহ বিশেষ দিনগুলোতে দূরদূরান্ত থেকে মুসল্লিরা মসজিদে এসে নামাজ আদায় করেন। কেউ মানত করেন, কেউ দোয়া করেন। রমজান মাসে প্রতিদিন ইফতারের আয়োজন এবং অন্যান্য মাসে তবারক বিতরণ করা হয়।
মসজিদের পরিচালনা কমিটির সদস্য আশরাফুল ইসলাম জানান, মসজিদটির ব্যয় নির্বাহ স্থানীয় মুসল্লি ও বাইরের দর্শনার্থীদের দানের ওপর নির্ভর করে। ভবিষ্যতে মসজিদ প্রাঙ্গণে একটি এতিমখানা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের জন্য রান্নার ব্যবস্থাও রয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা থেকে আগত সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিরল স্থাপত্যশৈলীর এই মসজিদে নামাজ পড়ে নিজের জন্য এবং সকল মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করেছি। মসজিদের খতিব ওয়ালি উল্লাহ বিন জালালি জানান, প্রতি শুক্রবার এখানে অনেক মানুষ জমায়েত হন, যা মসজিদটির ঐতিহ্য ও গুরুত্বকে আরো বাড়িয়ে তোলে।
স্থানীয়রা আরও বলেন, শুরা মসজিদ শুধুমাত্র একটি স্থাপত্য নিদর্শন নয়, এটি ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে এলাকায় বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
আমারবাঙলা/ইউকে