মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: তিনজন হিন্দু ব্যক্তি। তাদের বংশ-পদবি আলাদা। তাদের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপায়। অথচ তাদের তিনজকেই বলা হচ্ছে এক বংশের। বানানো হয়েছে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার বাসিন্দা। এভাবে তাদের নামে সম্পদ দেখিয়ে, সে সম্পদ দলিল করে কিনে নিয়েছে একটি চক্র। বিক্রির দলিলে করা সই গুলো বলা হচ্ছে ওই তিন হিন্দু ব্যক্তির। অথচ এসব ঘটনার কিছুই জানে-না তারা। শেষ পর্যন্ত হয়েছেন মামলার শিকারও।
এমন ঘটনা ঘটেছে গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের বালুয়াকান্দি গ্রামে।
ভুক্তভোগীরা হলেন, ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার কুমিরাদাহ এলাকার কমল সরকার (৭৪), একই এলাকার সন্তোষ কুমার বিশ্বাস (৪৬) এবং উপজেলার হাটফাজিপুর এলাকার ভুট্টো দাস (৫৪)। অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির নাম হুমায়ুন কবির প্রধান। তিনি বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের ছোট রায়পাড়া এলাকার বাসিন্দা।
কাগজপত্র অনুসন্ধান করে জানা যায়, ১৯৭৩ সালে বালুয়াকান্দি মৌজার আর.এস ৭৯৩ দাগের ৭১ শতাংশ জমি ক্রয় সুত্রে মালিক হয় মো. আনিসুর রহমান নামে এক ব্যাক্তি। আনিসুর রহমান ২০০৫ সালে ওই সম্পত্তি সাফ কবলা দলিল মূলে দি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেন।
২০১৫ সালে সেই সম্পত্তি থেকে স্থানীয় হূমায়ুন কবির নামে এক ব্যক্তি ৪৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ জমি শৈলকুপা কমল সরকার, সন্তোষ কুমার বিশ্বাস এবং ভুট্টো দাস নামের তিন ব্যক্তিকে মালিক সাজিয়ে নিজের নামে দলিল করে নেন। জমি জালিয়াতি করে বিক্রি করার অভিযোগে এই তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার তদন্তভার পরেছে সিআইডির উপর। মামলার বিষয়ে সাক্ষ্যদিতে শৈলকুপা থেকে আসেন তিন দিন মজুর। এ সময় নিজেদের অসহায়ত্বের কথা বলেন তারা।
মামলার শিকার ভুট্টো দাস বলেন, আমি জীবনে কখন গজারিয়া আসিনি। এখানে আমার চৌদ্দ পুরুষ কারো সম্পত্তি নেই। তাই কারো কাছে সম্পত্তি বিক্রির কোন প্রশ্নই আসেনা। অযথা হুমায়ুন নামে ওই ব্যক্তি আমাদের নাম ব্যবহার করে আমাদের হয়রানি করছে। আমি একজন ঝাড়ুদার দিন আনি, দিন খাই। একদিন কাজে না গেলে ভাত জুটেনা। মামলার কারণে মুন্সীগঞ্জ দৌড়ে আসতে হচ্ছে। ঠিকমত কাজে যেতে পারছিনা। বাড়ির সবাই পেরেশানিতে আছি।
একইভাবে নিজেদের হয়রানি কথা বলেন সন্তোষ কুমার বিশ্বাস ও বৃদ্ধ কমল সরকার। তারা বলেন, আমাদেরকে আত্মীয় বানিয়ে অন্য মানুষের সম্পদ জাল দলিল করেছে হুমায়ুন। অথচ আমরা তিনজন কেউ কাউকে চিনি না। একটি মিথ্যা মামলার জন্য আমাদের কত দৌড়াতে হচ্ছে। আমরা হুমায়ুনের বিচার চাই।
অভিযুক্ত হুমায়ুন কবির প্রধানকে স্থানীয়ভাবে ভূমি দস্যু বলে জানান স্থানীয়রা। হুমায়ুনের বিরুদ্ধে মুন্সীগঞ্জে জালজালিয়াতির অভিযোগ ৮ টি ও মারামারির অভিযোগে আরো ৪ টি মামলা রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
অভিযোগের বিষয়ে হুমায়ুন বলেন, যে তিনজন তাকে জায়গায় লিখে দিয়েছেন তারা পূর্বে গজারিয়াতে থাকতেন। এখন শৈলকুপায় থাকেন। তারা আমাকে জায়গা লিখে দিয়েছে। কিভাবে কি করেছে এটি তারা জানেন। এর বেশি কিছু আমার জানা নেই। আমি কোন জাল-জালিয়াতি করে দলিল বানাইনি।
যখন তারা জমি লিখে দিয়েছেন আপনি ছিলেন কিনা, তাদের দেখেছেন কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, দলিল করার দিন তিনি সামনে ছিলেন না, তাই দেখা হয়নি।
বালুয়াকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মো.শহিদুজ্জামান জানান ভুট্টো দাস, সন্তোষ কুমার ও কমল সরকার তারা কখন গজারিয়ার বাসিন্দা ছিলেন না। বর্তমানেও নয়। তারা নিজেরাও বিষয়টি স্বীকার করেছেন।স্থানীয় মুরব্বিরাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আমিও তাদের দেখিনি। এর পরেও তাদের মালিক সাজিয়ে হুমায়ুনরা ভুয়া দলিল করেছে। সেখানে বিক্রেতা হিসেবে ওই তিনটি হিন্দু পরিবারের নাম ব্যবহার করে হয়রানি করাচ্ছে। হুমায়ুনদের পেছনে বড় কোন শক্তি রয়েছে। তারা গজারিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ভুয়া দলিল করে মানুষের জমিজমাতে ঝামেলা তৈরি করে রেখেছেন।
এবি/এইচএন